কলকাতা,9 জুন: রবিবার শপথ নিল নতুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আগামী পাঁচ বছর দেশের ভালোমন্দ কারা ঠিক করবেন, তা মোটামুটি স্পষ্ট হল রবি-সন্ধ্যায়। পাশপাশি বঙ্গ বিজেপির অধিনায়ক বদলের স্পষ্ট ইঙ্গিতও মিলল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্যকে হারিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিজের জায়গা করে নিলেন সুকান্ত মজুমদার । এই প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পেল বালুরঘাট।
আর এই বেনজির ঘটনা থেকেই বঙ্গ বিজেপির দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হল। 'এক নেতা এক পদ' নীতি মেনে চলা বিজেপিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলে আর দলীয় পদে থাকা যায় না। খোদ অমিত শাহও দ্বিতীয় মোদি মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই সভাপতি পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। সুকান্তর ক্ষেত্রেও তাই হবে। মোদি মন্ত্রিসভায় ফিরলেন জেপি নাড্ডাও। মানে শুধু এ রাজ্যে নয়, কেন্দ্রীয় বিজেপিতেও বদল আসছে ।
বাংলায় বিজেপির ভবাডুবির পর থেকেই সভাপতি-সহ সাংগঠনিক স্তরে বিভিন্ন রদবদলের দাবি উঠতে শুরু করেছে। সুকান্ত মন্ত্রী হওয়ার পর সেই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। দলের একটা অংশ চাইছে আরও একবার দিলীপ ঘোষকে রাজ্য সভাপতি পদে ফিরিরে আনতে। তাঁদের যুক্তি, দিলীপের সময় দল পরপর দু'টি লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য পায়।
পাশপাশি দিলীপ দীর্ঘদিন আরএসএসের প্রচারক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে ছিলেন। সাধারণত আরএসএস থেকে আসা নেতাদেরই সভাপতি পদে বসায় বিজেপি। পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বলে বিজেপিতে একটি পদ আছে। দল পরিচালন থেকে শুরু করে যে কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার থাকে এই দু'জনের।
2015 সালে দিলীপকে বঙ্গ বিজেপিতে নিয়ে আসা হয় আরএসএসের কথাতেই । দলের গঠনতন্ত্র মেনে পরপর দু'বার রাজ্য সভাপতি হিসেবে 3 বছর করে মোট 6 বছর দায়িত্ব সামলান দিলীপ। 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর তাঁর জায়গায় আনা হয় সুকান্তকে। কয়েক মাসের মধ্যেই সুকান্তর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। বিজেপির সংবিধান অনুসারে তাঁকে আরও একবার সভাপতি করা যেতে পারে । তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে সেটা চাইছেন না, তা মোটের উপর স্পষ্ট। বিজেপির রাজ্য সভাপতি বদল কার্যত সময়ের অপেক্ষা। এখানেই প্রশ্ন, সুকান্তর বদলি কে হতে পারেন ? দিলীপকে যারা চাইছেন না তাঁদের অনেকের পছন্দ শুভেন্দু অধিকারী।
তবে শুভেন্দুর জন্য রাজ্য সভাপতি হওয়া খুব সহজ হবে না মোটেই। তিনি আরএসএস থেকে আসেননি । এটা সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা। তাছাড়া তৃণমূল থেকে আসা দলবদলুর হাতে সংগঠন ছাড়া হবে কি না, সেই প্রশ্নও বিজেপি অন্দরে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তার উপর নির্ভর করেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা । দলের অনেকেই মনে করেন, প্রার্থী নির্বাচনেও শুভেন্দুর কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও সাফল্য আসেনি । এমনিতেই শুভেন্দু বিরোধী দলনেতা। এমতাবস্থায় তাঁকে রাজ্য সভাপতি করলে নতুন বিরোধী দলনেতা খুঁজতে হবে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল। আর তাই সবদিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে বিজেপি।