কলকাতা, 22 নভেম্বর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প 'কন্যাশ্রী' স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে ৷ এবার সেই প্রকল্পকে আধার করেই পর্দায় আসছে সমীর মণ্ডল প্রযোজিত, উজ্জ্বল মিত্র পরিচালিত বাংলা ছবি 'সুকন্যা'। ছবিতে এক সাধারণ নারীর বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার যাত্রাপথ দেখানো হয়েছে। মুখে না বললেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের আদলেই যে এই ছবি তৈরি হয়েছে তা বেশ স্পষ্ট।
একইসঙ্গে 'কন্যাশ্রী' প্রকল্পের দিকটিও উঠে এসেছে তাঁর। যাকে 'সুকন্যা' যোজনা হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদলে তৈরি লড়াকু নারী চরিত্রের নাম মায়া চট্টোপাধ্যায়। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইটিভি ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছবি নিয়ে নানা কথায় মুখর হলেন অভিনেত্রী।
শুটিংয়ের দৃশ্য (PR Handout) ইটিভি ভারত : চরিত্রটা পাওয়ার পর কেমন লাগল?
কনীনিকা: এর আগে 'বাঘিনী' ছবিটার জন্যও আমার কাছে অফার আসে। তখন আমি 'অন্দরমহল' সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত। তাই করতে পারিনি। এরপর যখন 'সুকন্যা'র জন্য প্রস্তাব এল তখন আর কিছু ভাবিইনি। তখন আমার কাজেরও দরকার ছিল। তার উপরে এরকম একটা চ্যালেঞ্জিং ক্যারেক্টার। আমি না করিনি। এটা তো সত্যি ওঁর মতো লড়াকু মেয়ে এই ভারতবর্ষের বুকে কমই আছে। তাই এরকম একটা চরিত্রকে না করার সাহস আমার হয়নি।
ইটিভি ভারত: যতদূর জানি, ছবিতে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখানো হয়নি?
কনীনিকা: ওঁর আদলে তৈরি একটা চরিত্র দেখানো হয়েছে। ওঁর লড়াইয়ের কাহিনি উঠে এসেছে। আমি ভবানীপুরের মেয়ে। খুব কাছ থেকে ওঁকে দেখেছি। চরিত্রটাতে অভিনয় করতে গিয়ে আরও বেশি করে আমি জেনেছি সবটা। একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মাঝে আগুনের মতো জ্বলে উঠে একটা দলকে দাঁড় করানো কম বড় কথা নয়। সত্যিই তো সমাজে আজও মেয়েরা অবহেলিত। সেখানে একজন মেয়ের এহেন লড়াই। আরও পাঁচজন মেয়েকে লড়াইয়ের প্রেরণা জোগায়। এই ছবিটা তাই সব লড়াকু মেয়েদের জন্য। সব অগ্নিকন্যাদের জন্য।
নীল পাড় সাদা শাড়িতে একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিরূপ কনীনিকা (PR Handout) ইটিভি ভারত: আপনার কি মনে হয় না এর পরে অনেকেই মনে করবেন আপনি শাসক দল ঘেঁষা?
কনীনিকা : শুধু তাই নয়, আমাকে গালিও দেবেন অনেকে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার গায়ে কোনও দলীয় রঙ নেই।
আমি একটা চরিত্র করেছি মাত্র। কেউ আমাকে কোনও ভালো চরিত্রে তো ভাবেই না এখানে ৷ আমি সমীর এবং উজ্জ্বলের কাছে কৃতজ্ঞ যে ওঁরা ভেবেছেন আমাকে দিয়ে এরকম একটা চরিত্র করানো যায়। আমাকে বাঁচতে হবে ভাই। তার জন্য টাকা চাই। কে দেখবে আমাকে? আমি কাজটাকে সম্মান জানিয়েছি। ইটিভি ভারত: আরজি কর কাণ্ডে আপনিও প্রতিবাদের মুখ ছিলেন...
কনীনিকা: ছিলামই তো। আজও আছি। আজ কতদিন হয়ে গেল বিচার কই? যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা সেই রাজ্যে আজও কেন বিচার পেল না মেয়েটা? যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আমরা লড়াই করতে শিখেছি সেই লড়াই হারিয়ে গেল? মানুষ কনীনিকা প্রতিবাদ করেছে আর অভিনেত্রী কনীনিকা অভিনয়টা করেছে। দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। একজন মেয়ের লড়াইয়ে যেমন পাশে থাকব, তেমনি যে মেয়েটা বিচার পায়নি তারও পাশে দাঁড়াব।এটাই মানুষ কনীনিকা। আর ভালো চরিত্র, তা সে যারই হোক সেটা এলে করব। সে হল অভিনেত্রী কনীনিকা।
'সুকন্যা' ছবির শুটিংয়ের মাঝে (PR Handout)
ইটিভি ভারত: শুটিং কোথায় হল?
কনীনিকা: দীঘা, নদীয়ার ভিতরে। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম নিয়ে অনেক কথা জানলাম মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কাছ থেকে। তখন আরও চিনলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
ইটিভি ভারত: রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ ডা. শান্তনু সেনও আছেন ছবিতে।
কনীনিকা: হ্যাঁ। আলাপ হল। ভালো অভিনয় করেন। জিজ্ঞেস করেছিলাম অভিনয় করেন কি না। বললেন কলেজ লাইফে করেছেন।
ইটিভি ভারত: অনেকে বলছেন প্রতিবাদের গর্জন কমতেই ছবি রিলিজের সিদ্ধান্ত। আপনি কী বলেন?
কনীনিকা: এখন ছবিটা রিলিজ করবে না তো আর কবে করবে? অনেকদিন থেকেই পড়ে আছে ছবিটা। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি আগামীদিনে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ জানে না। আগের সেই চিত্র আজ পুরো পালটে গেছে। আরজি কর প্রসঙ্গে তো আমি যাচ্ছিই না। আরও কত কী আছে। সেই সব দিক তুলে ধরতে হলে এই সিনেমার পার্ট টু আসা দরকার। কিন্তু তার আগে এই সিনেমাটার জন্য যাঁরা টাকা ঢেলেছেন তাঁদের তো টাকাটা ফেরত পেতে হবে। আমি চাই প্রযোজকের ঘরে টাকাটা ফেরত আসুক।
ইটিভি ভারত: এই পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা?
কনীনিকা: কম বাজেটের ছবি। ডিরেক্টর 'ঘাটা' হলে খুব সমস্যা হয়। কিন্তু উজ্জ্বল খুব ভালো ডিরেক্টর। ওঁর কী চাই সেই ব্যাপারে খুব নিশ্চিত ছিলেন উজ্জ্বল। যেটুকু দরকার সেটুকুই নিয়েছেন। ফলে, দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।