মালদা, 29 নভেম্বর: প্রকল্প চালু হয়ে গিয়েছে বহু আগেই ৷ বসেছে পাইপলাইনও ৷ তাতে শুরু থেকেই অপরিস্রুত জল আসছিল ৷ মাস ছয়েক ধরে সেই পাইপলাইনেও জল সরবরাহ বন্ধ ৷ এই পরিস্থিতিতে অন্য গ্রাম থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের ৷ প্রচণ্ড ভিড়ে প্রতিদিন জল পাওয়াও যাচ্ছে না ৷ তখন পুকুর কিংবা সাধারণ নলকূপের জল একমাত্র ভরসা ৷ প্রশাসনকে বারংবার জানিয়েও পানীয় জল না পেয়ে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা শুক্রবার প্রবল বিক্ষোভ দেখান ৷ যদিও গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও ৷
এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে মিশে রয়েছে আর্সেনিক বিষ ৷ তার প্রকোপ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন এলাকার তৎকালীন বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী প্রয়াত শৈলেন সরকার ৷ ফুলহর নদী থেকে জল উত্তোলন করে পরিস্রুতকরণের জন্য নির্মিত হয়েছিল কাহালা আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্প ৷ কিন্তু সেই প্রকল্প চালু হলেও সঠিক জল সরবরাহ না হওয়ার অভিযোগ তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের ৷
রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শেখ পাড়া, প্রধান পাড়া আর সবজি পাড়ার মানুষজন পরিস্রুত পানীয় জল থেকে বঞ্চিত ৷ এই তিন গ্রামে এখনও নাকি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল চালুই করা হয়নি ৷ অথচ তিনটি গ্রাম মিলিয়ে অন্তত 600 পরিবারের বাস ৷ এই বিষয়ে প্রধানপাড়ার বাসিন্দা শেখ তাহের বলেন, "শৈলেন সরকারের আমলে গ্রামে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের পাইপ লাইন বসেছিল ৷ সেটাও প্রায় 15 বছর হয়ে গেল ৷ কিন্তু পরিস্রুত পানীয় জল আর পাওয়া যাচ্ছে না ৷ আমাদের এখন পুকুর কিংবা নলকূপের জল পান করতে হচ্ছে ৷ সেই জল খেয়ে বাচ্চা-বড়, সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে ৷ আমরা প্রশাসনকে সব জানিয়েছি ৷ কিন্তু প্রশাসন আমাদের কথায় গুরুত্বই দেয় না ৷ আধা কিলোমিটার দূরে অন্য গ্রাম থেকে আমাদের পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে ৷ কিন্তু খুব ভিড় হয়ে যাওয়ায় কোনওদিন জল পাওয়া যায়, কোনওদিন পাওয়া যায় না ৷"
এলাকার আরেক বাসিন্দা বেলন বিবির কথায়, "তিন থেকে সাড়ে তিন মাস হয়ে গেল ৷ আমরা জল পাচ্ছি না ৷ পুকুরের জলে প্রাত্যহিক কাজ, এমনকি রান্নাও করছি ৷ অনেক দূর থেকে পানীয় জল নিয়ে আসতে হচ্ছে ৷ এলাকার সব গ্রামেই পরিস্রুত পানীয় জল দেওয়া হচ্ছে ৷ শুধুমাত্র আমাদের তিনটি গ্রাম ছাড়া ৷ প্রধান থেকে শুরু করে প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারদেরও বিষয়টি জানিয়েছি ৷ কিন্তু এটা খারাপ, ওটা খারাপ বলে দিন কাটাচ্ছে ৷ পুকুরের জল খেয়ে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে ৷ কবে পাইপ লাইনের জল পাব জানি না ৷"
বিডিও রাকেশ টোপ্পোর বক্তব্য, "এখন সব জায়গায় নতুন পাইপ লাইনের কাজ চলছে ৷ সেই কাজ শেষ হলেই সব গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল পেয়ে যাবে ৷ ওই তিনটি গ্রামে যে 15 বছর ধরে পানীয় জল যাচ্ছে না, সেটা আমার জানা নেই ৷ গ্রামবাসীরা কোথা থেকে জল আনছেন জানি না ৷ যাই হোক, আমি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি ৷ ওই তিনটি গ্রামে যাতে দ্রুত আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের সরবরাহ করা হয়, তা দেখা হবে ৷"