কলকাতা, 22 জানুয়ারি: শহরে একের পর এক বহুতল হেলে পড়ার ঘটনা ৷ এবার ট্যাংরায় 11/2 ক্রিস্টোফার রোডে দু’টি বহুতল একে অপরের দিকে হেলে পড়ল ৷ বুধবার সকালের ঘটনায় একটি নির্মীয়মাণ ছয়তলা বিল্ডিং ও পাশের অ্যাপার্টমেন্ট একে অপরের দিকে হেলে পড়েছে ৷ যার জেরে বিল্ডিং দু’টির ছাদ মাথায়-মাথায় ছুঁয়ে গিয়েছে ৷ হেলে পড়া অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আবাসিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷
অভিযোগ, পাশের নির্মীয়মাণ বহুতলটি নিয়ম বহির্ভুতভাবে তৈরি হচ্ছিল ৷ কোনও জায়গা না-ছেড়ে অ্যাপার্টমেন্টের গা-ঘেষে ছ’তলা বিল্ডিংটি তৈরি হচ্ছিল ৷ তার জেরে দু’বছর আগে তৈরি হওয়া বহুতলের ভিত নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে এবং সেটি হেলে পড়েছে ৷ এই ঘটনায় কলকাতা পুরনিগমের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে ৷
ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা ৷ হেলে পড়া অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহুতল দু’টি গত দু’দিন আগেই সামান্য হেলে পড়েছিল ৷ তবে, বুধবার অনেকটাই হেলে পড়েছে দু’টি বিল্ডিং ৷
পুরনিগম সূত্রে খবর, বাড়িটির নকশা, মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট ও নির্মাণে কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছেন কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা ৷ এই ঘটনায় ফের কলকাতা পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাজ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে একাংশ ৷ ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নির্মাণ কাজে ঠিকঠাক নজরদারি করছিলেন কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকরা ৷
এ নিয়ে স্থানীয় 58 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্দীপন সাহা বলেন, "আমার কাছে দু’দিন আগে খবর আসে দু’টি বিল্ডিং হেলে পড়েছে ৷ সেই মতো আমি পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগকে জানাই, যাতে তারা এসে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখেন ৷ কিন্তু, তার আগে আজকে আরও হেলে পড়েছে ৷ তবে, কোন বাড়ি বেআইনিভাবে তৈরি হচ্ছে তার রেকর্ড কউন্সিলরের কাছে থাকে না ৷ সব রেকর্ড বিল্ডিং বিভাগে থাকে ৷ সেখান থেকে সব খতিয়ে দেখে, তারপরেই বলা যাবে নির্মাণ বেআইনি কি না ৷"
তবে, কাউন্সিলরের এই দাবিকে নস্যাৎ করেছেন কলকাতা পুরনিগমের বিজেপির কাউন্সিলর সজল ঘোষ ৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, "পুরো পার্টিটাই তো প্রোমোটারে ভরে গিয়েছে ৷ কাটমানির উপর এই বিল্ডিংগুলো তৈরি হচ্ছে ৷ ইট, বালি, সিমেন্টের উপর বাড়িগুলির ভিত তৈরি হয় না ৷ এই বাড়িতে থাকা বাসিন্দারা সবাই মধ্যবিত্ত মানুষ ৷ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছে ৷ এই বাড়িগুলি হয়তো ভেঙে দেবে পুরসভা ৷ কিন্তু, ব্যাংক লোনের টাকা মাফ করবে না ৷"
কাউন্সিলর সন্দীপন সাহার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সজলের বক্তব্য, "পুরসভা কিছু জানে না-তো, পুরসভা আছে কেন ? পুরসভাটাও না-থাকলেই হয় ৷ আমি রাজনীতি করতে আসিনি ৷ বিপদে পড়া মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে এসেছি ৷ তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা যাতে হয়, সেটা আগে দেখতে হবে ৷"
গত সপ্তাহে 14 জানুয়ারি অর্থাৎ, মঙ্গলবার বাঘাযতীনে একটি চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে পড়ে ৷ সেই বাড়িটিতে সংস্কারের কাজ চলছিল ৷ সেই কাজ চলাকালীনই বিল্ডিংটির একতলার একাংশ ধসে পড়ে পাশের একটি একতলা বাড়ির গায়ে হেলে পড়ে ৷ জানা যায়, কলকাতা পুরনিগমকে কোনও তথ্য না-দিয়ে হরিয়ানার একটি সংস্থাকে দিয়ে বাড়িটি সংস্কারের কাজ চলছিল ৷ সেই ঘটনায় ইতিমধ্যে ওই বহুতল নির্মাণকারী প্রোমোটারকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷
অন্যদিকে, মঙ্গলবার কামারহাটিতে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলকে হাইড্রোলিকের সাহায্যে উঁচু করতে গিয়ে বিপত্তি ঘটে ৷ সেখানেও বহুতলটি একদিকে হেলে যায় ৷ কামারহাটি পুরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডের ধুবিয়াবাগান এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে ৷ অভিযোগ, নির্মীয়মাণ ওই বাড়িটি একটি জলাশয় বুজিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৷