ETV Bharat / state

অনুকূল আবহাওয়ায় মুকুলে ভরেছে গাছ, এবার আমের রেকর্ড ফলন ! - MALDA MANGO

এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল ৷ ফলে আম বাগানগুলিতে গাছে গাছে উপচে পড়ছে মুকুল ৷ এবার মলদায় চার লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা প্রশাসনের ৷

ETV BHARAT
আম বাগানে উপচে পড়ছে মুকুল (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 6, 2025, 6:19 PM IST

মালদা, 6 ফেব্রুয়ারি: ফলের রাজা আম ৷ গরমের এই রসালো ফলে প্রাণের আরাম, জিভের তৃপ্তি ৷ আর এই আমের জন্য এবছর এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া এতটাই সদয় যে, রেকর্ড ফলনের আশায় বুক বাঁধছেন চাষিরা ৷ মালদার আমের সুখ্যাতি জগৎজোড়া ৷ জেলার লক্ষ্মণভোগ, ফজলি, ক্ষীরসাপাতি অনেক আগেই জিআই ট্যাগ পেয়েছে ৷ এবার জেলায় মাঘ মাসেই বিভিন্ন প্রজাতির আমের বাগানগুলি মুকুলে ভরে গিয়েছে ৷

এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া অত্যন্ত অনুকূল ৷ দিনের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে 25 থেকে 27 ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ৷ রাতের তাপমাত্রাও 13 থেকে 17 ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ৷ দিনে হালকা পশ্চিমা বাতাসও বইছে ৷ এই আবহাওয়া পেয়ে মালদার আম বাগানগুলি সঠিক সময়ে মুকুলে ভরে গিয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, এখনও পর্যন্ত মুকুলের গড়নও বেশ ভালো ৷ জেলা উদ্যানপালন দফতরের আশা, আবহাওয়া সঙ্গ দিলে এবার জেলায় চার লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি আমের ফলন হতে পারে ৷

মালদায় চার লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা প্রশাসনের (নিজস্ব চিত্র)

একই আশা করছেন আমচাষিরাও ৷ আর ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, তাঁরা এবার অন্তত পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করছেন ৷ তবে এর মধ্যেও একটি প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে ৷ গত ক’বছর ধরে মালদার আম বিদেশে রফতানি হচ্ছে ৷ এখানকার আমের স্বাদ বিদেশে প্রশংসিতও হচ্ছে ৷ কিন্তু যেভাবে মালদার আম বিদেশে রফতানি হওয়ার কথা ছিল, সেটা হচ্ছে না ৷ কারণ, আমচাষিদের যথেচ্ছ রাসায়নিক কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ ৷ সঙ্গে রয়েছে রাসায়নিক সারের অবাঞ্ছিত ব্যবহারও ৷ এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে ৷

জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক জানাচ্ছেন, "মালদা জেলায় 31 হাজার 812 হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির আমচাষ হয় ৷ এবার আবহাওয়া আমচাষের পক্ষে অনুকূল রয়েছে ৷ অনেক প্রজাতির আমের মুকুল বেরিয়ে গিয়েছে ৷ এই সময় আমরা আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা আর কুয়াশার প্রকোপকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই ৷ এবার সেই অবস্থা নেই ৷ দিনে পর্যাপ্ত রোদ হচ্ছে ৷ তাপমাত্রা খানিকটা বেড়েছে ৷ মুকুল বেরিয়ে আসার জন্য 27 ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন ৷ এখন সেটাই রয়েছে ৷ আমরা চাষিদের পরামর্শ দিই, চারাগাছে নিয়মিত সেচ দিতে হবে ৷"

কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, রানিপসন্দ, পেয়ারাফুলি প্রভৃতি জলদি প্রজাতির আমগাছে মুকুল আসার সময় শোষক পোকার উপদ্রব দেখা যায় ৷ এই পোকা মুকুলের রস খেয়ে মুকুলকে শুকনো করে দেয় ৷ এর সঙ্গে কুয়াশা কিংবা হালকা বৃষ্টি হলে মুকুলে মধু ধরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ৷ তাতে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হয় ৷ চাষিদের জন্য আমাদের পরামর্শ, ম্যাঙ্গো হপার দূর করার জন্য যে কোনও সিস্টেমিক কীটনাশক স্টিকারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ৷ বিষের শিশির গায়ে তার মাত্রা লেখা থাকে ৷ সেই অনুযায়ী জলে মেশাতে হবে ৷ আর মুকুলে মধু হয়ে গেলে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে৷ এক্ষেত্রেও জলের সঙ্গে স্টিকার মেশাতে হবে ৷ জেট বা ফ্রুট স্প্রেয়ার দিয়ে আমবাগানে ওষুধ স্প্রে করতে হবে ৷"

ETV BHARAT
গাছে গাছে ঝেঁপে বেরিয়েছে মুকুল (নিজস্ব চিত্র)

গতবারের তুলনায় এবার অনেকটাই ভালো ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর ৷ তাঁর কথায়, "গত বছর জেলায় আমের ফলন অনেকটা কম ছিল ৷ মাত্র 2 লাখ 10-12 হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছিল ৷ এবার এখনও পর্যন্ত যা আবহাওয়া তাতে আমাদের আশা, এই মরশুমে আমের উৎপাদন 3 লাখ 75 হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে ৷"

45 বিঘা জমিতে আম চাষ করছেন শ্যামাপ্রসাদ সিংহ ৷ তিনি বলছেন, "গতবার আমের ফলন ঠিকমতো হয়নি ৷ এবার এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া চাষের অনুকূল ৷ এবার ভালো ফলনের আশা করছি ৷ আবহাওয়া বিরূপ না হলে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার ভালো ফলন হবে ৷ মুকুল বেরোতে শুরু করেছে ৷ মাঘ মাসের মধ্যে মুকুল বেরিয়ে গেলে ফলন খুব ভালো হয় ৷ শুধু ফাল্গুনে বৃষ্টি না হলেই হল ৷ ওই সময় বৃষ্টি হলে আমের ফুল নষ্ট হয়ে যায় ৷ এখন মুকুলকে ঠিক রাখতে আমরা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগ করছি ৷ সব ঠিক থাকলে আমাদের আশা, গতবারের ক্ষতি এবার পুষিয়ে যাবে ৷"

ETV BHARAT
আশায় বুক বাঁধছেন আমচাষিরা (নিজস্ব চিত্র)

নিজের প্রায় 50 বিঘা আমবাগানে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে আমচাষ করেন তরুণকুমার সিংহ ৷ তিনি জানান, "আমার নিজের বাগান ৷ নিজেই চাষ করি ৷ আবহাওয়া বিরূপ না হলে আর ফুলে বৃষ্টি না পড়লে এবার খুব ভালো আম পাওয়া যাবে ৷ গতবার ফলন খুব কম হয়েছিল ৷ আমের দাম পেয়েছিলাম, কিন্তু লাভ করতে পারিনি ৷ আমের ফলন ভালো না হলে কোনও চাষিই লাভ করতে পারে না ৷ এখনও পর্যন্ত মুকুলের যা শক্তি দেখছি, তাতে চিন্তার কিছু নেই ৷ মুকুল বেরোচ্ছেও পর্যাপ্ত ৷ সব ঠিক থাকলে আমরা গতবারের লোকসান এবার মুছে ফেলব ৷"

জৈব কীটনাশক ব্যবহারের গুরুত্বের কথা বলে তিনি আরও বলেন, "মালদার আমের বাজারদর এখন আগের মতো নেই ৷ এর কারণ, চাষিরা এখন জৈব পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহী নন ৷ আমরা এনিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছি ৷ জৈব কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে বলছি ৷ কিন্তু সবাই তাতে উৎসাহী নন ৷ এরই প্রভাব পড়ছে মালদার আমের দামে ৷"

ETV BHARAT
চার লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা (নিজস্ব চিত্র)

উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টরের মতে, "মালদায় যে পরিমাণ আমের উৎপাদন হয়, তার খুব সামান্য অংশই বিদেশে রফতানি হয় ৷ এর মূল কারণ, এখানকার উৎপাদিত আমে রাসায়নিকের প্রভাব ৷ সেকারণে অনেক দেশই মালদার আম আমদানি করতে রাজি হয় না ৷ বিদেশে আম রফতানি করতে হলে চাষিকে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে ৷ আমের বাগানে যেমন গোবর সার, পাতাপচা, বিভিন্ন ধরনের খোল কিংবা সবুজ সবজি থেকে উৎপন্ন সার প্রয়োগ করতে হবে, তেমনই জৈব কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে ৷ তবে দেশীয় বাজারে বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় রাসায়নিক সার ও বিষ ব্যবহার করা যায় ৷"

চাষিদের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, "যদি কোনও চাষি রাসায়নিক ছেড়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে চান, সঠিক পরিমাণ আম উৎপন্ন করতে তাঁর কয়েক বছর লাগতে পারে ৷ তাই আমরা বলি, প্রতি বছর রাসায়নিকের পরিমাণ কমাতে শুরু করে একসময় পুরোপুরি বন্ধ করলে ভালো হয় ৷ এতে চাষির উৎপাদন খুব একটা ব্যহত হবে না ৷ সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে জৈব পদ্ধতিতেও ভালো উৎপাদন হবে ৷"

মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলছেন, "গত বছর আমের মুকুল ফোটার সময় আবহাওয়ার তারতম্য ছিল ৷ এবার আবহাওয়া আমচাষের অনুকূলে ৷ জেলার প্রতিটি ব্লকের আমবাগানেই খুব ভালো মুকুল এসেছে ৷ এখনও পর্যন্ত যা আবহাওয়া, তাতে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমরা ভালো ফলনের আশা করছি ৷ অনেক ঝড়ঝাপটা আসতে বাকি ৷ কিন্তু সব ঠিক থাকলে এবার পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপন্ন হওয়া সম্ভব ৷ এতে মালদা ও আশেপাশের জেলাগুলির অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে ৷ ভালো ফলন হলে আমচাষিদের সঙ্গে আমরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হব ৷"

মালদা, 6 ফেব্রুয়ারি: ফলের রাজা আম ৷ গরমের এই রসালো ফলে প্রাণের আরাম, জিভের তৃপ্তি ৷ আর এই আমের জন্য এবছর এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া এতটাই সদয় যে, রেকর্ড ফলনের আশায় বুক বাঁধছেন চাষিরা ৷ মালদার আমের সুখ্যাতি জগৎজোড়া ৷ জেলার লক্ষ্মণভোগ, ফজলি, ক্ষীরসাপাতি অনেক আগেই জিআই ট্যাগ পেয়েছে ৷ এবার জেলায় মাঘ মাসেই বিভিন্ন প্রজাতির আমের বাগানগুলি মুকুলে ভরে গিয়েছে ৷

এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া অত্যন্ত অনুকূল ৷ দিনের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে 25 থেকে 27 ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ৷ রাতের তাপমাত্রাও 13 থেকে 17 ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ৷ দিনে হালকা পশ্চিমা বাতাসও বইছে ৷ এই আবহাওয়া পেয়ে মালদার আম বাগানগুলি সঠিক সময়ে মুকুলে ভরে গিয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, এখনও পর্যন্ত মুকুলের গড়নও বেশ ভালো ৷ জেলা উদ্যানপালন দফতরের আশা, আবহাওয়া সঙ্গ দিলে এবার জেলায় চার লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি আমের ফলন হতে পারে ৷

মালদায় চার লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা প্রশাসনের (নিজস্ব চিত্র)

একই আশা করছেন আমচাষিরাও ৷ আর ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, তাঁরা এবার অন্তত পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করছেন ৷ তবে এর মধ্যেও একটি প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে ৷ গত ক’বছর ধরে মালদার আম বিদেশে রফতানি হচ্ছে ৷ এখানকার আমের স্বাদ বিদেশে প্রশংসিতও হচ্ছে ৷ কিন্তু যেভাবে মালদার আম বিদেশে রফতানি হওয়ার কথা ছিল, সেটা হচ্ছে না ৷ কারণ, আমচাষিদের যথেচ্ছ রাসায়নিক কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ ৷ সঙ্গে রয়েছে রাসায়নিক সারের অবাঞ্ছিত ব্যবহারও ৷ এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে ৷

জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক জানাচ্ছেন, "মালদা জেলায় 31 হাজার 812 হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির আমচাষ হয় ৷ এবার আবহাওয়া আমচাষের পক্ষে অনুকূল রয়েছে ৷ অনেক প্রজাতির আমের মুকুল বেরিয়ে গিয়েছে ৷ এই সময় আমরা আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা আর কুয়াশার প্রকোপকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই ৷ এবার সেই অবস্থা নেই ৷ দিনে পর্যাপ্ত রোদ হচ্ছে ৷ তাপমাত্রা খানিকটা বেড়েছে ৷ মুকুল বেরিয়ে আসার জন্য 27 ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন ৷ এখন সেটাই রয়েছে ৷ আমরা চাষিদের পরামর্শ দিই, চারাগাছে নিয়মিত সেচ দিতে হবে ৷"

কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, রানিপসন্দ, পেয়ারাফুলি প্রভৃতি জলদি প্রজাতির আমগাছে মুকুল আসার সময় শোষক পোকার উপদ্রব দেখা যায় ৷ এই পোকা মুকুলের রস খেয়ে মুকুলকে শুকনো করে দেয় ৷ এর সঙ্গে কুয়াশা কিংবা হালকা বৃষ্টি হলে মুকুলে মধু ধরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ৷ তাতে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হয় ৷ চাষিদের জন্য আমাদের পরামর্শ, ম্যাঙ্গো হপার দূর করার জন্য যে কোনও সিস্টেমিক কীটনাশক স্টিকারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ৷ বিষের শিশির গায়ে তার মাত্রা লেখা থাকে ৷ সেই অনুযায়ী জলে মেশাতে হবে ৷ আর মুকুলে মধু হয়ে গেলে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে৷ এক্ষেত্রেও জলের সঙ্গে স্টিকার মেশাতে হবে ৷ জেট বা ফ্রুট স্প্রেয়ার দিয়ে আমবাগানে ওষুধ স্প্রে করতে হবে ৷"

ETV BHARAT
গাছে গাছে ঝেঁপে বেরিয়েছে মুকুল (নিজস্ব চিত্র)

গতবারের তুলনায় এবার অনেকটাই ভালো ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর ৷ তাঁর কথায়, "গত বছর জেলায় আমের ফলন অনেকটা কম ছিল ৷ মাত্র 2 লাখ 10-12 হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছিল ৷ এবার এখনও পর্যন্ত যা আবহাওয়া তাতে আমাদের আশা, এই মরশুমে আমের উৎপাদন 3 লাখ 75 হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে ৷"

45 বিঘা জমিতে আম চাষ করছেন শ্যামাপ্রসাদ সিংহ ৷ তিনি বলছেন, "গতবার আমের ফলন ঠিকমতো হয়নি ৷ এবার এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া চাষের অনুকূল ৷ এবার ভালো ফলনের আশা করছি ৷ আবহাওয়া বিরূপ না হলে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার ভালো ফলন হবে ৷ মুকুল বেরোতে শুরু করেছে ৷ মাঘ মাসের মধ্যে মুকুল বেরিয়ে গেলে ফলন খুব ভালো হয় ৷ শুধু ফাল্গুনে বৃষ্টি না হলেই হল ৷ ওই সময় বৃষ্টি হলে আমের ফুল নষ্ট হয়ে যায় ৷ এখন মুকুলকে ঠিক রাখতে আমরা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগ করছি ৷ সব ঠিক থাকলে আমাদের আশা, গতবারের ক্ষতি এবার পুষিয়ে যাবে ৷"

ETV BHARAT
আশায় বুক বাঁধছেন আমচাষিরা (নিজস্ব চিত্র)

নিজের প্রায় 50 বিঘা আমবাগানে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে আমচাষ করেন তরুণকুমার সিংহ ৷ তিনি জানান, "আমার নিজের বাগান ৷ নিজেই চাষ করি ৷ আবহাওয়া বিরূপ না হলে আর ফুলে বৃষ্টি না পড়লে এবার খুব ভালো আম পাওয়া যাবে ৷ গতবার ফলন খুব কম হয়েছিল ৷ আমের দাম পেয়েছিলাম, কিন্তু লাভ করতে পারিনি ৷ আমের ফলন ভালো না হলে কোনও চাষিই লাভ করতে পারে না ৷ এখনও পর্যন্ত মুকুলের যা শক্তি দেখছি, তাতে চিন্তার কিছু নেই ৷ মুকুল বেরোচ্ছেও পর্যাপ্ত ৷ সব ঠিক থাকলে আমরা গতবারের লোকসান এবার মুছে ফেলব ৷"

জৈব কীটনাশক ব্যবহারের গুরুত্বের কথা বলে তিনি আরও বলেন, "মালদার আমের বাজারদর এখন আগের মতো নেই ৷ এর কারণ, চাষিরা এখন জৈব পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহী নন ৷ আমরা এনিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছি ৷ জৈব কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে বলছি ৷ কিন্তু সবাই তাতে উৎসাহী নন ৷ এরই প্রভাব পড়ছে মালদার আমের দামে ৷"

ETV BHARAT
চার লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা (নিজস্ব চিত্র)

উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টরের মতে, "মালদায় যে পরিমাণ আমের উৎপাদন হয়, তার খুব সামান্য অংশই বিদেশে রফতানি হয় ৷ এর মূল কারণ, এখানকার উৎপাদিত আমে রাসায়নিকের প্রভাব ৷ সেকারণে অনেক দেশই মালদার আম আমদানি করতে রাজি হয় না ৷ বিদেশে আম রফতানি করতে হলে চাষিকে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে ৷ আমের বাগানে যেমন গোবর সার, পাতাপচা, বিভিন্ন ধরনের খোল কিংবা সবুজ সবজি থেকে উৎপন্ন সার প্রয়োগ করতে হবে, তেমনই জৈব কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে ৷ তবে দেশীয় বাজারে বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় রাসায়নিক সার ও বিষ ব্যবহার করা যায় ৷"

চাষিদের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, "যদি কোনও চাষি রাসায়নিক ছেড়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে চান, সঠিক পরিমাণ আম উৎপন্ন করতে তাঁর কয়েক বছর লাগতে পারে ৷ তাই আমরা বলি, প্রতি বছর রাসায়নিকের পরিমাণ কমাতে শুরু করে একসময় পুরোপুরি বন্ধ করলে ভালো হয় ৷ এতে চাষির উৎপাদন খুব একটা ব্যহত হবে না ৷ সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে জৈব পদ্ধতিতেও ভালো উৎপাদন হবে ৷"

মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলছেন, "গত বছর আমের মুকুল ফোটার সময় আবহাওয়ার তারতম্য ছিল ৷ এবার আবহাওয়া আমচাষের অনুকূলে ৷ জেলার প্রতিটি ব্লকের আমবাগানেই খুব ভালো মুকুল এসেছে ৷ এখনও পর্যন্ত যা আবহাওয়া, তাতে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমরা ভালো ফলনের আশা করছি ৷ অনেক ঝড়ঝাপটা আসতে বাকি ৷ কিন্তু সব ঠিক থাকলে এবার পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপন্ন হওয়া সম্ভব ৷ এতে মালদা ও আশেপাশের জেলাগুলির অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে ৷ ভালো ফলন হলে আমচাষিদের সঙ্গে আমরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হব ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.