কলকাতা, 30 অক্টোবর: কলকাতা পুরনিগমের নিকাশির কাজের জন্য গত অগস্ট মাস থেকে টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ রুটে বন্ধ রয়েছে ট্রাম চলাচল ৷ সেই রুটকে সচল করতে এবার লাইন মেরামতের কাজে হাত দিতে চলেছে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট । তবে এই রুটের তিনটি সচল ট্রাম অবহেলায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকার ফলে, চুরি হয়েছে সেগুলির একাধিক দামি যন্ত্রাংশ । তাই লাইন ঠিক হলেও ট্রাম পরিষেবা আদেও শুরু করা যাবে কি না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন ।
কখনও বলা হয়েছে যে ট্রাম যানজট সৃষ্টি করে, আবার কখনও ব্রিজের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বলি হয়েছে ট্রাম, কখনও আবার বিভিন্ন রুটে নিয়মিত যাত্রী না মেলার খেসারত দিতে হয়েছে ট্রামকে ৷ এহেন আরও একাধিক অভিযোগ ও যুক্তির সৌজন্যে ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে ট্রামের সংখ্যা । বন্ধ হয়েছে একের পর এক রুট ।
2017 সাল পর্যন্ত শহর কলকাতায় নয় নয় করে 37টি রুটে রমরমিয়ে চলত ট্রাম । সেই সংখ্যা গত অগস্ট মাস পর্যন্ত এসে ঠেকে তিনটিতে । সেই তিনটি রুট হল: 24/29 (টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ), 25 নম্বর রুট (গড়িয়াহাট-ধর্মতলা) ও 5 নম্বর রুট (শ্যামবাজার-ধর্মতলা)। তবে বর্তমানে দুটি রুটে চলছে ট্রাম: 25 নম্বর রুট (গড়িয়াহাট-ধর্মতলা) ও 5 নম্বর রুট (শ্যামবাজার-ধর্মতলা)।
টালিগঞ্জ রেলব্রিজ ও রাসবিহারী এভিনিউয়ের কিছু জায়গা জুড়ে কলকাতা পুরনিগমের নিকাশি কাজের জন্য গত 1 অগস্ট থেকে টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ বা 24/29 রুটে ট্রাম চলাচল বন্ধ হয়ে রয়েছে । তবে কাজ শেষ হওয়ার পর পুরনিগম পুনরায় ট্রাম লাইনটিকে মেরামত করে দিলেও দেখা যায় যে, রাসবিহারী এভিনিউয়ের কাছে ট্রাম লাইন কিছুটা হেলে রয়েছে । তাই ওই রুটকে পুনরায় মেরামত না-করে হেলে থাকা লাইনের উপর দিয়ে ভারী ট্রাম চালানো সম্ভব নয় ।
ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য দীপ দাস জানান যে, অগস্ট থেকে টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ লাইনটি কেএমসি কাজের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলে, ওই রুটের তিনটি সচল ট্রামকে বালিগঞ্জ বা টালিগঞ্জ ডিপোতে না-রেখে বিজন সেতুর নীচে যে উন্মুক্ত ট্রামলাইনটি রয়েছে, সেখানে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । অর্থাৎ তিনটে সচল ট্রাম কোনওরকম নজরদারি ছাড়াই প্রায় আড়াই মাসের উপর ঝড়-জল-বৃষ্টিতে ওখানেই পড়েছিল ৷ পরিত্যক্ত হয়ে থাকার ফলে একটি ট্রামের গভর্নর (এই যন্ত্রটি ট্রামের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করে) চুরি হয়ে যায় । দীপ দাস আরও বলেন, "বিষয়টি নজরে আসায় আমি এসপ্ল্যানেড কন্ট্রোল রুমে জানিয়েছিলাম । এরপরেই ট্রামগুলোকে টালিগঞ্জ ডিপোতে নিয়ে যাওয়া হয় ।"
ট্রাম গবেষক ও ট্রামপ্রেমী তথা ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবাশিস ভট্টাচার্য দাবি করেন যে, "এর আগেও ট্রামলাইনে এই ধরনের নিকাশি কাজ হয়েছিল, তবে তখন ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করতে হয়নি ৷ বরং ট্রাম চলেছে আবার পাশাপাশি কাজও চলেছে । এমনকি মেট্রোরেলের কাজের সময়ও ট্রামের পরিষেবার ব্যাঘাত না ঘটিয়েই কাজ চলেছে । কিন্তু টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ রুটে তেমনটা হল না । এরপর পুজো এসে গেল । পুজোর আগের ক'টা দিন কেনাকাটার জন্য এবং পুজোর সময় এই রুটে ব্যাপক ভিড় হয় । বিশেষ করে এই সময় মহিলা যাত্রীরা অনেকাংশেই ট্রাম ব্যবহার করতেন । কিন্তু পরিকল্পিতভাবে যাতে এইসময় যাত্রীরা ট্রাম ব্যবহার করতে না-পারেন, তাই এই রুটে ট্রাম চালাতে বিলম্ব করা হচ্ছে । তবে এই রুটটিকে মেরামত করা হবে বলে সরকারি টেবিলে চিঠি চালাচালি হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে ।"
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে পুরো রুটটি পরিদর্শন করা হয়েছে । দ্রুত এই রুটে ট্রামলাইন মেরামতের কাজ শুরু হবে বলেই খবর । শহরের আর এক ট্রামপ্রেমী সাগ্নিক গুপ্ত জানিয়েছেন যে, যেহেতু 24/29 রুটেই স্কুল, কলেজ, বাজার পড়ে, তাই গোড়া থেকেই এই রুটটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও খুবই লাভজনক । আর দুর্গাপুজো এবং কালীপুজোর সময় যাত্রী সংখ্যা আরও বেড়ে যায় ।
প্রথমে কথা ছিল, পুরনিগমের কাজের জন্য 15 দিন বন্ধ থাকবে এই রুটটি । তবে সেই 15দিন গিয়ে দাঁড়ায় তিন মাসের কাছাকাছি সময়ে । ইতিমধ্যে কালীঘাট ট্রাম ডিপোটি পুনরায় চালু করার কথা হওয়ার পরেও ট্রাফিক পুলিশের অনুমতি না মেলায় সেটা আর খোলা হয়নি । এই রুটটি আবার কবে চালু হবে সেই নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কন্ট্রোল রুমে অনুসন্ধান করে অজস্র ফোনও আসছে ।
ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানির এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে, যেহেতু কলকাতা পুরনিগমের কাজের জন্য এই রুটটি বন্ধ করা হয়েছিল, তাই যতদিন না পুরনিগমের থেকে এই লাইনে ট্রাম চালানোর সবুজ সংকেত মিলছে, ততদিন ট্রাম কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই ।
প্রসঙ্গত, 24/29 একটি বাই রুট অর্থাৎ 24 নম্বর রুট বালিগঞ্জ থেকে এসপ্ল্যানেড এবং 29 নম্বর রুট টালিগঞ্জ থেকে এসপ্ল্যানেড হয়ে এই 24/29 নম্বর রুটটি চালু হয় । এই রুটটি গোড়া থেকে ছিল না ৷ 1981 সালে এই রুটটিতে ট্রাম চলাচল শুরু হয় ৷ যখন চৌরঙ্গী ট্রাম লাইনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখনই চালু করা হয় 24/29 রুটটি ৷