মেরঠ, 28 জুলাই:গরমে দিনের পর দিন ট্রাক্টর চালিয়ে মাঠে কাজ এখন অতীত ৷ এবার ট্রাক্টরেই মিলবে এসির ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া ৷ শুধু কী তাই ! সঙ্গে রয়েছে মিউজিক সিস্টেম থেকে 5-6 জনের বসার ব্যবস্থা। এমনকী আপনাকে হাতও লাগাতে হবে না, দূর থেকে চালু এবং বন্ধ হবে ট্রাক্টরটি । তার জন্য কেবল প্রয়োজন পড়বে একটি রিমোটের ৷ তাতেই কেল্লাফতে ! সিনেমা নয়, বাস্তবে এমন ট্রাক্টর বানিয়ে তাঁক লাগালেন এক কৃষক ৷
ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন থেকে ট্রাক্টর তৈরি
তাঁর নাম গুরদীপ ৷ উত্তরপ্রদেশের মেরঠের রাজপুরা গ্রামে বাড়ি এই যুবকের ৷ গরম থেকে রেহাই দিতে কৃষক পরিবারের যুবক হাইটেক ট্রাক্টরকে তৈরি করেছেন। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে গিয়েছিলেন তিনি ৷ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল গুরদীপের চোখে ৷ তবে কোনও কারণে মাঝপথেই পড়া ছেড়ে দিতে হয়েছে তাঁকে ৷ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আর হয়নি তাঁর ৷ তবে তাতে কী ! পরিবারকে এখন কৃষিকাজে সাহায্য করেন গুরদীপ ৷ দিনের পর দিন পরিবারকে গরমে ট্রাক্টর নিয়ে কাজ করতে দেখেছেন যুবক ৷ তাই তিনি গরম থেকে বাঁচতে ট্রাক্টরে অনেক পরিবর্তন আনেন, যা আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে ।
গ্রীষ্মকাল ও ট্রাক্টর
গুরদীপ ইটিভি ভারতকে জানান, তিনি খেয়াল করেছেন, গ্রীষ্মকালে কৃষকরা চাইলেও সারাদিন ধরে তাঁদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন না ৷ তাই ট্রাক্টরকে আরামদায়ক করার চিন্তা মাথায় আসে গুরদীপের । যে সমস্ত কৃষকদের জমি বেশি, তাঁরা যদি তাঁদের কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে চান, তবে তাঁদের দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হবে ৷ গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড রোদের কারণে কৃষকদের দুপুরে কাজ বন্ধ রাখতে হয় ৷ তাই তিনি তাঁর ট্রাক্টরে এসি লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন । এসি লাগানোর জন্য ট্রাক্টরে কেবিনও তৈরি করেছেন তিনি ।
এসি ট্রাক্টর তৈরির গল্প
গুরদীপের কথায়, প্রথম দিকে ট্রাক্টরে পরিবর্তন আনতে কিছু সমস্যা হচ্ছিল ৷ কিন্তু ক্রমাগত প্রচেষ্টার ফলে ট্রাক্টরে পরিবর্তন আনেন তিনি । ট্র্যাক্টরে এয়ার কন্ডিশনার বসানোর পর তিনি এখন প্রচণ্ড রোদেও কাজ করতে পারেন । আগে ট্রাক্টর নিয়ে তিনি 8 ঘণ্টারও কম সময় কাজ করতে পারতেন ৷ কিন্তু এখন 16 ঘণ্টাও কাজ করতে কোনও সমস্যা হয় না গুরদীপের ।
এই ট্রাক্টরে করেই পরিবারকে নিয়ে আত্মীয়দের বাড়ি যান গুরদীপ । অনেক সময় এই ট্রাক্টরে চড়ে বন্ধুদের সঙ্গে কাজে শহরেও যান। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "প্রত্যেকেরই তাঁদের শখ পূরণের অধিকার আছে, তাহলে কৃষকরা কেন পিছিয়ে থাকবেন ।" গুরদীপ তাঁর ট্রাক্টরটিকে হাইটেক করতে প্রায় 90 হাজার টাকা খরচ করেছেন । তাঁর ট্রাক্টরটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে । ট্রাক্টরে গুরদীপের সঙ্গে বসে সেলফিও তুলছেন অনেকে ।
গুরদীপের বক্তব্য, "এখন এসি ট্রাক্টর আসতে শুরু করেছে, কিন্তু সেগুলোর দাম অনেক বেশি । আমি নিজেই ট্র্যাক্টর চালু করার জন্য রিমোট তৈরি করেছি ।" স্যার ছোটু রাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের প্রজেক্ট ইনচার্জ অধ্যাপক আশুতোষ মিশ্র গুরদীপের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, ট্রাক্টরে সুরক্ষার দিকটাও খেয়াল রাখা উচিত ।