ডায়মন্ড হারবার, 8 ডিসেম্বর: ফের সরকারি হাসপাতালের জয়জয়কার ৷ তাও আবার শহর কলকাতা নয়, জেলার হাসপাতাল ৷ যেখানে ব্যর্থ হয়েছে কলকাতার একাধিক বড় বড় হাসপাতাল, সেখানে দক্ষিণ 24 পরগনার ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চেষ্টায় ছ'বারের মাথায় কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন হত দরিদ্র গৃহবধূ ৷
হাসাপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রসূতির নাম আজীবন বিবি ৷ বয়স 26 বছর ৷ দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার কানপুরের বাসিন্দা তিনি ৷ মা হওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন তিনি ৷ তবে একবার দুইবার নয়, পাঁচ পাঁচবার সন্তান ধারণের পরও ছোট্ট প্রাণকে পৃথিবীর আলো দেখাতে ব্যর্থ হন তিনি । কারণ তিনি সারভাইকাল ইনকম্পিটেন্স নামে এক রোগে আক্রান্ত ছিলেন ৷
সারভাইকাল ইনকম্পিটেন্স কী ?
চিকিৎসকদের ভাষায়, সারভাইকাল ইনকম্পিটেন্স হল জরায়ুঘটিত রোগ ৷ এটি সাধারণত জরায়ুতে জন্মগত সমস্যার কারণে হয় । তাই সেই কারণে মা হওয়ার সময় পাঁচ মাসের বেশি সন্তান গর্ভে বেঁচে থাকত না । এর পাশাপাশি আরও একটি রোগে আক্রান্ত ছিলেন আজীবন বিবি ৷ যার নাম অ্যাপলা । এই রোগের কারণেও সন্তান ধারণে সমস্যা হয় ৷
ওই দুটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আজীবন বিবির গর্ভে ভ্রুণ বেশিদিন বেঁচে থাকত না ৷ যার কারণে হতাশায় ভুগতে থাকেন গৃহবধূ । কলকাতার একাধিক হাসপাতাল ও নার্সিংহোম ঘুরে অবশেষে আজীবন বিবি ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের দ্বারস্থ হন ৷ সেখানকার প্রসূতি বিভাগে ছ'বারের মাথায় অবশেষে মা হলেন আজীবন বিবি ।
চিকিৎসকরা তাঁর প্রথমে একটি সার্জারি করেন ৷ তারপর তিনি গর্ভবতী হন । এরপর তিনি সন্তান জন্ম দেওয়া না পর্যন্ত তাঁকে বেড রেস্টে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । কারণ ষষ্ঠবারে গর্ভধারণ অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল । এই সমস্ত ক্ষেত্রে প্রাণের ঝুঁকি থাকে, তাই এই রোগীকে বাড়ি থেকেই চিকিৎসা করানো হয় ।
বাড়িতে সমস্যার কারণে গর্ভবতী অবস্থায় আজীবন বিবি হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য আসতে পারতেন না । ওই গৃহবধূর জন্যে একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয় ৷ ডায়মন্ড হারবার হাসপাতাল থেকে প্রতিমাসে চেকআপের জন্য চিকিৎসকরা পৌঁছে যেতেন তাঁর বাড়ি ৷ এরপরেই মেলে সাফল্য ৷ আজীবন বিবি সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দেন ৷ মা এবং শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন ৷
এ বিষয়ে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মানস সাহা বলেন, "আজীবন বিবি নামে এক মহিলা আমাদের ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন ৷ উনি সারভাইকাল ইনকম্পিটেন্স ও অ্যাপলা নামে দুটি রোগে আক্রান্ত ছিলেন ৷ রোগ দুটির কারণে গর্ভধারণে বাধা হচ্ছিল ওঁর । আমরা রোগগুলিকে চিহ্নিত করি ৷ চ্যালেঞ্জের সঙ্গে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি । এরপর উনি একটা কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ।"
ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পক্ষ থেকে অসাধ্য সাধন করা হয়েছে । তাই এক মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে খুশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে চিকিৎসকের দল । মা হতে পেরে আনন্দে আত্মহারা আজীবন বিবিও ৷ এই মাতৃসুখের জন্য ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সকল চিকিৎসকদের কৃতজ্ঞতা জানান তিনি ।
আজীবন বিবি বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে আমি এই সমস্যায় ভুগছি ৷ পাঁচবার সন্তান ধারণের পরও মা হতে পারিনি ৷ এমনকি এই সমস্যার চিকিৎসার জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও পর্যন্ত গিয়েছিলাম । চিকিৎসা করেও কোন লাভ হয়নি । এরপর ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসি । এখানে ডাক্তারবাবুরা আমার রোগ ধরতে পারেন ৷ এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আমার রোগ নিরাময় করেন এবং অবশেষে মাতৃ সুখ লাভ করি আমি । কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছি ৷ সন্তান ও আমি ভালো আছি ৷"
আজীবন বিবি মা হওয়ায় খুশি পরিবারও ৷ প্রসূতির দিদি আঞ্জীবন বিবি বলেন, "কন্যাসন্তান হওয়াতে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটেছে । গত কয়েক বছর ধরে নানা সময় গর্ভবতী হলেও কোনও না কোনও কারণে সেই বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায় বোনের । বহু চিকিৎসককে দেখিও তেমন সুস্থ হয়নি সে ৷ এরপর ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় বোনকে ৷ চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ওঁর রোগ চিহ্নিত করেন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ করে তোলেন বোনকে । এরপর আবারও গর্ভবতী হয় আজীবন এবং একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় ।"