নয়াদিল্লি, 23 জানুয়ারি: অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে চলেছে ট্রাম্প সরকার ৷ অবৈধ অভিবাসন নিয়ে আমেরিকার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে মোদি সরকার ৷ নতুন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে অবৈধ অভিবাসনের বিষয়টি তুলে ধরে ৷ এই বিষয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, "নয়াদিল্লি আমেরিকা-সহ অন্য যেকোনও দেশে অবৈধভাবে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফেরাতে রাজি রয়েছে ৷ যদি তারা সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিক হয় তবেই ৷"
ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্ট অনুসারে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার মসনদে বসার পরই সেদেশের সরকার অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ এই পদক্ষেপের অংশ হিসাবে আমেরিকায় অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় 18 হাজার ভারতীয়কে চিহ্নিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন ৷ যাঁদের কাছে সেদেশে থাকার বৈধ নথিপত্র নেই ৷ তাই ওইসব অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
ওই রিপোর্ট অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী এই 18 হাজার ভারতীয়দের মধ্যে বেশিরভাগই পঞ্জাব এবং গুজরাতের বাসিন্দা । সংখ্যাটি অনেক বেশি হতে পারে ৷ কারণ ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির 2023 সালের রিপোর্ট অনুসারে, 2022 সাল পর্যন্ত 2.2 লক্ষ ভারতীয় অভিবাসী অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাস করছে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনী প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অবৈধ অভিবাসনকে হাতিয়ার করেছিলেন ৷ তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তাঁর সরকার অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়া হবে ৷ সেই মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্পের প্রশাসন অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কড়া নীতি নিয়েছে এবং অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে ৷
আমেরিকার এই পদক্ষেপে সায় দিয়েছে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ৷ তিনি ভারতের প্রতিনিধি হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন ৷ তারপর বৈঠক করেন মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও'র সঙ্গে ৷ জয়শঙ্কর জানান, অবৈধ অভিবাসন নিয়ে নয়াদিল্লির অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ ও নীতিগত ছিল এবং তিনি মার্কিন বিদেশ সচিব স্পষ্টভাবে এ বিষয়ে জানিয়েছেন ৷
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বুধবার ওয়াশিংটনে একটি সংবাদিক বৈঠকে মন্তব্য করেছেন, "আমরা সর্বদা এই দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছি যে, আমাদের নাগরিকরা যদি অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাস করে এবং আমরা যদি নিশ্চিত হই যে তারা আমাদের নাগরিক, তাহলে আমরা সবসময় তাদের দেশে ফেরাতে চাইব । তাই এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি অনন্য অবস্থান নয় ৷"
তাঁর সংযোজন, "আমি এখনই বুঝতে পারছি অবৈধ অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক চলছে ৷ এই বিষয়টি সংবেদনশীল ৷ তবে আমরা সবসময় এ বিষয়ে কড়া নীতি মেনে চলেছি ৷ আমাদের অবস্থান স্পষ্ট ৷ আমি এটি মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও'কে খুব স্পষ্টভাবে জানিয়েছি ৷ ভারত দৃঢ়ভাবে অবৈধ অভিবাসনের বিরোধিতা করে ৷ এটি দেশের সুনামের জন্য ভালো নয় এবং বেশ কিছু অবৈধ কার্যকলাপের দিকে পরিচালিত করে ৷ তাই আমরা যেকোনও দেশেই অবৈধ অভিবাসনের বিরোধী এবং আমেরিকাও তার ব্যতিক্রম নয় ৷"
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মঙ্গলবার নবনিযুক্ত মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও সঙ্গে প্রথম দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন ৷ যেখানে রুবিও ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং অবৈধ অভিবাসন সম্পর্কিত উদ্বেগগুলিকে সমাধান করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের বিষয়ে কথা বলেন ।
ওই বৈঠকের একদিন পরে সাংবাদিক বৈঠকে এস জয়শঙ্কর জানান, অভিবাসনের ইস্যুতে কথা বলার পাশাপাশি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে তিনি ভিসার বিষয়টি তুলে ধরেন ৷ আইন মেনে আমেরিকায় আসার জন্য ভারতীয়দের দীর্ঘ সময় ভিসার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৷ বিদেশমন্ত্রী বলেন, "আমি তাকে (রুবিও) বলেছি যে, ভিসা পাওয়ার জন্য 400 দিন সময় লাগে ৷ ভিসা পেতে এত সময় লাগলে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক ভালোভাবে পালন হয় না ৷ আমি মনে করি তিনি সেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন ৷"