আসানসোল, 23 ডিসেম্বর: জ্ঞান হওয়ার সময় থেকেই অভিনেতা দেবের 'পাগল' ভক্ত আসানসোলের রাইমা পাল। বহুবার আসানসোলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দেব এলেও খুব কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেননি রাইমা। ইচ্ছে ছিল একবার দেবকে দেখার। কাছের মানুষ এবং শুভানুধ্যায়ীরা রাইমার এই দেবের প্রতি পাগলামির কথা জানতেন।
তাদের সহায়তাতেই দেবের সঙ্গে সাক্ষাতের একটা সুযোগ হয়ে গেল বটে রাইমার। কিন্তু দেখা করতে গিয়েই এ যেন একেবারেই লটারি পাওয়া। অভিনেতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে 'খাদান' সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে গেলেন আসানসোলের যুবতী রাইমা পাল। স্ক্রিনে দেবের সঙ্গে নিজেকে দেখে এখন যেন সেটাই স্বপ্নের মত লাগছে রাইমার।
দেবের 'পাগল' ফ্যান আসানসোলের রাইমা (ইটিভি ভারত) রাইমা বলেন "এটা আমার কাছে একটা স্বপ্নের মত। চার-পাঁচ বয়স থেকে দেবের ফ্যান ৷ পেপার কেটে ছবি কেটে রাখা ৷ দেবের জন্য ডাইরি লিখতাম ৷ দেবদাকে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল ছোটবেলায় ৷ পরিচিত জয়দীপ দার মারফত 2024 সালের মার্চ মাসের 15 তারিখ দেবদার সঙ্গে দেখা করি ৷ যীশু সেনগুপ্তর সঙ্গে কথা হয় ৷ তখনও জানতাম না খাদান সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পাব ৷"
আসানসোলের বার্নপুর শিল্প শহরের রামবাঁধ এলাকার বাসিন্দা রাইমা পাল। আসানসোল গার্লস কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট থেকেই অন্ধ ভক্ত দেবের। যখন থেকেই জ্ঞান হয়েছে তখন থেকেই পেপার কাটিং করে দেবের নানান ছবির সংগ্রহে রাখাই ছিল তাঁর কাজ। শুধু তাই নয় দেবের জন্মদিনে পুজো দেওয়া, দেবের জন্য প্রতিদিন ঈশ্বরের কাছে মানত করা, দেবেন নতুন সিনেমা এলে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করা যেন ছবি হিট হয়। এমনকী, দেবের জন্য প্রতিদিন ডাইরিতে চিঠি লেখা। প্রথম প্রথম সেটা ছিল কিশোরী বয়সের প্রেম। ছোটবেলায় মনে করতেন দেবকেই যেন বিয়ে করবেন। পরবর্তীকালে বয়স যখন বেড়েছে ম্যাচুরিটি এসেছে তখন বুঝেছে বিয়ের ভাবনাটা ভুল। আসলে তিনি অভিনেতা দেবের অন্ধ ভক্ত হয়ে থাকতে চান।
'খাদান' সিনেমার শুটিংয়ের জন্য দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এসেছিলেন দেব। আর তখনই চেষ্টা করেছিলেন রাইমা যদি দেবের সঙ্গে একবার দেখা করা যায়। অন্ডাল এলাকার বাসিন্দা বুলেট মণ্ডল ছিলেন খাদান সিনেমার প্রোডাকশনের সহযোগিতায়। তাঁর সঙ্গে দেবের সুসম্পর্ক বহুদিনের। আর রাইমার পরিচিত আসানসোলের সিটি কেবিলের ব্যবসায়ী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বুলেটের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন রাইমার।
সেই সূত্রেই দেবের কাছাকাছি পৌঁছতে পারেন রাইমা। প্রথমবার গিয়ে সাক্ষাৎ হয়, অটোগ্রাফ নেওয়া হয়। ছবি তোলা হয়। কিন্তু ফিরে আসার পর বুলেট মণ্ডল রাইমাকে ফোন করে জানান যে এই সিনেমার জন্য একটি ছোট চরিত্রে বছর কুড়ি বয়সের একটি মেয়ে লাগবে। সে কি রাজি অভিনয় করতে। প্রায় চাঁদ হাতে পায় রাইমা। অবশেষে সেই শুটিংয়ের দিন ধার্য হয় এবং শুটিংয়ে যান রাইমা।
রাইমা বলেন, "সেপ্টেম্বর মাসে আমার কাছে ফোন আসে সিনেমায় কাজের জন্য ৷ শুনেই আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছিল ৷ এরপর গেলাম শুটিং সেটে ৷ কীভাবে ক্যামেরায় সামনে দাঁড়াতে হয়, অভিনয় করতে হয় সেটাও দেবদা আমাকে শিখিয়েছেন ৷" সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রাইমা। জীবনে সিনেমার অভিনয় তো দূরের কথা, থিয়েটারেও কখনA অভিনয় করেননি। দেড়ঘণ্টার শুটিংয়ে দেবের সঙ্গেই ছিলেন রাইমা। তার কাছে এখনও যেন পুরো বিষয়টা স্বপ্নের জগৎ লাগছে ।
প্রসঙ্গত, অনস্ক্রিনে দেবকে একটি হাতে কাপড়ের ব্যান্ড বেঁধে দেন রাইমা, পরে শুটিংয়ের পরে দেব ভালবেসে সেই ব্যান্ডটি রাইমার হাতে পুনরায় বেঁধে দেন। রাইমা গত তিন মাস ধরে সেই ব্যান্ডটি হাত থেকে খোলেননি এবং যতদিন পর্যন্ত সেটা ছিঁড়ে না যাচ্ছে সেটা তার হাতেই থাকবে বলে জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় এই সিনেমায় অভিনয় করার জন্য এক হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন রাইমা ৷ সেই টাকাও ল্যামিনেশন করিয়ে রেখেছে আজীবনের সম্পদ হিসেবে।