কলকাতা, 10 মে: এ বার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দ্বারস্থ হতে চলেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা রাজভবনের মহিলা কর্মচারী ৷ ন্যায়বিচার পেতে তিনি রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখবেন বলে শুক্রবার জানিয়েছেন ৷ রাজভবনের যে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে তাঁর পরিচয় গোপন না-করে আনএডিটেড ফুটেজ প্রকাশ করা নিয়েও অসন্তোষ জানিয়েছেন ওই মহিলা কর্মী ৷
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই তোলপাড় রাজ্য ৷ চুক্তিভিত্তিক মহিলা কর্মীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার প্রায় 1 ঘণ্টা 20 মিনিটের একটি ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করা হয় রাজভবনের তরফে ৷ তার পরদিনই অভিযোগকারিণী আজ জানান যে, তিনি এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চাইবেন ৷ রাজভবন যে অসম্পাদিত ফুটেজ সর্বসমক্ষে এনেছে, সেখানে কেন তাঁর মুখটি ঝাপসা বা অস্পষ্ট করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওই মহিলা কর্মী ৷
রাজ্যপাল সাংবিধানিক রক্ষাকবচ উপভোগ করার কারণে কলকাতা পুলিশের উপর তিনি খুব বেশি আশা রাখতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ এছাড়াও তিনি গুরুতর হতাশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন বলে ওই কর্মী জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লেখাই হবে ন্যায়বিচার পাওয়ার একমাত্র উপায় ।
সংবাদসংস্থা পিটিআইকে অভিযোগকারিণী বলেছেন, "আমি জানি যে সাংবিধানিক অনাক্রম্যতার কারণে বর্তমান রাজ্যপালের কিছুই হবে না। কিন্তু তিনি যে অপরাধ করেছেন তার কী হবে? আমি রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লিখে তাঁর হস্তক্ষেপ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমি ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য তাঁকে লিখছি, অন্য কোনও কারণে নয় ।"
তাঁর পরিচয় গোপন না-করে রাজভবনের সিসিটিভির ফুটেজ স্ক্রিনিংনিয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন অভিযোগকারিণী ৷ তিনি বলেন যে, তিনি এ ব্যাপারে প্রতিকারের জন্য পুলিশের কাছেও যাবেন । তাঁর দাবি, "আমার অনুমতি ছাড়া রাজ্যপাল কীভাবে আমার ফুটেজ স্ক্রিন করলেন ? তিনি আজ একটি নতুন অপরাধ করেছেন ৷"
এই ঘটনার বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহায়তা চাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন কি না তা জানতে চাইলে, অভিযোগকারিণী বলেন, যে দিন প্রধানমন্ত্রীর রাজভবনে থাকার কথা ছিল সেই দিনই এই ঘটনা ঘটে ৷ তাঁর কথায়, "যখন আমি যন্ত্রণার মধ্যে ছিলাম এবং প্রতিবাদ করছিলাম, তখন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মীরা আমার যন্ত্রণা প্রত্যক্ষ করেছেন । যদিও আমার বিশ্বাস, তাঁরা মোদিকে জানিয়েছিলেন ৷ তবে আমি তাঁর কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাইনি । তাঁকে লেখা এখন নিরর্থক বলে মনে হচ্ছে ৷"
কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন (এমসিএ) এ মাস্টার্স ওই মহিলা কর্মী আরও বলেন, তিনি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পর থেকে যে হতাশায় রয়েছেন তা কাটিয়ে ওঠার জন্য থেরাপি নেওয়ার কথাও ভাবছেন ৷ তিনি বলেন, "আমি মারাত্মক বিষণ্ণতা ও অপমানে ভুগছি । এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার কথা কল্পনাও করিনি । এটি আমার এবং আমার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন ।"
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি আরও বলেন, "তিনি (রাজ্যপাল) একটি কুৎসিত কাজ করেছেন । তারপরে তিনি তাঁর দোষ ঢাকতে একটি হাস্যকর নাটক মঞ্চস্থ করছেন । ফুটেজ প্রকাশের আগে তিনি কখনও আমার অনুমতি নেননি । এটি আমাদের আইনের লঙ্ঘন, কারণ আমার পরিচয় গোপন রাখা উচিত ছিল ৷"
আরও পড়ুন: