চন্দননগর, 28 জুন: যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর থেকে খোঁজ নেই চন্দননগর প্রবর্তক সেবা নিকেতনের সভাপতি পরিমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ সেই কারণে সেখানকার আবাসিকদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিশন ও হুগলি জেলা শিশুসুরক্ষা আধিকারিকরা ৷ কিন্তু সেই নিয়ে গোলমালের জেরে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ওই আশ্রম চত্বর ৷
প্রথমে সরকারি আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ চলে ৷ পরে পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখায় আবাসিকরা ৷ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া, সরকারি আধিকারিকদের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে ৷ এই ঘটনায় তিনজন অভিভাবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ পুলিশের বিরুদ্ধে পালটা লাঠিচার্জের অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবক ও আশ্রমের কর্মীরা ৷
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দননগর প্রবর্তক সেবা নিকেতনের দু’টো হোম ৷ একটি জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের অধীনে চলে ৷ সেখানে মূলত আদালত থেকে পাঠানো নাবালিকাদের রাখা হয় ৷ আর একটিতে স্কুল পড়ুয়ারা থাকে ৷ আবাসিক হিসেবে থেকে তারা সেখানে পড়াশোনা করে ৷ সেবা নিকেতনের সভাপতি হিসেবে পরিমল বন্দ্যোপাধ্যায় দু’টি হোমই দেখভাল করেন ৷
পুলিশের তরফ থেকে জানা গিয়েছে, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের হোমে নির্দিষ্ট সময় অন্তর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিশন ও জেলা শিশুসুরক্ষা আধিকারিকরা যান ৷ তাঁদের কাছেই কয়েকজন আবাসিক যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেন ৷ তারা পরিমলকেই কাঠগড়ায় তোলে ৷ এর পর ওই আবাসিকদের অন্য একটি হোমে সরিয়ে নিয়ে যায় প্রশাসন ৷ তার পর চন্দননগর থানায় পরিমলের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ দায়ের হয় ৷ পকসো আইনে মামলা রুজু করে পুলিশ ৷
গত শুক্রবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ৷ তার পর থেকে আর খোঁজ নেই আশ্রমের সভাপতি পরিমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ পুলিশ ও প্রশাসনের তরফ থেকে জানা গিয়েছে, প্রবর্তক সেবা নিকেতনের আবাসিক হোমে প্রায় দুশো আবাসিক থাকে ৷ পরিমল না থাকায় সেখানে অচলাবস্থা তৈরি হয় ৷ তাই আবাসিকদের বাড়ি ফেরাতে বৃহস্পতিবার অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিশন ও জেলা শিশুসুরক্ষা আধিকারিকরা ।
সেখানে প্রথমে অভিভাবকদের গন্ডগোল বাঁধে আধিকারিকদের সঙ্গে । তার পর বিক্ষোভ দেখায় সভাপতির পক্ষে থাকা ছাত্রীরা । আধিকারিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে ছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ । অভিযোগ, ছাত্রীরা ভাঙচুর করে আধিকারিকদের গাড়ি । ছাত্রীদের সঙ্গে অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখান পুলিশকে । উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকেও । ঘটনাস্থলে যায় আরও পুলিশ । সেই সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রীদের বিরুদ্ধে ।
ছাত্রীদের পালটা অভিযোগ, তাদের মারধর করে পুলিশ । তাতে আহত হয় আটজন ছাত্রী । তাদের চিকিৎসার জন্য চন্দননগর হাসপাতালে পাঠানো হয় । দীর্ঘক্ষণ চলে পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ । ঘটনাস্থলে আসে চন্দননগর পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা । ছাত্রীদের দাবি, এই আশ্রমের সভাপতি পরিমল বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশ্রমে ফিরিয়ে আনতে হবে ।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (হেড কোয়ার্টার) ঈশানী পাল বলেন, ‘‘এখানকার সভাপতির বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলার রুজু হয়েছে । যদিও এখনও তাঁর খোঁজ মেলেনি । আজ প্রবর্তক সেবা নিকেতনে একটি মামলার তদন্ত চলছিল । সেই সময়ই আশ্রমে গন্ডগোলের সৃষ্টি হয় । পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । সবদিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’’