নয়াদিল্লি, 7 মে:এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ছয়টি দেশে পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত ৷ এর ফলে দেশের দুটি নিকটবর্তী প্রতিবেশীর মধ্যে পরস্পরবিরোধী প্রভাব দেখা দিয়েছে । বাংলাদেশের রান্নাঘরে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে ৷ প্রয়োজনীয় রান্নার উপকরণ পেঁয়াজের দাম কমেছে সেখানে ৷ তবে অন্যদিকে রিপোর্ট বলছে, রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় নেপালে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হতে চলেছে ।
27 এপ্রিল ভারত সরকার বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ভুটান, বাহরাইন, মরিশাস এবং শ্রীলঙ্কায় 99 হাজার 150 মেট্রিক টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে । এরপরে 4 মে ঘোষণা করা হয়েছে যে শুক্রবার থেকে পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত ৷ এর পিছনের কারণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, 2024 সালে ভালো খরিফ ফসলের উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরো উভয় পর্যায়ে স্থিতিশীল বাজারের অবস্থা এবং অনুকূল বর্ষার পূর্বাভাসকে ৷
ভোক্তা বিষয়ক বিভাগের সচিব নিধি খারে দিল্লিতে একটি সংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, "আজ থেকে পেঁয়াজ রফতানির উপর সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হল ৷ মূলত রবি শস্যের ভালো উৎপাদন এবং খরিফ শস্যের ভালো উৎপাদনের সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।" সরকারি অনুমান অনুসারে, রবিশস্য পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় 191 লক্ষ টন ৷ ভারতে 17 লক্ষ টন মাসে পেঁয়াজ লাগে ৷
ভারতে কেন পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হয়?
চিনের পরে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ ৷ বিশ্বব্যাপী পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রায় 20 শতাংশ ভারতে হয় । অনুকূল জলবায়ু, বিস্তীর্ণ কৃষি জমি এবং সুপ্রতিষ্ঠিত সেচ ব্যবস্থা দেশকে পেঁয়াজ চাষের জন্য একটি আদর্শ স্থানে পরিণত করেছে । ভারতে বৈচিত্র্যময় কৃষি-জলবায়ু রয়েছে, যা সারা বছর বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী । প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গুজরাত, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান ৷ এই রাজ্যগুলিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি এবং তাপমাত্রা রয়েছে ।
ব্যাপক উৎপাদন হওয়ায় ভারতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পরেও রফতানির জন্য উপলব্ধ থাকে পেঁয়াজ । প্রচুর সরবরাহ এবং তুলনামূলকভাবে কম উৎপাদন খরচ ভারতীয় পেঁয়াজকে অনেক দেশের জন্য সাশ্রয়ী করে তোলে ৷ বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের পেঁয়াজের যথেচ্ছ চাহিদা রয়েছে । ভারত বিশ্বের অন্যতম পেঁয়াজ রফতানিকারক দেশ । এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলিতে পেঁয়াজ রফতানি করে । ভারত পেঁয়াজ রফতানির মসৃণ প্রবাহকে সহজতর করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিও করেছে ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাসের ধরণ পরিবর্তন এবং পেঁয়াজের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল খাবারের জনপ্রিয়তার কারণে বিশ্বব্যাপী পেঁয়াজের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারত সক্ষম ৷ যার ফলে পেঁয়াজ রফতানির ক্ষেত্রে অনেক দেশ ভারতের উপর নির্ভরযোগ্য । ভারত কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা এবং দক্ষ পরিবহণ ব্যবস্থার একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজ সংরক্ষণ ও সময়মত বিতরণ করে ।
ভারত কেন সাময়িকভাবে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করল?
আগের বছরের তুলনায় 2023-24 সালে খরিফ ও রবি ফসলে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়ায় পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ভারত । পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা সরকারকে 2024 সালের রবি শস্যের আগে পর্যন্ত দাম স্থিতিশীল বজায় রাখতে সহায়তা করেছিল ।
অঞ্চল এবং জলবায়ুর উপর নির্ভর করে ভারতে খরিফ এবং রবি উভয় ফসল হিসাবে পেঁয়াজ চাষ করা হয় । খরিফ পেঁয়াজ ফসল বর্ষার মরশুমে (জুন-জুলাইয়ের কাছাকাছি) বপন করা হয় এবং শরৎকালে (অক্টোবর-নভেম্বরের কাছাকাছি) কাটা হয় । পেঁয়াজ গাছের জীবনকাল সাধারণত কম থাকে এবং সাধারণত ফসল কাটার পরেই সেবন বা প্রক্রিয়াজাত করা হয় । রবি পেঁয়াজের ফসল শীতকালে (অক্টোবর-নভেম্বরের কাছাকাছি) বপন করা হয় এবং বসন্তে (মার্চ-এপ্রিলের কাছাকাছি) কাটা হয় । রবি পেঁয়াজ সাধারণত স্টোরেজের জন্য রাখা হয় ৷ কারণ খরিফ পেঁয়াজের তুলনায় এগুলোর শেলফ লাইফ বেশি ।
ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদন হল খরিফ এবং রবি উভয় ঋতুতে হয় ৷ কিছু অঞ্চল জলবায়ু, মাটির অবস্থা এবং বাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে এক প্রকারের উপর বেশি ফোকাস করে । যদিও পেঁয়াজ প্রকৃতপক্ষে একটি খরিফ ফসল ৷ তবে সেগুলি শুধুমাত্র এই ঋতুতে জন্মায় না এবং কখন রোপণ করা হয় তার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ফলাফল-সহ সারা বছর চাষ করা যেতে পারে ।