নয়াদিল্লি, 22 জুলাই:সোমবার থেকে সংসদে শুরু হয়েছে বাজেট অধিবেশন ৷ মঙ্গলবার লোকসভায় বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন । কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের একদিন আগে এনডিএ সরকারের অস্বস্তি বাড়াল কংগ্রেস ৷ সংসদে প্রধান বিরোধী দলের তরফে সোমবার দাবি তোলা হল, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নিয়ে কেন্দ্রকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করতে হবে বাজেটে ৷ প্রথমত, কেন্দ্রকে এমএসপি নিয়ে আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে ৷ দ্বিতীয়ত, সবুজ বিপ্লবের জনক এস এস স্বামীনাথনের সূত্রের ভিত্তিতে এমএসপি নির্ধারণ করতে হবে ৷ তৃতীয়ত, কৃষি ঋণ মুকুবের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি স্থায়ী কমিশন গড়তে হবে ।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, "কেন্দ্রীয় সরকারকে আসন্ন বাজেটে কৃষি ও কৃষকদের কল্যাণের জন্য তিনটি মূল ঘোষণা করতে হবে ৷ স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে C2+50 শতাংশ সূত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এমএসপি-র আওতায় আসা 22টি ফসলের জন্য ন্যূনতম মূল্য বাড়াতে হবে ৷ সরকারকে অবশ্যই এমএসপি নিয়ে আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে ৷ এছাড়াও ফসল সংগ্রহ, নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যের পার্থক্যের ক্ষতিপূরণ-সহ এটিকে দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এগুলি করার জন্য সরকারের সংকল্প এবং সাহস লাগবে ৷"
তিনি কৃষি ঋণ মুকুবের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন, পরিমাণ মূল্যায়ন এবং বাস্তবায়নের পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি স্থায়ী কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন ৷ তিনি তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, "এই অতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি ঋণগ্রস্ত কৃষকদের স্বস্তি দেবে ৷ মনে রাখবেন যে, এই তিনটি পদক্ষেপ নেওয়ার সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে । এর জন্য দাম্ভিক প্রধানমন্ত্রীকে নিজের জেদ ছেড়ে কিছুটা সাহস দেখাতে হবে এবং কৃষকদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।"
জয়রাম রমেশের কথায়, "কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার মধ্যে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের অযোগ্যতা এবং অসচ্ছলতা সবচেয়ে ক্ষতিকারক । যদিও ইউপিএ আমলে গমের এমএসপি 119 শতাংশ এবং চালের 134 শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল তবে মোদি সরকার তা যথাক্রমে 47 শতাংশ এবং 50 শতাংশ বেড়েছে । মুদ্রাস্ফীতি এবং কৃষি উপকরণের ক্রমবর্ধমান দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এটি মোটেও যথেষ্ট নয়।" তাঁর দাবি, কৃষকদের ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে । ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও) অনুসারে, 2013 সাল থেকে বকেয়া কৃষি ঋণ 58 শতাংশ বেড়েছে ৷ অর্ধেকেরও বেশি কৃষক ঋণগ্রস্ত। তিনি বলেন," 2014 সাল থেকে আমরা 1 লাখেরও বেশি কৃষককে আত্মহত্যা করতে দেখেছি ।"
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ কৃষি আইন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র আক্রমণ করেন ৷ তিনি বলেছেন, "2021 সালের নভেম্বরে তিনটি কৃষি কালা কানুন প্রত্যাহারের পরে প্রধানমন্ত্রী এমএসপি সম্পর্কিত বিষয়গুলি পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা করেছিলেন । ওই কমিটি গঠন করতে সরকারের আট মাস সময় লেগেছিল ৷ কিন্তু দুই বছর পরে সেই কমিটি এখনও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারল না ৷ এসবই মোদি সরকারের জন্য হয়েছে ৷ সরকার চাইলে এতদিনে রিপোর্টটি প্রকাশ করা যেত এবং এমএসপি আইনি মর্যাদা পেত ।"
তেলেঙ্গানার কংগ্রেস সরকার রাজ্যের কৃষকদের স্বস্তি দিতে কৃষি ঋণ মুকুব করা শুরু করেছে ৷ তিনি বলেন, "এটি মোট 40 লক্ষ কৃষককে 2 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণে পরিত্রাণ দেবে ৷ 2008 সালে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকারের আমলে 72,000 কোটি টাকার কৃষি ঋণ মুকুব করা হয়েছে ৷ যার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের 54 লক্ষ কৃষক, মহারাষ্ট্রের 42 লক্ষ কৃষক, হরিয়ানার 8.9 লক্ষ কৃষক, বিহারের 17.6 লক্ষ কৃষক এবং ঝাড়খণ্ডের 6.66 লক্ষ কৃষক-সহ বিপুল সংখ্যক কৃষক উপকৃত হয়েছে ।
জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেন, "মোদি সরকার পুঁজিপতিদের 16 লক্ষ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ মুকুব করেছে। কিন্তু অন্যদিকে এই বছর আরবিআই থেকে রেকর্ড 2.11 লক্ষ কোটি টাকা লভ্যাংশ পাওয়ার পরেও কেন্দ্র কৃষকদের এক টাকা কৃষি ঋণ মওকুফ করেনি । 4 জুন ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক এবং নৈতিক পরাজয়ের ক্ষত থেকে সেরে উঠছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷" তিনি কি কৃষি কল্যাণের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি নেবেন ? প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ৷