মালদা, 22 জুলাই: পাড় ভেঙে সব ছিনিয়ে নিয়েছে গঙ্গা ৷ দিকশূন্যপুরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন ভরত মণ্ডল ৷ আক্ষেপের সুরে তিনি বলছিলেন, "মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওরা গাড়িতে চেপে চলে গেল, আমরা মাটিতে পড়ে আছি ৷" 2014 ঘটা করে কেন্দ্রীয় সরকার নমামি গঙ্গে প্রকল্প আনলেও সেই প্রকল্পের আওতার বিন্দু-বিসর্গ জানে না রতুয়া 1 নং ব্লকের কান্তটোলা গ্রামে ৷ পাড় ভাঙতে ভাঙতে নদীগর্ভে কার্যত গোটা গ্রামটাই ৷ আর শুধুই কি কান্তটোলা, একই অবস্থা মালদার গঙ্গাপাড়ের সমস্ত গ্রামগুলির ৷
ভরত একা নন, ইটিভি ভারতের ক্যামেরার সামনে হতাশা উগরে দিলেন লক্ষ্মীদেবী ৷ তিনি জানালেন, রবিবার মাঝরাতে নদীর গর্ভে চলে গিয়েছে তাঁর ভাইয়ের ঘর ৷ আলো ফুটতেই তিনি চলে আসেন কান্তটোলায় ৷ ঘর সরাতে ব্যস্ত ছিলেন ভাই দুর্যোধন মণ্ডল ৷ সেই কাজে হাত লাগানোর ফাঁকেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন দিদি লক্ষ্মীদেবী ৷
গত বছর ভাঙনে মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছিল পার্শ্ববর্তী শ্রীকান্তটোলা গ্রাম ৷ এখনও বর্ষা সেভাবে শুরু না-হলেও কান্তটোলাও মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার পথে ৷ ভরত মণ্ডল বলছিলেন, "দেড় দশক আগেও গঙ্গা ছিল রাজমহল পাহাড়ের কিনারায় ৷ পুরোনো নদীস্রোত এখনও সেখানেই আছে ৷ কিন্তু পাড় কাটতে কাটতে গঙ্গা এখানে অনেক চওড়া হয়ে গিয়েছে ৷ জমি-জায়গা আগেই নদীতে গিয়েছে ৷ রাতের মধ্যে ভিটেবাড়িটাও চলে গেল ৷"
ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করা ভরত আপাতত বাড়িতেই রয়েছেন ৷ তাই নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আগে ঘরের জিনিসপত্র সরাতে পেরেছেন বলে জানালেন ৷ সেইসঙ্গে ক্ষোভের সুরে বললেন, "সরকার তো কোনও সাহায্য দেবে না, দিতেও পারবে না ৷ নেতা-মাথারা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিতে পারে ৷"
আশির দশকে শুরু গঙ্গার ভয়াল ভাঙন জারি এখনও ৷ অনেক আশার বাণী শুনেছে সেখানে গঙ্গাপাড়ের মানুষ ৷ কিন্তু কেন্দ্র আর রাজ্যের টালবাহানার পর ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা হয়েছিল 'নমামি গঙ্গে' ৷ অথচ ওই প্রকল্পের কাজ কী, সেটা জানে না মালদা-মুর্শিদাবাদের ভাঙন এলাকার মানুষ ৷ নিজেদের অভিজ্ঞতায় তারা শুধু জানেন, ড্রেজিং অথবা শক্ত নদীবাঁধই বাঁচাতে পারে তাদের ৷ কিন্তু তাঁদের কথা শুনবে কে?