পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / entertainment

অঞ্জন দত্তর ফিল্ম-কেরিয়ারের মূল্যবান দলিল হয়ে রইল 'চালচিত্র এখন' - Chalchitra Ekhon Movie Review - CHALCHITRA EKHON MOVIE REVIEW

Chalchitra Ekhon Movie Tribute to Mrinal Sen: মৃণাল সেনের ভূমিকায় অভিনেতা অঞ্জন দত্ত ৷ 'চালচিত্র এখন' মুক্তির পর দর্শকদের কাছে আরও একবার অন্য রূপে ধরা দিলেন পরিচালক মৃণাল সেন ৷ কেমন হল 'চালচিত্র এখন', দেখে জানালেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি৷

Tribute to Mrinal Sen
'চালচিত্র এখন' সিনেমা রিভিউ (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 15, 2024, 5:39 PM IST

Updated : May 15, 2024, 5:44 PM IST

কলকাতা, 15 মে: পরিচালক মৃণাল সেনের 101তম জন্মশতবার্ষিকীতে শিষ্য অঞ্জন দত্তের 'গুরুদক্ষিণা' ৷ মুক্তি পেয়েছে 'চালচিত্র এখন', যা দেখে মুগ্ধ টলিপাড়ার তারকারাও ৷ সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, " চালচিত্র এখন দেখে রাত 2টোর সময় অঞ্জন দা'কে ফোন করেছিলাম। টেক্সট করেছিলাম ৷ জেগে ছিলেন না হয়তো। জেগে থাকলে ফোনটা ধরতেন। আমি তা হলে তখনই বেনিয়া পুকুরের বাড়িতে গিয়ে অঞ্জন দা'কে জাপটে ধরে থাকতাম দু'মিনিট।" অঞ্জন দত্ত পরিচালিত 'চালচিত্র এখন' দেখার পর উচ্ছ্বাস 'পদাতিক'-এর পরিচালকের ।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কথা ফেলে দেওয়া যায় না। ছবি বানিয়েছেন বটে অঞ্জন দত্ত। পিতৃসম মৃণাল সেন ছিলেন তাঁর বন্ধু। সাক্ষাৎকারে অঞ্জন দত্ত একাধিক সময়ে জানিয়েছেন মৃণাল সেন না থাকলে তাঁর সিনেমাজগতে আসাই হতো না। এহেন মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এই ছবি বানিয়েছেন অঞ্জন দত্ত। মৃণাল সেন বা ছবিতে কুণাল সেনের ভূমিকায় নিজেই অভিনয় করেছেন অঞ্জন। তাক লাগিয়েছেন দর্শকদের। লুকের দিক থেকে অত পারফেক্ট হওয়ার চেষ্টাও করেননি তিনি। বাজিমাত করেছেন অভিনয়ে, সংলাপে, অভিব্যক্তিতে, চঞ্চলতায়। সিনেমা দেখতে দেখতে একটা কথাই মনে হচ্ছিল, পুনর্জন্ম হল নাকি মৃণাল সেনের!

এই চরিত্রে নিজেকেই রাখতে চেয়েছিলেন মৃণাল শিষ্য অঞ্জন। কারণ, মৃণাল সেন যেমন ছিলেন, তেমনটা অন্য অভিনেতাকে বুঝিয়ে করানো বেশ কঠিন ছিল। তিনি কখনও রেগে যাচ্ছেন, কখনও রসিকতা করছেন আবার কখনও মারাত্মক সিরিয়াস! এহেন মৃণাল সেনকে প্রতিদিন খুব কাছ থেকে দেখেছেন অঞ্জন দত্ত । তাই অন্য কাউকে দিয়ে সেটা করানোর ঝুঁকি নেননি তিনি। কতটা শ্রদ্ধা আর ভক্তি থাকলে কারও প্রত্যেকটা চলন-বলন রপ্ত করা যায়, তা এই ছবিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন অঞ্জন দত্ত। বছর ছাব্বিশের তরুণ আর আটান্ন বছর বয়সি এক মাঝবয়সির এমন বন্ধুত্ব বিরল!

ছবির শুরুতে টাইটেল কার্ডেই পরিচালক অঞ্জন জানিয়ে দিয়েছেন 'চালচিত্র এখন' হচ্ছে "আ টাইমলেস টেল অফ মৃণাল সেন অ্যান্ড অঞ্জন দত্ত!" আর হলও তাই। মৃণাল সেনের রাজনৈতিক দর্শন, তাঁর পারিবারিক জীবনযাপন কীভাবে অঞ্জনের (সিনেমায় রঞ্জনের) জার্মানিতে 'পালিয়ে' যাবার স্বপ্ন ভেঙে দেয়, তা রয়েছে এই ছবিতে। এই দৃশ্যে রঞ্জন যেমন কেঁদেছে, তেমনি কেঁদেছে দর্শক। মৃণাল বা ছবির কুণাল সেনের বুকে মুখ গুঁজে কান্নায় ভাসে রঞ্জন। গুরু শিষ্যকে বলে ওঠেন, "কাঁদো, ভালো করে কেঁদে নাও!" মৃণাল সেনের সঙ্গে অঞ্জন দত্তর সম্পর্ক ঠিক কী, তা জানতে যাঁরা আগ্রহী তাঁদের জন্য এই ছবি একটি দলিল হয়ে থাকবে।

মৃণাল সেনের বানানো ছবির সঙ্গে এই ছবির কী ভীষণ মিল! ছবিতে মৃণাল সেনের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলির নামও পালটে গিয়েছে। ক্যামেরা পার্সন মহাজন এখানে মাধবন (সুপ্রভাত), গীতা এখানে মিতা (বিদীপ্তা), মুকুল এখানে বিপুল (শুভাশিস), উৎপল এখানে উজ্জ্বল (শেখর)। প্রত্যেকেই নিজের জায়গায় নিখুঁত। অঞ্জন ওরফে রঞ্জন দত্ত হয়ে উঠতে শাওন চক্রবর্তীর পরিশ্রম যে কম ছিল না, তা-ও স্পষ্ট এখানে। অঞ্জন পুত্র নীলের কথায় দু'জনের মধ্যে চারিত্রিক সাদৃশ্য থাকলেও নিজেকে গড়তে হয়েছে শাওনকে। তবে, শাওনের অভিনয় দেখে বোঝা যায়, অঞ্জন দত্তকে নকল করার চেষ্টা তিনিও করেননি। তবে, অনুসরণ করেছেন ষোলোআনা।

অঞ্জন দত্তর ছবিতে গান বরাবরই বিশেষ গুরুত্ব পায়। ব্যতিক্রম হয়নি এখানেও। কোথাও গিয়ে মৃণাল সেনের মনের কথাই উঠে এসেছে গানের মধ্যে দিয়ে। যেমন, "পকেট গড়ের মাঠ, তবু স্বপ্ন দেখা যায় আকাশ কুসুম নীল আকাশের নীচে..." বা "ভাঙাচোরা গলি, পিচ গলা রাস্তায় / ভাঙাচোরা মন এখনও স্বপ্ন দেখতে পায়..."। সব কিছুই মৃণাল সেনকে আরও ভালো করে চেনায়। বলা বাহুল্য, অঞ্জন দত্তর ফিল্মি কেরিয়ারের মূল্যবান দলিল হয়ে থাকবে 'চালচিত্র এখন'।

আরও পড়ুন

1. মৃণালদা কোনও সংলাপ দিতেন না, শুধু অভিব্যক্তি বুঝিয়ে দিতেন: রঞ্জিত মল্লিক

2.মৃণাল সেনের স্ত্রীর চরিত্রটা পেয়ে একবারও পারিশ্রমিকের কথা ভাবিনি: বিদীপ্তা

3.প্রথম ছবিতেই অভিনয়ে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন মৃণালদা: অনসূয়া মজুমদার

Last Updated : May 15, 2024, 5:44 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details