সোদপুর, 12 অগস্ট: আরজি কর কাণ্ডে আরও কড়া অবস্থান নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আগেই জানান, ঘটনায় সিবিআইকে তদন্ত ভার দিতে তাঁর আপত্তি নেই ৷ এবার আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে তিনি জানালেন, পুলিশ সাতদিনের মধ্যে কুলকিনারা তা করতে পারলে তদন্তের ভার যাবে সিবিআইয়ের হাতে ৷
নির্যাতিতার সোদপুরের বাড়িতে গিয়ে সোমরার মমতা বলেন, "রবিবার পর্যন্ত পুলিশ যদি কোনও কুলকিনারা না-করতে পারে তাহলে সিবিআইয়ের হাতে আমরা তদন্ত তুলে দেব ৷" আরজি কর হাসপাতালের মহিলা পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সোমবার সোদপুরের বাড়িতে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ পুলিশের পদস্থ কর্তারা। হাজির ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষও।সেখান থেকে বেরিয়ে পুলিশকে তদন্তের সময়সীমা বেঁধে দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
পুলিশকে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন মমতা ৷ ইতিমধ্যে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এই মামলায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এমতাবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "যখন ঘটনা ঘটে তখন আমি ঝাড়গ্রামে ছিলাম। আমাকে যখন পুলিশ কমিশনের খবরটা দেন তখন আমি তাঁকে বলি এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। এর পিছনে যেই দোষী হোক, তাকে দ্রুত শাস্তি দিতে হবে। আমরা চাই, ফাস্ট ট্রাক কোর্টে বিচার করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক।" কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিষয়টি বিচার হলে দ্রুত মামলার মীমাংসা হবে ৷ তাতে আমরা অপরাধীর ফাঁসির দাবি জানাব।"
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "কিছু লোক এখনও সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে রয়েছেন। তারা সামাজিক মূল্যবোধ ভুলে গিয়েছেন।" এদিন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "যেখানে এই ঘটনা ঘটে সেখানে নার্সরা ছিলেন, তাঁদের সিকিউরিটিরাও ছিলেন। সবাই ছিলেন তারপরেও কী করে এই ঘটনা ঘটল আমি বুঝতে পারছি না। পরিবারের তরফ থেকে গত কয়েক দিন ধরে বারবার বলা হচ্ছিল এই ঘটনার পিছনে ভিতরের একাংশের হাত রয়েছে।"
এদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, "ভিতরের কেউ যদি থাকে কারও প্রতি যদি সন্দেহ হয়, ওর বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে সকলের সঙ্গেই কথা বলা হবে। এমনকী যিনি প্রথম বাড়িতে ফোন করেছিলেন তাঁর সঙ্গেও কথা বলা হবে। আজ প্রিন্সিপাল নিজে ইস্তফা দেন ৷ আমরা তাঁকে অন্য জায়গায় সরিয়ে দিয়েছি। এমএসভিপিকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধানকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।" একইসঙ্গে পুলিশ পোস্টে যে এসিপি ছিলেন তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, "ডগ স্কোয়াড, ভিডিয়ো থেকে শুরু করে, ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট সকলকে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য দোষীরা যাতে শাস্তি পায়। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করবে। পুলিশ যদি রবিবার পর্যন্ত এই ঘটনার কুলকিনারা করতে না-পারে, তাহলে এই মামলা আর পুলিশের কাছে রাখা হবে না। সরাসরি এই মামলাটি সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।"
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, "আমার এখানে লেনাদেনা কিছু নেই। কিন্তু সিবিআইয়ের সাফল্যের হার খুব কম। তাপসী মালিকের কেসে আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। নন্দীগ্রামে গুলিতে 14 জনের মৃত্যুর কিনারা আজও হয়নি। এই কেসগুলো সিবিআইয়ের হাতে ছিল। এমনকী রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার চুরির কোনও বিচার হয়নি।"
মমতা জানান, তবুও মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এই মামলা0 সিবিআইকে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। যদিও আমি মনে করি কলকাতা পুলিশ দেশের মধ্যে সেরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অফিসারকেই লাগানো হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে যদি পুলিশ কোনও কুলকিনারা করতে না-পারে তাহলে এই কেস সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
- এদিন দুপুর একটার আগে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের কনভয় এসে পৌঁছয় মৃতের বাড়ির দোরগোড়ায়। এরপর তিনি হেঁটেই প্রবেশ করেন নিহত চিকিৎসকের বাড়িতে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর আসা নিয়ে সোদপুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল পুলিশ প্রশাসনের তরফে । সূত্রের খবর, এদিন মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে মৃত তরুণী চিকিৎসকের বাবাকে ফোন করেন। কথা বলে তাঁর সোদপুরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বাড়িতে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মার একান্তে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
- সেখানে ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি-সহ একাধিক বিষয়ে উঠে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসকের বাবা, মা চেয়েছেন মেয়ের সুবিচার। সেই সুবিচার দেওয়া হবে বলেও পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।