কলকাতা, 22 জানুয়ারি: আরজি কর মামলায় দোষী সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে রাজ্যের আবেদন গ্রহণ করা হবে কি না, তা জানা যাবে সোমবার ৷ বুধবার মামলার শুনানিতে এমনটাই জানায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ৷
শিয়ালদা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার ৷ বুধবার তাতে আপত্তি জানায় সিবিআই ৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীর প্রশ্ন, দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে রাজ্য কীভাবে আবেদন করতে পারে ?
এদিন শুনানির শুরুতেই রাজ্যের আবেদনে অসম্মতি দেখিয়ে সিবিআই-এর আইনজীবী (ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল) রাজদীপ মজুমদার জানান, একমাত্র তদন্তকারী সংস্থাই পারে নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে যেতে । এ প্রসঙ্গে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, "লালুপ্রসাদ যাদবের দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় পটনা হাইকোর্ট বলেছিল নিম্ন আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে একমাত্র সিবিআই আবেদন জানাতে পারে ।"
উত্তরে রাজ্যের অ্য়াডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, "লালুপ্রসাদের মামলাতে পটনা হাইকোর্ট বলেছিল, সিবিআই দুর্নীতির তদন্ত করতে পারে । কিন্তু, আরজি কর মামলায় রাজ্যই প্রথম এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে।"
অ্যাডভোকেট জেনারেলের বক্তব্য, তদন্ত এবং আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয় । আরজি কর-কাণ্ডের মামলাটির তদন্তও রাজ্যের পুলিশ শুরু করেছিল । পরে তা সিবিআই-কে হস্তান্তর করা হয় । সুতরাং লালুপ্রসাদের মামলার সঙ্গে এই মামলার তুলনা টানা ঠিক নয় বলে মনে করেন রাজ্যের আইনজীবী ৷ তারপর বিচারপতি রাজ্যের তরফে পাবলিক প্রসিকিউটর দেবাশিস রায়কে জিজ্ঞাস করেন রাজ্যের এই মামলা সম্পর্কে নির্যাতিতার পরিবার কিছু জানেন কি না ? উত্তরে তিনি জানান, এই মামলা সম্পর্কে কিছু জানেন না নির্যাতিতার মা-বাবা ৷ সরকারি আইনজীবীর এই মন্তব্যের পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানান, সোমবার নির্যাতিতার পরিবারের বক্তব্য শুনতে চান তিনি ৷ তারপর এই মামলা গ্রহণ করা হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত ৷
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সোমবার দোষী সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে শিয়ালদা আদালত ৷ শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস সাজা ঘোষণার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন ৷ রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য হাইকোর্টে যাবে বলেও সেদিন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেই মত, মঙ্গলবার সর্বোচ্চ সাজার (মৃত্যুদণ্ড) দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার ৷ বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট জেলারেল (এজি) কিশোর দত্ত ৷
আরজি করে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় শনিবার অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল শিয়ালদা আদালতে ৷ সোমবার অ্যাডিশিনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনির্বাণ দাস সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাবাসের নির্দেশ দেন ৷ পাশাপাশি নির্যাতিতার পরিবারকে মোট 17 লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন বিচারক ৷