বায়ুদূষণ মুক্ত প্রয়াগরাজ, ভক্তদের অক্সিজেন জোগাচ্ছে জাপানি প্রযুক্তি - MAHA KUMBH MELA 2025
মহাকুম্ভ মেলায় প্রয়াগরাজে ভিড় জমিয়েছেন কোটি কোটি পুণ্যার্থী ৷ এই আবহ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে জাপানি প্রযুক্তির সাহায্যে 30 বিঘা জমিতে 10টি বন গড়ে তোলা হয়েছে ৷
প্রয়াগরাজ, 24 জানুয়ারি: বায়দূষণে জর্জরিত প্রতিবেশী রাজ্য দিল্লি ৷ বাতাসে বইছে বিষ ৷ এই আবহে, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে চলছে মহাকুম্ভ মেলা ৷ ত্রিবেণী সঙ্গমস্থলে ভিড় জমিয়েছেন দেশ-বিদেশ থাকা আসা কোটি কোটি ভক্ত ৷
কেউ কেউ আসছেন কয়েকদিনের জন্য় ৷ কেউ কেউ আবার দীর্ঘ সময়ের জন্য ৷ অথচ, প্রবল এই জনজোয়ার সত্ত্বেও প্রয়াগরাজে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার ৷ কারণ, মেলায় আগত পুণ্যার্থীদের অক্সিজেন জোগাচ্ছে 30 বিঘা জমিতে তৈরি 5 লক্ষ গাছ ৷
প্রয়াগরাজ মাত করেছে জাপানের প্রযুক্তি (ইটিভি ভারত)
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় মেলাকে সবুজ ও পরিবেশবান্ধব করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার ৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়েছে ৷ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়াগরাজের 10টি এলাকায় 30 বিঘা জমিতে 5 লক্ষ গাছ লাগানো হয়েছে ৷ বর্তমানে সেই গাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় 11.5 কোটি লিটার অক্সিজেন পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ ৷ জাপানের মিয়াওয়াকি প্রযুক্তির সাহায্য়ে প্রায় 6 কোটি টাকা খরচ করে বিশাল এই বনাঞ্চল গড়ে তুলেছে প্রয়াগরাজ পুরনিগম ৷ মহাকুম্ভ মেলার কথা ভেবে দু'বছর আগে এই বনাঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ৷
কোন কোন গাছ রয়েছে এই বনাঞ্চলে ?
প্রয়াগরাজ পুরনিগমের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ উত্তম কুমার জানান, বৃহৎ এই বনাঞ্চলে প্রায় 63টি প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে ৷ তালিকায় রয়েছে, নিম, তেঁতুল, অর্জুন, মহুয়া, জবা, তুলসি, সেগুন, আমলাখা, বরই, গুলমোহর, বোগেনভিলিয়া এবং ব্রাহ্মীর মতো ঔষধী গুণাগুণ যুক্ত ও শোভাময় গাছ ৷ তিন বছর এই বনাঞ্চল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাপানের একটি সংস্থাকে ৷
কোথায় কোথায় ঘন জঙ্গল তৈরি হয়েছে ?
জাপানি প্রযুক্তির সাহায্যে গড়ে তোলা বনাঞ্চল এখন ঘন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে ৷ ট্রান্সপোর্ট নগর বালু মাণ্ডি, অবন্তিকা কলোনি, নইনি, দেবঘাট পার্ক ঝলওয়া, ট্রান্সপোর্ট নগর পার্ক-2-সহ একাধিক এলাকার পাশে রয়েছে জঙ্গল ৷
মাত্র দেড় বছরে গাছের পরিবর্তন...
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ উত্তম কুমার আরও জানিয়েছেন, নইনি শিল্পাঞ্চলে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল সাধারণ মানুষের ৷ শিল্প এলাকায় হওয়ায় খালি জমির উপরই আবর্জনা ফেলে রাখতেন এলাকাবাসীরা ৷ আজ সেই এলাকার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে ৷ অবশ্য়, জমি সমতল করে গাছ লাগাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাঁদের বলেও জানান উত্তম কুমার ৷ অবশেষে দীর্ঘ দেড় বছরের যত্নে 20 থেকে 25 ফুট লম্বা গাছের দেখা মিলছে ৷
মিয়াওয়াকি পদ্ধতি ঠিক কী ?
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এনবি সিং জানিয়েছেন, এটি একটি গাছ লাগানোর পদ্ধতি ৷ 1970 সালে এই পদ্ধতিটির সৃষ্টি করেন জাপানের উদ্ভিদবিদ আকিরা মিয়াওয়াকি ৷ কম জায়গায় অধিক গাছ লাগানোর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ৷
এই প্রযুক্তির সাহায্যে মাটিতে একাধিক স্তর বানিয়ে একে অপরের খুব কাছে বেশ কয়েকটি গাছ রোপণ করা যায় ৷ এতে গাছগুলি 10 গুণ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও মাটির উর্বর ক্ষমতা বেড়ে যায় ৷ এই পদ্ধতিতে রোপণ করা গাছগুলি বাকি গাছের তুলনায় অধিক অক্সিজেন সরবরাহ করে বলে জানিয়েছেন অধ্য়াপক এনবি সিং ৷
এই প্রযুক্তির মাধ্য়মে গড়ে ওঠা গাছ আশেপাশের সমস্ত এলাকায় অক্সিজেন ব্যাঙ্কের মতো কাজ করে ৷ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অল্প পরিসরের জমিতে এই পদ্ধতির সাহায্য়ে গাছ লাগিয়ে অধিক উপকার পাওয়া যায় ৷ সাধারণ পদ্ধতিতে রোপণ করা একটি গাছ প্রতি বছর 21 থেকে 48 পাউন্ড কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করতে পারে ৷ তবে মিয়াওয়াকি পদ্ধতির সাহায্য়ে রোপণ করা গাছের শোষণ ক্ষমতা প্রায় 10 গুণ ৷
কী কী সুবিধা হয়েছে এই উদ্যোগের মাধ্যমে ?
এই বনাঞ্চলের কারণে আশেপাশের বেশকিছু এলাকার তাপমাত্রা গ্রীষ্মে আগের থেকে অনেকবেশি হ্রাস পেয়েছে ৷ ফলে লাভবান হয়েছেন সাধারণ মানুষ ৷ দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে নইনি শিল্পাঞ্চলে বাস করেন কমলেশ পাল ৷ তিনি বলেন, "শিল্পাঞ্চলের কারণে দেড় বছর আগে এলাকায় দূষণের মাত্রা বেশি থাকায় শ্বাস নিতে কষ্ট হত ৷ তবে এখন পরিস্থিতিতে অনেকটাই বদল ঘটেছে ৷ বিশুদ্ধ বাতাসে এখন প্রাণ খুলে শ্বাস নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ ৷"
প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ...
প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, এই বছর প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় 45 কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে ৷ এই বনাঞ্চলের সাহায্য়ে বিপুল এই জনজোয়ারে সত্ত্বেও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন ৷ কেবলমাত্র 1 জানুয়ারি বাতাসের মান খানিক নীচে নেমে গিয়েছিল ৷ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই দিন AQI ছিল 156 ৷ অথচ, মহাকুম্ভ মেলার শুরুর পর দু'দিন AQI ছিল যথাক্রমে 106 ও 94 ৷