নয়াদিল্লি, 15 ফেব্রুয়ারি: কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ বৃহস্পতিবার এই নিয়ে রায় দিতে গিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে যে এই নির্বাচনী বন্ড সংবিধানের অধীনে তথ্যের অধিকার এবং বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে ।
কেন্দ্রের এই বন্ডের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয় ৷ সেই মামলার শুনানি হয় ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে ৷ বৃহস্পতিবার মামলার দু’টি পৃথক, কিন্তু সর্বসম্মত রায় দিয়েছে ওই বেঞ্চ ৷
2018 সালের 2 জানুয়ারি এই নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পটি শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, এই বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি অনুদান নিলে, তাদের রাজনৈতিক তহবিলে স্বচ্ছতা বাড়বে ৷ এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের অধীনে ভারতের যেকোনও নাগরিক বা দেশে নিযুক্ত বা প্রতিষ্ঠিত কোনও সংস্থা নির্বাচনী বন্ড কিনতে পারে ৷ কোনও ব্যক্তি একা বা অন্য কারও সঙ্গে যৌথভাবেও কিনতে পারে এই নির্বাচনী বন্ড ৷
একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই নিয়ে রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ঠিক কী কী বলেছে -
- রায়দানের সময় দেশের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন যে এই প্রকল্পটি সংবিধানের 19(1)(এ) অনুচ্ছেদের অধীনে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে ৷ কারণ, এই অনুচ্ছেদের অধীনে গোপনীয়তার মৌলিক অধিকারের মধ্যে নাগরিকদের রাজনৈতিক গোপনীয়তা ও অংশগ্রহণের অধিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।
- সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে যে ব্যাংকগুলি নির্বাচনী বন্ড ইস্যু করত, তারা তা অবিলম্বে বন্ধ করবে ৷ স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদানের বিস্তারিত তথ্য ও যে রাজনৈতিক দলগুলি অনুদান পেয়েছে, তার বিবরণ সরবরাহ করবে ।
- কোনও ব্যক্তির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যা প্রভাব, তার থেকে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে কোনও সংস্থার অংশগ্রহণ ৷ সেটা সবসময়ই ব্যবসায়িক কারণে হয় ৷ কোম্পানি আইনের 182 নম্বর ধারার সংশোধন করে কোনও কোম্পানি ও ব্যক্তিকে একই স্তরে রাখা স্বেচ্ছাচারিতার সমান ৷ তাই সুপ্রিম কোর্ট কোম্পানি আইনের এই সংশোধনীকে অসাংবিধানিক বলেছে ৷
- এই সংশোধনী নাগরিকদের তথ্যের অধিকার লঙ্ঘন করে ৷ সেই কারণেই আদালত নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে ।
- নির্বাচনী প্রকল্পের 7(4)(1) ধারায় গৃহীত ব্যবস্থা আসলে সর্বনিম্ন সীমাবদ্ধ পরিমাপ, তা যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্য়া দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার ।
- সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে যে আয়কর আইনের বিধানের সংশোধনী এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা 29সি-কে নিয়মবিরুদ্ধ বলে ঘোষণা করা উচিত ।
- রাজনৈতিক দলগুলিতে আর্থিক অনুদান দু’টি পক্ষের জন্য তৈরি করা হয় - রাজনৈতিক দলগুলিকে সমর্থন করার জন্য বা অনুদান প্রতারণার একটি উপায় হতে পারে ।
- কালো টাকা দমনের উদ্দেশ্যে তথ্যের অধিকার লঙ্ঘন ন্যায্য নয় । রাজনৈতিক দলগুলিকে আর্থিক সহায়তার ফলে ক্ষতিকারক ব্যবস্থা তৈরি হতে পারে এবং নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প কালো টাকা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র পরিকল্পনা নয় ৷ এর অন্যান্য বিকল্পও রয়েছে ।
- নির্বাচনী বন্ডের দাতার নাম প্রকাশ না করার বিষয়টি তথ্যের অধিকার ও অনুচ্ছেদ 19(1)(এ) লঙ্ঘন ।
- সর্বোচ্চ আদালত ব্যাংকগুলিকে অবিলম্বে নির্বাচনী বন্ড ইস্যু করা বন্ধ করতে বলেছে ৷ এসবিআইকে 6 মার্চের মধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত হওয়া অনুদানের সমস্ত বিবরণ নির্বাচন কমিশনকে সরবরাহ করতে বলেছে ৷ কমিশন 13 মার্চের মধ্যে তার ওয়েবসাইটে তথ্য আপলোড করবে ৷
আরও পড়ুন:
- লোকসভা ভোটের আগে বড় ধাক্কা, নির্বাচনী বন্ড অসাংবিধানিক; রায় সুপ্রিম কোর্টের
- 'নির্বাচনী বন্ড আসলে বৈধ ঘুষ', বিজেপি সরকারকে তোপ চিদম্বরমের
- নির্বাচনী বন্ড : ‘অসৎ’ উদ্দেশ্যে তৈরি একটি ‘সৎ’ প্রকল্প