শিলিগুড়ি, 7 ফেব্রুয়ারি: রাজ্যে ফের অনাহারে চা বাগান শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ । আর ওই অভিযোগ উঠতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতির পাশাপাশি প্রশাসনিকমহলে । ওই শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসন দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে । জেলা প্রশাসন ছাড়াও বাগান কর্তৃপক্ষ, খাদ্য দফতরের গাফিলতির কারণে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ।
জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের মধু চা বাগানের শ্রমিক ধনী ওঁরাওয়ের (58) অনাহারে মৃত্যু হয়েছে । তিনি 2 ফেব্রুয়ারি তাঁর ত্রিপল দেওয়া কাঁচা বাড়িতে মারা যান । শুধু তাই নয়, তাঁর স্ত্রী আশারানি ওঁরাওয়েরও অনাহারের ফলে শারীরিক পরিস্থিতি আশংকাজনক । ধনী ওঁরাওয়ের মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ চা মজদুর সমিতির তরফে ওই মৃত্যুর আসল কারণ জানার জন্য ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয় ।
অভিযোগ, সত্য উদঘাটন করতে গিয়ে চা বাগানের একাধিক অব্যস্থার ছবি উঠে আসে । চা বাগানের কোনও শ্রমিক আবাসন প্রকল্পের সুবিধা পাননি । চা বাগানে নেই কোনও পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা । রেশন বণ্টনে সব থেকে বেশি অভিযোগ উঠে আসে । শ্রমিকদের নিয়মিত রেশন দেওয়া হচ্ছিল না । অভিযোগ, ধনী ওঁরাও বিগত তিন বছর ধরে কোনও রেশন পাচ্ছিলেন না । পাড়া প্রতিবেশীদের থেকে ভিক্ষা করে দিনযাপন করছিলেন ধনী ওঁরাও ও তাঁর স্ত্রী । অনাহারের ফলে ধনী ওঁরাও পরবর্তীতে শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ায় চা বাগানে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন । ফলে স্থায়ী কর্মী হলেও তাঁর বেতন দেওয়া বন্ধ করে দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ ।
তার উপর আধারকার্ড না থাকায় কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ছিল না ওই অসহায় দম্পতির । এরপর 2 ফেব্রুয়ারি বাড়িতে মারা যান ধনী ওঁরাও । তাঁর মৃত্যুর পর আত্মীয় পরিজনেরা তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন । বিষয়টি নজরে আসে পশ্চিমবঙ্গ চা মজদুর সমিতির । তাঁরা ধনী ওঁরাওয়ের মৃত্যু নিয়ে প্রশাসন, শ্রম দফতরের কাছে অভিযোগ জানায় । অভিযোগ জানাতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন । মঙ্গলবার ধনী ওঁরাওয়ের স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ পাশাপাশি তাঁর হাতে রেশন সামগ্রী তুলে দেওয়া হয় ।
বুধবার শিলিগুড়িতে রাজ্য সরকার, জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মৃতের ভাই চৈতু ওঁরাও, প্রতিবেশী রাজ কারকেট্টা, বিনয় কারকেট্টা ও আইনজীবী পূর্বায়ন চক্রবর্তী । পূর্বায়ন চক্রবর্তী বলেন, "ধনী ওঁরাওয়ের মৃত্যুর থেকেই মধু চা বাগানের আসল সত্যিটা প্রকাশ্যে আসে । চা বাগানে চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা । রেশন, আবাসন, চিকিৎসা ব্যবস্থা কিছুই নেই ।"
মৃতের চাই চৈতু ওঁরাও বলেন, "দাদাদের খাওয়াদাওয়ার চরম সমস্যা ছিল। অনাহারের কারণে কাজেও যেতে পারছিল না । বাগান কর্তৃপক্ষ বা সরকার কেউ সাহায্য করেনি ।"
আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরিন্দর মীনা বলেন, "যেভাবে মৃত্যু হয়েছে তা আসল নয় । তবে মৃত্যু হয়েছে । ঠিক কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।" কালচিনির বিধায়ক বলেন, " উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী বলেন, "আমি আগে জানতাম না । খোঁজ নিয়ে দেখা হবে ।"
ওই বিষয়ে চা বাগান মালিক শ্যামসুন্দর গোয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্তর দেননি ৷ কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা বলেন, "এরকম ঘটনা আমার জানা নেই । যদি অনাহারে মৃত্যু হয়েও থাকে তবে তা নিয়ে আমরা ফের সরব হব ।"
প্রসঙ্গত, 2015 সালেও ওই চা বাগানে অনাহারে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল । তারপর ধুমচিপাড়া চা বাগানেও একইভাবে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । মধু চা বাগানটি 2014 সালে বন্ধ হয়ে যায় । 2021 সালে ফের চা বাগানটি খোলে ।
আরও পড়ুন: