শান্তিপুর, 17 সেপ্টেম্বর: নদিয়ার শান্তিপুরের অদ্বৈত আচার্যের বংশধর বড় গোস্বামী বাড়ি ৷ এটি শান্তিপুরের এক অন্যতম তীর্থস্থান। এই বড় গোস্বামী বাড়িতেই প্রায় 350 বছর ধরে চিরাচরিত নিয়ম মেনে পূজিত হয়ে আসছেন দেবী কাত্যায়নী। বড় গোস্বামী বাড়ির বর্তমানে চতুর্থতম বংশধর অদ্রীপ গোস্বামীর কথায় জানা যায়, দেবী আরাধনার ইতিকথা।
জানা গিয়েছে, এখন থেকে প্রায় 350 বছর আগে তাঁদের বাড়ির রাধারমন বিগ্রহ হঠাৎ উধাও হয়ে যায় (রাধারমন অন্তর্হিত হন বলেও বলেন অনেকে) ৷ তারপর থেকেই প্রত্যেক সদস্য ভাবতে থাকেন রাধারমনকে কী করে খুঁজে পাওয়া যাবে। এই নিয়েই খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন তাঁরা ৷ অবশেষে জানতে পারেন ভাগবত পুরাণে রয়েছে দেবী কাত্যায়নীর ব্রত করলে ইষ্ট দেবতাকে পাওয়া যায়। সেইমতো বড় গোস্বামী বাড়ির গৃহবধূরা দেবী কাত্যায়নীর ব্রত করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে বাড়ির সব থেকে বড় গৃহবধূ স্বপ্নাদেশ পান তাঁদের রাধারমন নদিয়ার দিগনগরের একটি দীঘিতে পড়ে রয়েছেন।
তৎক্ষণাৎ বাড়ির সদস্যরা সেই স্থানে গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তাদের ইষ্ট দেবতার বিগ্রহ রাধারমনকে ৷ তারপর থেকেই প্রত্যেক বছরই মহাসামরহে পূজিত হয়ে আসছেন দেবী কাত্যায়নী। যদিও দেবী আরাধনায় রয়েছেন বিশেষ নিয়ম ৷
দেবী কাত্যায়নীর আরাধনার বিশেষ নিয়ম-
- দেবীর 8 হাতে কোনও অস্ত্র থাকে না ৷ 2টি হাতে থাকে অসুর দমনের অস্ত্র। দেবীর দুই সন্তান কার্তিক এবং গণেশ থাকেন উল্টো দিকে (গণেশ থাকেন ডানদিকের বদলে বাঁ-দিকে ও কার্তিক বাঁ-দিকের বদলে থাকে ডানদিকে)।
দেবীর কাত্যায়নীর ভোগ নিবেদনের বিশেষ নিয়ম-
- বৈষ্ণব মতে পূজিত হন দেবী কাত্যায়নী। মহাভোগ তৈরি হয় বাড়ির দীক্ষিত গৃহবধূদের দিয়ে। সকালে হয় বাল্য ভোগ, সপ্তমী অষ্টমী নবমীর এই তিন দিন বিশেষ মহা ভোগ হয় 33 ব্যঞ্জনে। নবমীর দিন সকালে দেবীর কাছে সকলের মঙ্গল কামনা করা হয় ৷ দশমীতে সারাবাড়িতে শান্তির জল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির প্রত্যেক সদস্য শুদ্ধ পোশাক পরেন।
দেবীর কাত্যায়নীর বিসর্জনের বিশেষ নিয়ম-
- দশমীর দিন সকালে দেবী কাত্যায়নীকে নিরঞ্জন দিয়ে তড়িঘড়ি বাড়িতে ফিরে আসেন ৷ এরপর রাধারমন অর্থাৎ বাড়ির বিগ্রহ দেবতাকে ভোগ নিবেদন করেন। জানা গিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত দেবী বিসর্জন না-হয় ততক্ষণ পর্যন্ত রাধারমনকে ভোগ নিবেদন করা হয় না।
তবে 350 বছর ধরে নিষ্ঠা সহকারে দেরি আরাধনা হয়ে আসছে এই শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়িতে। এখন থেকেই তোড়জোর চলছে দেবীমূর্তি তৈরির কাজ। ব্যস্ত রয়েছেন অদ্বৈতাচার্যের বংশধাররাও।