হায়দরাবাদ, 19 অগস্ট: কথায় আছে সকালের শুদ্ধ বাতাস সারাদিন শরীরকে তরতাজা রাখে ৷ তাই দিন শুরুর আগে এক ঝলক শুদ্ধ বাতাসে শ্বাস টেনে নেওয়ার আশায় সকালের সময়কে বেছে নেওয়া হয় ৷ প্রশ্ন, সত্য়ি কি সকালের বাতাস শুদ্ধ ? নাকি তা শুধুই ধারণা মাত্র ৷ দিল্লির একটি সমীক্ষা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা কেড়ে নিতে পারে রাতের ঘুম ৷
সমীক্ষাতে দেখা গিয়েছে, মানব সভ্যতা যত বেশি যন্ত্র নির্ভর হচ্ছে, ততটাই নিজের অজান্তে পরিবশ দূষণে সামিল হচ্ছে ৷ এই দূষণের কারণে বাতাসে মিশছে বিভিন্ন ধরনের কণা (Particulate Matter) ৷ যার মধ্যে এক ধরনের কণার আকার 2.5 মাইক্রোমিটারেরও কম ৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মানুষের চুলের কণার পরিমাপ 70 মাইক্রোমিটার ৷ বাতাসে মিশে থাকা এই কণার পরিমাপ চুলের কণার থেকেও 28 গুণ ছোট ৷ যা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করছে ৷ ফুসফুস ও রক্তে মিশে যাচ্ছে ৷ প্রতিদিন একধাপ করে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে ৷
প্রশ্ন হল, এই কণা কোথা থেকে বাতাসে মিশছে ? একটি সমীক্ষা বলছে, বাতাসে মিশে থাকা 'ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র' কণা যে কোনও ধরনের যান্ত্রিক ধোঁয়া, কলকারখানার দূষণ এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রকৃতি থেকেও সৃষ্টি হয় ৷ কণাগুলির আকার অত্যন্ত ছোট হওয়ার কারণে তা মানব শরীরে প্রবেশ করার পরে সহজেই মিশে যার ফুসফুস ও রক্তে ৷ যা থেকে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে জটিল থেকে জটিলতর রোগের ৷
কীভাবে 'মৃত্য়ু' মুখে ঠেলে দেয় এই আণুবীক্ষণিক কণা:
শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কিত সমস্যা: এই 2.5 মাপের কণা (Particulate Matter) শরীরে প্রবেশ করে ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাস্থমা, সিওপিডি (chronic obstructive pulmonary disease) ও ফুসফুসের সমস্যা সৃষ্টি করে ৷
হৃদযন্ত্রের সমস্যা: বাতাসে মিশে থাকা সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ম কণা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও অন্যান্য যে কোনও হার্টের সমস্যার কারণ হতে পারে ৷
অকাল মৃত্যু: এই 2.5 মাপের কণা মানব স্বাস্থ্যের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জড়িত ৷ স্বল্পস্থায়ী বা দীর্ঘদিন ধরে বাতাসে মিশে থাকা কণা শরীরে প্রবেশ করলে তা 'অকাল মৃত্যুর' দিকে ঠেলে দিতে পারে ৷ বিশেষত যে সব ব্যক্তি ইতিমধ্যে নানারকম জটিল সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এই কণা অত্যন্ত ক্ষতিকারক ৷
এছড়া এই কণা চোখ, কান, গলা ও স্নায়ুরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় ৷ অন্তঃসত্ত্বা মেয়েদের শরীরে এই কণা প্রবেশ করলে সময়ের আগে শিশুর জন্ম হতে পারে ৷ এমনকী কম ওজনের শিশু জন্মানোর অন্যতম কারণ হতে পারে এই কণা ৷
পরিবেশে কীভাবে সৃষ্টি হয় এই কণা ?
যানবাহনের দূষণ থেকে এই কণা বাতাসে মিশে যায় ৷ গাড়ির ইঞ্জিনের ধোঁয়ায় নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM) বা এই ক্ষুদ্র কণা মিশে থাকে ৷ এই দূষিত গ্যাস ও কণা বাতাসে মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ছোট ছোট কণায় ভেঙে যায় ৷ তখন নতুন সৃষ্টি হওয়া কণার মাপ 2.5 মাইক্রোমিটারের কম হওয়ায় তা সহজেই মানব শরীরে প্রবেশ করতে পারে ৷ যার ফলে জটিল থেকে জটিলতর রোগের সৃষ্টি হতে পারে ৷
পেট্রল চালিত গাড়ির থেকে ডিজেল চালিত গাড়িতে কণা সৃষ্টি বেশি :
একটি পরীক্ষায় দেখা দেখা গিয়েছে ডিজেলে যেসমস্ত গাড়ি চলে সেই সব গাড়ির ধোঁয়া থেকে বেশি পার্টিকুলেট ম্যাটার বা 2.5 মাইক্রোমিটারের কণা তৈরি হয় ৷ পেট্রল চালিত গাড়ির ধোঁয়ার ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা অনেকটাই কম ৷ পেট্রল ইঞ্জিন চালিত গাড়িগুলির ইঞ্জিন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হওয়ায়, ক্ষতিকারক পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM) কম তৈরি করে ৷
গাড়ির ধোঁয়া ছাড়া আর কীভাবে সৃষ্টি হতে পারে এই কণা :
কলকারখানার ধোঁয়া, কৃষি কাজ, ঘর-বাড়ির তৈরি ও ভাঙার সময় ধুলো, রান্নার ধোঁয়া থেকেও এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা সৃষ্টি হয় ৷ বলা যায়, প্রতিমুহূর্তে সৃষ্টি হওয়া দূষণ থেকে কণা তৈরি হচ্ছে ৷
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ?
সাধারণ মানুষকে সবার আগে সচেতন করতে হবে ৷ সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে বাস, ট্রাম ও গণপরিবহণ ব্যবহার করতে হবে ৷ বাতাসে কণার উপরেও নজর রাখতে হবে ৷ সবথেকে ভালো হয় যদি পরিবেশবান্ধব সাইকেল ব্যবহার করা যায় ৷ সম্ভব হলে কম দূরত্বের ক্ষেত্রে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পরেন ৷ পরিবেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ৷