মালদা, 21 সেপ্টেম্বর: শিক্ষক-শিক্ষিকারা কোনোদিনই নির্দিষ্ট সময় স্কুলে আসেন না ৷ স্কুলে আসার পরেও তাঁরা বাচ্চাদের পড়াশোনার দিকে বিশেষ নজর দেন না ৷ নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব আর মোবাইল ফোন ঘেঁটেই সময় কাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ ৷ এসব নিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন গ্রামবাসীরা ৷ শুক্রবার স্কুলের গেটে তালা মেরে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা ৷ পরে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ৷ গেটের তালা খুলে শিক্ষকদের বাড়ি যেতে দেন গ্রামবাসীরা ৷ তবে স্কুলের চাবি গ্রামবাসীদের হাতেই থেকে যায় ৷
ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের তুলসিহাটা সার্কেলের বারঘরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৷ শিক্ষক-শিক্ষিকারা শনিবার সঠিক সময়েই স্কুলে আসেন ৷ গ্রামবাসীরা স্কুলের তালাও খুলে দেন ৷ কিন্তু খানিক পর এক পার্শ্বশিক্ষিকার দুই ভাই গ্রামবাসীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ ৷ এরপরেই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালাবন্দি করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ওই সার্কেলের এসআই ও পুলিশ ৷ এরপর থেকে স্কুলে সব ঠিকমতো চলবে বলে শিক্ষকরা লিখিত মুচলেকা দিলে উত্তেজিত গ্রামবাসীরা শান্ত হন ৷
বারঘরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান মোট ছ'জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত ৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক পার্শ্বশিক্ষিকাও ৷ কিন্তু তাঁরা কোনোদিনই ঠিক সময়ে স্কুলে আসেন না বলে অভিযোগ ৷ এ নিয়ে শুক্রবারই প্রচণ্ড ঝামেলা হয় ৷ এ দিন চার শিক্ষক সময়মতো স্কুলে এলেও অভিযোগ, গতকালের ঘটনার জেরে পার্শ্বশিক্ষিকা তারা বেগমের দুই ভাই আজ স্কুলে এসে গ্রামবাসীদের হুমকি দেন ৷ এতেই খেপে ওঠেন গ্রামবাসীরা ৷ তাঁরা স্কুলের অফিস ঘরে তালা লাগিয়ে দেন ৷ ভিতরে আটকে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে আসেন ওই সার্কেলের এসআই শর্মিলা ঘোষ ৷ আসে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷ তাঁদের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ লিখিত মুচলেকা দিয়ে গ্রামবাসীদের শান্ত করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷
এক গ্রামবাসী আজাদ আলির কথায়, "শিক্ষকরা সময়মতো স্কুলে আসেন না ৷ তাই গতকাল গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল ৷ আজ গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নেয়, বাচ্চারা স্কুলে আসছে ৷ গেটে তালা দেখে তারা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ তাই স্কুলের তালা খুলে দেওয়া হোক ৷ যাই হোক, শিক্ষকদের সঙ্গে একটা মীমাংসা করে তালা খুলিয়ে দেওয়া হয় ৷ বাচ্চাদেরও স্কুলে ঢোকানো হয় ৷ খানিক পর পার্শ্বশিক্ষিকা তারা বেগমের দুই ভাই বুলু আর ইমরান গ্রামবাসীদের হুমকি দেয়, ওরা গ্রামবাসীদের মারবে ৷ ওর দিদিকে নাকি কেউ বা কারা হুমকি দিয়েছিল ৷ যদিও তারা কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি ৷ এরপরই গ্রামবাসীরা শিক্ষকদের তালাবন্দি করে বিক্ষোভ দেখায় ৷ এর জেরেই আজ শিক্ষকদের তালাবন্দি করে রাখা হয় ৷"
আরেক গ্রামবাসী রানি লোহার বলছেন, "আমার মেয়ে এই স্কুলে পড়ে ৷ 15 দিন আগে ও স্কুলে এসে ক্লাসের সহপাঠীদের সঙ্গে মারামারি করে বাড়ি ফিরে যায় ৷ পরদিন আমি স্কুলে যাই ৷ দেখি, বেলা প্রায় পৌনে 12টা বেজে গেলেও মাত্র একজন শিক্ষক স্কুলে এসেছেন ৷ স্কুল থেকে বেরোনোর সময় দেখি, প্রধান শিক্ষক স্কুলে ঢুকছেন ৷ আমি তাঁকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করি ৷ তিনি জানান, তাঁর কাজ ছিল ৷ কিন্তু বাকি শিক্ষকরা কেন তখনও স্কুলে আসেননি, তা নিয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি ৷ এই স্কুলে প্রতিদিন এই ঘটনাই ঘটে ৷ কোনও শিক্ষক সময়ে স্কুলে আসেন না ৷"
গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য প্রহ্লাদ রায়ের বক্তব্য, "গতকালের ঘটনার পর আজ শিক্ষকরা সময়মতোই স্কুলে এসেছিলেন ৷ স্কুলের তালাও গ্রামবাসীরা খুলে দিয়েছিল ৷ শিক্ষকরা নিজেদের ভুল স্বীকার করে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করবেন বলেও জানান ৷ তখনই তারা ম্যাডামের দুই ভাই স্কুলে এসে গ্রামের বাসিন্দাদের হুমকি দিয়ে ঝামেলা পাকান ৷ ওদের কিছু বলার থাকলে আমাকেও তো বলতে পারত ! তারাই আজ নতুন করে ঝামেলা পাকিয়েছে ৷"
বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি তুলসিহাটা সার্কেলের এসআই শর্মিলা ঘোষ ৷ তবে প্রধান শিক্ষক ভজন হালদার বলেন, "আমরা আজ গ্রামবাসীদের লিখিত মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছি, আগামিকাল থেকে আমরা সবাই সময়মতো স্কুলে আসব এবং বেরোব ৷ স্কুলের মিড ডে মিলও সঠিকভাবেই হবে ৷"