সোদপুর, 22 সেপ্টেম্বর: স্বাস্থ্যভবনের সামনে থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান উঠতেই আলকাতরা দিয়ে মোছা হয়েছে রাস্তায় লেখা স্লোগান ৷ দেওয়ালে লেখা স্লোগানেও পড়েছে রঙের প্রলেপ ৷ এবার স্বাস্থ্যভবনের সামনের রাস্তায় স্লোগান মোছার 'মহারণ' নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ আরজি করে নির্যাতিতার চিকিৎসক ছাত্রীর বাবা-মা ।
এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে নির্যাতিতার মা বলেন, "কালো রং ঢেলে স্লোগানের চিহ্ন হয়তো মুছতে পারবে ! কিন্তু মানুষের মন থেকে আলোড়ন মুছে ফেলা যাবে না । এই আন্দোলন চলবে । যতদিন না আমি আমার মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার পাচ্ছি, ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাব ।"
এই ইস্যুতে স্ত্রী'র পাশে দাঁড়িয়েছেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবাও । তাঁর কথায়, "যতই স্লোগান মুছে ফেলুক । আন্দোলন মুছতে পারবে না । মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে আরজি করের এই আন্দোলন ।" বিচার না-পাওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষ এবং ছাত্রদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার বাবা-মা ।
প্রসঙ্গত, জুনিয়র ডাক্তারদের 11 দিনের ধরনা অবস্থান উঠে যেতেই শনিবার তার যাবতীয় চিহ্ন মুছে ফেলা হয় সল্টলেকের স্বাস্থ্যভবনের রাস্তা ও দেওয়াল থেকে । রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সাফাইয়ের কাজ চলে সেখানে । তার জন্য কালো রং ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে সাফাই কর্মীদের বিরুদ্ধে । সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের লড়াই আন্দোলনকে কার্যত কুর্নিশ করেছেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা-মা ।
আরজি কর-কাণ্ডে সুবিচারের দাবিতে নাগরিক সমাজের আন্দোলন কিন্তু এখনও চলছে । শনিবার রাতেও উত্তর 24 পরগনার বেশকিছু জায়গায় পথে নামতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকে । কোথাও মশাল মিছিল হয়েছে । আবার কোথাও প্ল্যাকার্ড হাতে বিচার চেয়ে গর্জে উঠেছে নাগরিক সমাজ । এরকমই একটি কর্মসূচিতে শনিবার রাতে সোদপুর ট্র্যাফিক মোড়ে সামিল হয়েছিলেন নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন । সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ঘিরে আবেগঘন হয়ে পড়েন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা ।
তাঁর কথায়, "প্রতিবাদীরা প্রত্যেকেই আমার পরিবারের সদস্য । যেভাবে সাধারণ মানুষ রোদ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মেয়ের সুবিচার চাইছে, তাতে আমরা অভিভূত । সুবিচার না-পাওয়া পর্যন্ত এভাবেই পরিবারের পাশে থেকে আপনারা লড়াই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, সেটাই আশা করছি । গত 9 সেপ্টেম্বর যে ঘটনা আমাদের সঙ্গে ঘটেছে, সেই ঘটনা যেন আর কারও সঙ্গে না-ঘটে । সেদিনের একটা ফোন-কলই আমাদের পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে ।"
একথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা । সেসময় প্রতিবাদীরা তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, "আপনি কাঁদবেন । বিচার না-পাওয়া পর্যন্ত আমরা সবাই আপনার পরিবারের পাশে রয়েছি ।" এ দিকে এদিন নির্যাতিতার মায়ের গলাতেও সেই প্রতিবাদের স্বর শোনা গিয়েছে । তিনি বলেন, "আমার মেয়ের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে গোটা দেশের মানুষকে । তাই ওকে তোমরা কখনওই ভুলবে না । বিচার সহজে আসে না । বিচার আন্দোলন করে ছিনিয়ে নিতে হয় ।" অন্যদিকে,কর্মবিরতি তুলে নিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা ফের কাজে যোগ দেওয়ায় খুশি নির্যাতিতার পরিবার ।