কলকাতা, 21 জানুয়ারি: প্রতি বছরের মতো এই বছরেও বেহালার যদু কলোনিতে দক্ষিণ পল্লী নবারুণ সংঘের উদ্যোগে বসেছে 'শীতের আমেজ' মেলা। নিছকই মেলা নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক মেলা। 7 দিন ধরে চলবে নানা রঙের অনুষ্ঠান। 20 জানুয়ারি থেকে 26 জানুয়ারি চলবে নানা রঙের অনুষ্ঠান। এই মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক টলিউডের প্রখ্যাত পরিচালক তথা প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠান পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য সিদ্ধার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন 'শীতের আমেজ' মেলা 11 বছরে পা দিয়েছে ৷ 2012 সালে পথ চলা শুরু হয়েছিল ৷ করোনার সময় বন্ধ থাকলেও পরে আবার তা নতুন করে শুরু করা হয় ৷ এবারের অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয়েছে ভারতের আধুনিক চিত্রকলার পিতৃপ্রতীম বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়কে।
মাত্র সাত বছর বয়সে বেহালা থেকে তিনি চলে যান শান্তিনিকেতনে ৷ কলাভবনের নন্দলাল বসু তাঁকে নিয়ে যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। বাঁ চোখে কম দেখতেন বিনোদ বিহারী। জানা যায়, ঠাকুর নাকি বলেছিলেন, "ওকে নিজের মতো আঁকতে দাও, ফেলে দিও না"। যদু কলোনিতে আয়োজিত 'শীতের আমেজে' মেলাতে তাই রকমারি দোকানের মাঝে সুসজ্জিত বিনোদ বিহারীর ছবির পর ছবি।
বিনোদ বিহারীকে সত্যজিৎ রায়ের গুরু বলা হয়ে থাকে। সত্যজিৎ যখন বিনোদ বিহারীর উপর 'দ্য ইনার আই' নামের তথ্যচিত্র করেন তখন তিনি দৃষ্টিহীন। অথচ ততদিনে সত্যজিতের আঁকার মাস্টার নিজেই আধুনিক চিত্রকলার একজন 'ম্যায়েস্ট্রো'। একটা প্রবাদ মিশে যাচ্ছে আর একটা প্রবাদে। সত্যজিতের আঁকা-ঝোকা, বই , গল্প, উপন্যাস অলঙ্করণ, বিজ্ঞাপণ, সিনেমার স্টোরি বোর্ড সবেতেই তার আঁকা শেখায় মাস্টারের ছায়া। সেই গল্পই 20 জানুয়ারি মেলা উদ্বোধনের সন্ধ্যায় উঠে এল, উজ্জ্বল চক্রবর্তীর কাছ থেকে।
বিনোদ বিহারী তাঁর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এঁকেছিলেন সনাতন সব চরিত্র, আটপৌরে জীবন, শান্তিনিকেতনের তালসারি। তাঁর হাতে সৃষ্টি হয় ভারতীয় চিত্রকলার ইতিহাসে ল্যান্ডস্কেপের নতুন ভাষা। রঙিন কাগজ কেটে-জুড়ে সৃষ্টি করতেন নতুন নতুন ছবি। 'দেশিকোত্তম', 'পদ্মবিভূষণ'-এর সুনাম পেরিয়েও তিনি আদতে শিল্পী। পঞ্চাশ পার হতে না হতেই হলেন সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন। কিন্তু তাঁর সৃষ্টি আজও জীবন্ত দলিলসম।