মান্ডি, 11 ফেব্রুয়ারি: এরকম সাফল্য চূড়া ছুঁক ৷ একের পর এক বৃদ্ধাশ্রম থেকে 'হারিয়ে যাওয়া'রা ঘর খুঁজে পাক ৷ হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ চোখে জল এনে দিল 65 বছরের পদ্মা মুর্মুর, ঠিক যখন তিনি তাঁর ভাগ্নেকে দেখতে পেলেন ৷ পাশাপাশি, পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনকে খুঁজে পেয়ে কেঁদে ফেললেন ৷ মান্ডি প্রশাসন এর আগে হারিয়ে যাওয়া কর্ণাটকের এক বৃদ্ধাকে 25 বছর পরে গতবছর তাঁর ঘরে ফেরানো হয় ৷
মান্ডির এসডিএম স্মৃতিকা নেগি বলেন, "আমাদের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে ৷ আমরা পদ্মার বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, বিলাসপুর (হিমাচল প্রদেশে) পুলিশ 2021 সালের অক্টোবরে এই মহিলাকে দেখতে পান। প্রথমে তাঁকে মাশোবরাতে এবং পরে চালখা আশ্রমে রাখা হয়। 2023 সালের সেপ্টেম্বর থেকে, ওই বৃদ্ধা এই ভাঙড়তু বৃদ্ধাশ্রমেই থাকতেন। পদ্মা হিন্দি জানেন না। উনি কী বলছেন তা জানার জন্য, এনএইচএআই কর্মকর্তাদের সাহায্য়ে হিমাচল প্রদেশে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি ৷"
পদ্মাকে 5 বছর পর ঘরে ফেরাল হিমাচল প্রশাসন (ইটিভি ভারত) তিনি আরও বলেন, "তখনই আমরা পদ্মা সম্পর্কে জানতে পারি ৷ বৃদ্ধা ও বাংলার শ্রমিকদের সঙ্গে কথোপকথনে জানা যায়, তিনি হুগলি জেলার আসানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর দু'টি সন্তান রয়েছে। ছেলের সঙ্গে তাঁর প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত ৷ কিন্তু, মহিলা জানেন না যে তিনি কীভাবে হিমাচল পৌঁছেছেন।"
পদ্মা মুর্মুকে তাঁর ভাগ্নে বাবলু মুর্মু এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত কর্মচারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় (ইটিভি ভারত) এরপর মান্ডি জেলার ডিসি অপূর্ব দেবগণ বাংলার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ বৃদ্ধার কাছ থেকে পাওয়া যাবতীয় তথ্য জানান। এরপর, সমস্ত তথ্য যাচাই করার পর, বাংলার প্রশাসন পদ্মাকে আনতে হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলায় তাঁদের কর্মকর্তাদের পাঠায়। গতকাল, সোমবার অপূর্ব দেবগণ বলেন, "পদ্মা মুর্মুকে তাঁর ভাগ্নে বাবলু মুর্মু এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত কর্মচারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৷ ভাগ্নে বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পদ্মাদেবী ৷ প্রিয়জনকে দেখে চোখে জল আসে তাঁর ভাগ্নেরও ৷"
পদ্মা মুর্মু হুগলির বাসিন্দা (ইটিভি ভারত) অপূর্ব দেবগণের সংযোজন, "মান্ডি জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টা হল এই ধরনের গৃহহীনদের তাঁদের পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত করা। আজ আমরা খুশি যে সাকাম্মা (কর্ণাটকের বৃদ্ধা)-র পর পদ্মা মুর্মুও তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছেন। আমরা চাই, পদ্মাদেবী তাঁর পরিবারের সঙ্গে বাকি জীবনটা আনন্দে কাটান ৷" এদিন মান্ডি ডিসি পদ্মাদেবী এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কর্মকর্তাদের হিমাচলের শাল এবং টুপি দিয়ে সম্মানিত করেন।
মান্ডির এসডিএম স্মৃতিকা নেগির সঙ্গে পদ্মাদেবী (ইটিভি ভারত) বাংলা থেকে পদ্মা মুর্মুকে নিতে আসা সমাজকল্যাণ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক সুনন্দা চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ওই মহিলা তাঁর ভাই এবং পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক বছর আগে তিনি তাঁর গ্রাম থেকে বর্ধমানে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে সম্ভবত ট্রেনে হিমাচল পৌঁছে যান। পরিবার মহিলার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছিলেন কিন্তু পদ্মার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখন, মান্ডি জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টার পরে, পদ্মা তাঁর পরিবারকে খুঁজে পেয়েছে ৷" তিনি মান্ডি জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এই উদ্যোগ চোখে জল এনে দিল 65 বছরের পদ্মা মুর্মুর (ইটিভি ভারত) এটা নিশ্চিত যে, মান্ডি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা গৃহহীনদের পুনরায় একত্রিত করার জন্য যে অভিযান শুরু করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয় ৷ মান্ডি জেলার আশ্রমগুলিতে এখনও অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁরা ভুল করে এখানে এসেছেন কিন্তু ভাষা না-জানা বা অন্যান্য কারণে বাড়ি ফিরে যেতে পারছেন না। প্রশাসনের এই উদ্যোগ এমন মানুষের জন্য অনুকরণীয় তা বলাই যায় ৷ আজ, মঙ্গলবার, পদ্মা মুর্মু বাংলার কর্মকর্তা এবং তাঁর ভাগ্নেকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন ৷