সন্দেশখালি, 10 ফেব্রুয়ারি: শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ ওরফে শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দার - গত কয়েকদিনে উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালিতে স্থানীয়দের বিক্ষোভ বারবার উঠে এসেছে এই তিনজন তৃণমূল কংগ্রেস নেতার নাম ৷ এই তিনজনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন গ্রামের মহিলারা ৷ তার পরও শনিবার শাসক দলের তরফে ছ’বছরের সাসপেন্ড করা হয়েছে শুধুমাত্র উত্তম সর্দারকে ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন ? উত্তমকে শাস্তি দেওয়া হলেও কেন ছাড় দেওয়া হল শেখ শাহজাহান ও শিবু হাজরাকে ?
উল্লেখ্য, গত বুধবার থেকে সন্দেশখালিতে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ৷ সেই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলাকার মহিলারা ৷ শনিবার প্রশাসনের তরফে 144 ধারা জারি হওয়ায় বিক্ষোভ দেখা যায়নি ৷ তবে গত তিনদিন বিক্ষোভের জেরে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সন্দেশখালিতে ৷ তিন জনের বিরুদ্ধেই হাজারো অভিযোগ গ্রামবাসীদের । তাঁদের অভিযোগ, দিনের পর দিন শাহজাহান, শিবু, উত্তম ও তাঁর সহযোগীরা গ্রামবাসীদের শোষণ ও জুলুমবাজি করে নিজেদের সম্পত্তির বহর বাড়িয়েছেন ৷ গ্রামবাসীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ, গ্রামবাসীদের বঞ্চিত করে উন্নয়নের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এই তিনজনের বিরুদ্ধে ৷
গত তিনদিন এলাকার আদিবাসী মহিলারা তাই তাঁদের গ্রেফতার চেয়ে পথে নেমে সরব হন ৷ কিন্তু পুলিশ এখনও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি ৷ তারই মধ্যে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দারকে ছ'বছরের জন্য সাসপেন্ড করল শাসক শিবির । উত্তম সর্দারের কাঁধে সন্দেশখালি অঞ্চলে তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব ছিল ৷ পাশাপাশি তিনি জেলা পরিষদের সদস্যও বটে । ছ'বছরের জন্য দল সাসপেন্ড করায় শনিবার থেকে তিনি আর সন্দেশখালি অঞ্চলে তৃণমূলের সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না ।
অনেকে বলছেন, গ্রামবাসীদের ক্ষোভ প্রশমনে উত্তমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল ৷ কিন্তু তাহলে শাহজাহান ও শিবুকে ছাড় দেওয়া হল কেন ? শেখ শাহজাহান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা শিবু হাজরার বিরুদ্ধেও তো একাধিক অভিযোগ রয়েছে । শাহজাহানের মতো শিবুও তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন । সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতির পাশাপাশি জেলা পরিষদের সদস্যও শিবু হাজরা ।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে দল কড়া পদক্ষেপ নিতে পারলেও বাকি দু'জন শেখ শাহজাহান এবং শিবু হাজরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দু'বার ভাবতে হচ্ছে শাসক শিবিরকে ! সামনেই লোকসভা নির্বাচন । তাই, শাহজাহান এবং শিবুর বিরুদ্ধে কড়া কোনও পদক্ষেপ নিলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ভোটে । তাছাড়া ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রেও সন্দেশখালির দাপুটে এই দুই তৃণমূল নেতাকে কাজে লাগতে পারে ঘাসফুল শিবির । সেই কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে এই বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে ।
তবে, বিরোধীরা একে লোকদেখানো বলেই মনে করছে । এই নিয়ে সিপিএমের উত্তর 24 পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, "শাহজাহান ও শিবু হাজরাকে বাঁচাতেই বলির পাঁঠা করা হয়েছে উত্তম সর্দারের । গোটাটাই নাটক ছাড়া আর কিছুই নয় । সাসপেন্ড কেন ! সাহস থাকলে দলের ওই তিন নেতাকে গ্রেফতার করে দেখাক তৃণমূল । তাহলেই বুঝব ওদের দম আছে ।"
এই বিষয়ে বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার ইনচার্জ শংকর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মূলে তো শাহজাহান, শিবু, উত্তম । তিনজনই রয়েছে । তাহলে শুধু উত্তম কেন ? তার মানে গোটাটাই লোকদেখানো । আমাদের ধারণা সন্দেশখালি বিক্ষোভ কাণ্ডের ইস্যু ঘোড়াতেই 'সাসপেন্ড' ইস্যু সামনে আনা হয়েছে । যাতে মানুষের মধ্যে সহানুভূতি তৈরি করা যায় । এভাবে সন্দেশখালির মানুষকে বোকা বানানো যাবে না ।"
যদিও এই নিয়ে সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি । ফলে, বিধায়কের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি এই বিষয়ে ।
আরও পড়ুন: