নয়াদিল্লি, 14 ফেব্রুয়ারি:ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপির-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়াকে সামনে রেখে আজও হচ্ছে কৃষকদের 'দিল্লি চলো' মহামিছিল ৷ এর আগেও 2020-21 সালে এই এমএসপি-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন করেছেন কৃষকরা ৷ এ নিয়ে কোনওভাবেই কৃষকদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এদিকে কৃষকদের এই সমস্যার সমাধানে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে কৃষকদের জাতীয় কমিশনের অধীনে তৈরি হয় স্বামীনাথন কমিশন ৷ এই কমিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক এমএস স্বামীনাথন ৷ তিনি দেশের সবুজ বিপ্লবের স্থপতি ৷
সেই সময় এমএসপি নিয়ে সরকারকে কী প্রস্তাব দিয়েছিল এই কমিশন ? রাজ্যসভায় কংগ্রেস সরকারের কাছে এই প্রশ্ন তুলেছিল বিজেপি ৷ 2010 সালের 16 এপ্রিল এর উত্তর দিয়েছিল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার ৷ তখনও প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং ৷ উত্তরে কংগ্রেস সরকারের কৃষি মন্ত্রক জানায়, কোনও ফসলের ওজনের উপর নির্ভর করে উৎপাদনের গড় খরচ নির্ধারণ করা হয় ৷ সেই খরচের থেকে অন্ততপক্ষে 50 শতাংশ বেশি হবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি ৷ তবে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার নানা কারণে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছিল ৷
স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবগুলি কী ছিল? রইল তার 10টি পয়েন্ট:
- জমি সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়েছিল কমিশন ৷ ফসল উৎপাদন এবং গবাদি পশুপালনের ক্ষেত্রে জমি ব্যবহারের প্রাথমিক ইস্যুগুলির সমাধানে জমি সংস্কার অবশ্য প্রয়োজন বলেও তারা মনে করেছিল ৷
- কৃষির সঙ্গে জড়িত সেচ, নিকাশি ব্যবস্থা, জমির উন্নয়ন, জল সংরক্ষণ, গবেষণায় উন্নতি এবং সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমজনতার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল ৷
- চাষবাসের সঙ্গে সংরক্ষণ কীভাবে জড়িত, তা কৃষকদের জানানোর পক্ষে ছিল কমিশন ৷ সংরক্ষণ কার্যকর করার কথাও বলেছিল ৷ এই পদক্ষেপ কৃষি পরিবারগুলিকে মাটির স্বাস্থ্য উন্নতিতে এবং সংরক্ষণে সাহায্য করবে বলে মনে হয়েছিল কমিশনের ৷
- সরকারি সাহায্যে কৃষি ঋণের উপর 4 শতাংশ সরল সুদ কমানো হোক ৷
- ফসল বিমা সারা দেশে কার্যকর হোক এবং তা সব ফসলের জন্য হোক ৷ পাশাপাশি এর কিস্তির পরিমাণ কমানো হোক ৷ গ্রামীণ বিমা কী, তা নিয়ে আরও বেশি মানুষকে জানানো দরকার ৷ কৃষকদের কাছে এই বিষয়ে জানাতে তৈরি হোক রুরাল ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ৷
- কৃষকদের জন্য সর্বজনীন বিতরণ ব্যবস্থা কার্যকর করুক সরকার ৷ জীবনচক্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুষ্টি সহায়ক প্রকল্প রয়েছে ৷ সেই প্রকল্পের সুবিধেগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তাকে ঢেলে সাজানো হোক ৷ আর এই কাজে অংশ নিক পঞ্চায়েত ও স্থানীয় প্রশাসন ৷
- গ্রামাঞ্চলে শস্য সঞ্চয় এবং সর্বত্র জল পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল ৷ এই নীতির উপরে ভিত্তি করেই তৈরি হয় মহিলাদের স্বনির্ভর দল বা সেল্ফ হেল্প গ্রুপ ৷ মহিলাদের এই স্বনির্ভর দলগুলিই সবার জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা এবং জল সংরক্ষণও করবে ৷ এই বিষয়টি প্রচার করুক সরকার ৷
- রাজ্যস্তরেই কৃষক কমিশন তৈরি করতে হবে ৷ এই কমিশনগুলির কৃষক প্রতিনিধিরা সরকারের কাছে তাঁদের সমস্যার কথা জানাবেন, যাতে কৃষকদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হয় ৷
- যে যে জায়গাগুলিতে কৃষকদের অবস্থা খুবই খারাপ, সেখানে জ্ঞান চৌপল বা ভিলেজ নলেজ সেন্টার তৈরি হোক ৷ এখান থেকে কৃষকরা চাষ এবং চাষ ছাড়া অন্য গ্রামীণ জীবিকা সম্পর্কিত সমস্যাগুলির সমাধান পাবেন ৷
- কোনও ফসলের ওজন অনুযায়ী গড় উৎপাদন মূল্যের চেয়ে অন্ততপক্ষে 50 শতাংশ বেশি হবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি ৷
আরও পড়ুন:
- ‘মহান কৃষক নেতা’কে ভারতরত্ন দিলেও কৃষকদের উপর অবিচার মোদি সরকারের, অভিযোগ কংগ্রেসের
- আজ ফের 'দিল্লি চলো' মহামিছিল, কৃষকদের রুখতে প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থা
- 'হিংসা সমাধান নয়', বিক্ষোভরত কৃষকদের আলোচনায় বসার আহ্বান অনুরাগ ঠাকুরের