কলকাতা, 8 জুলাই: উত্তরবঙ্গের কয়েকটি অংশে বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার পর্যালোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এ প্রসঙ্গে আরও একবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হলেন তিনি। গঙ্গার পলি না-তোলা থেকে শুরু করে, রাজ্যকে না-জানিয়ে তিস্তার জলবণ্টন চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার মতো বিষয়ে সোমবার সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তাঁর স্পষ্ট কথা, তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তা কার্য়কর হলে উত্তরবঙ্গের প্রবল ক্ষতি হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পাওয়া যাবে না। তাই জল দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন মমতা।
অন্য একটি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, গঙ্গার ভাঙন কেন্দ্রীয় সরকারের দেখার কথা। তবে গত 10-12 বছর ধরে সেটা তারা দেখছে না। বিগত বছরগুলিতে গঙ্গা ভাঙন নিয়ে ওরা কিছুই করেনি। ফরাক্কাও ড্রেজিং হয়নি। তাঁর কথায়, "বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির সময় আমি সাংসদ ছিলাম । তখন ঠিক হয়েছিল জল দেওয়ার ফলে যাতে কোনও সমস্যা না-হয় তা নিশ্চিত করতে ড্রেজিং করা হবে।"
মমতার দাবি, সেই ড্রেজিং ঠিকমতো হয়নি। তার ফলে ভাঙনে বহু বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। সেই বাড়িগুলি তৈরি করে দেওয়া থেকে শুরু করে এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য 700 কোটি টাকার একটা প্যাকেজ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেন্দ্র সেই টাকা দেয়নি। এই অবস্থায় রাজ্যকে না-জানিয়ে আবারও ফরাক্কা চুক্তির নবীকরণের কথা বলা হচ্ছে । তাঁর আরও দাবি্, ড্রেজিং ঠিকমতো না-হওয়ার কারণে শুধু যে বাংলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিহারও।
শুধু ফরাক্কা চুক্তি নয়, এদিন তিস্তা জলচুক্তি নিয়েও ক্ষোভ শোনা গিয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার আবার বলছে তিস্তার জলও দিয়ে দেওয়া হবে। তিস্তায় কি সেই পরিমাণে জল আছে যে বাংলাদেশকে দিয়ে দেওয়া হবে? যদি এমনটা করা হয় তাহলে উত্তরবঙ্গের একটা লোকও খাবার জল পাবে না।" পাশাপাশি সিকিম 14টা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে বলেও দাবি মমতার । তারাই তিস্তার সব জল নিয়ে নিয়েছে। যখন এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি তৈরি হল তখনই কেন্দ্রীয় সরকারের সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। ওরা জানে সিকিম আর অরুণাচল প্রদেশের বর্ডার কতটা ভয়ানক। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারির কোনও ব্যবস্থা নেই। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। এরপরেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আর এর কারণেই আজকে মানুষকে ভুগতে হচ্ছে বলে জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, "ডিভিসি যখন তখন জল ছেড়ে যায়। আগে ওরা না-জানিয়েই ছাড়ত। এখন আমরা বলে দিয়েছি আমাদের না-জানিয়ে জল ছাড়া যাবে না। তা সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যবশত প্রায় প্রত্যেক বছরই আমাদের খানাকুল ভাসে, আরামবাগ ভাসে, গোঘাট ভাসে। হাওড়ার উদয়নারায়নপুর এবং আমতার কিছু অংশ ভাসে। মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের একটা অংশও ভেসে যায়। মুকুটমণিপুর ড্যাম থেকে জল ছাড়লে বাঁকুড়ার কিছু অংশ ভেসে যায়। ডিভিসির জলে দুর্গাপুর থেকে বীরভূমের একাংশ প্লাবিত হয়। এক্ষেত্রে ডিভিসি রোজ কতটা জল ছাড়ছে আমাকে নিয়মিত রিপোর্ট দিতে হবে। আগে একবারে জল ছেড়ে দেওয়া হতো কেউ দেখার ছিল না।" এখানে ড্রেজিংয়ের কাজ হয় না বলে মমতার অভিযোগ । তাঁর দাবি, ঠিক মতো ড্রেজিং হলে ডিভিসি 2 লক্ষ কিউসেক মেট্রিক টন জল ধরে রাখতে পারে । কিন্তু সেটা হয় না । এর পাশাপাশি রেল নিজের এলাকায় জল জমলে তা সরাতে উদ্যোগ নেয় না বলেও দাবি মমতার ।