মালদা, 27 ফেব্রুয়ারি: কখনও দাদা, কখনও কাকা ৷ এর আগে মালদা শহরে 11 বছরের কিশোরী খুনের ঘটনায় তার জ্যেঠতুতো দাদাকে গ্রেফতার করেছিল ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ৷ এবার পুরাতন মালদায় 13 বছর বয়সি আদিবাসী নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে গ্রেফতার করা হল ওই কিশোরীরই এক কাকাকে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত কাকা পুলিশি জেরায় তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে নিয়েছে ৷ প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 302 ধারায় খুন ও 201 ধারায় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে ধৃতকে মঙ্গলবার মালদা জেলা আদালতে পেশ করেছে মালদা থানার পুলিশ ৷
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সন্ধেয় গ্রামের বাঁধনা পরবের নাচের আসর থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় নবম শ্রেণির ওই নাবালিকা ৷ পরদিন সন্ধেয় গ্রামের পাশেই একটি পরিত্যক্ত ইটভাটা থেকে তার দেহ উদ্ধার হয় ৷ ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে তাকে খুন করা হয়েছিল ৷ প্রায় বিবস্ত্র দেহ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতচিহ্ন দেখে গ্রামবাসীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও জানিয়ে দেন, খুনের আগে ওই নাবালিকার সঙ্গে যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে ৷ লোকসভা ভোটের আগে ঘটনাটি রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে ওঠে ৷ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সরব হয় বিরোধী শিবির ৷ অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার না করা হলে বড়সড় আন্দোলনের হুমকি দেয় আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের মতো সংগঠনও ৷ শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্র ধরে সোমবার রাতে নিহত নাবালিকার গ্রাম থেকেই গ্রেফতার করা হয় তার এক কাকাকে ৷ ধৃতের বয়স 21 বছর ৷
পুলিশি জেরায় ধৃত জানায়, বাঁধনা পরবের তৃতীয় দিন আদিবাসী সমাজে খানাপিনার সঙ্গে নাচ-গানের আসর হয়ে থাকে ৷ বৃহস্পতিবার সে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মদ্যপান করে নাচের আসরে যায় ৷ সেখানেই নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল তার ভাইঝি ৷ তখনই ভাইঝিকে ঘুরতে যাওয়ার টোপ দিয়ে নাচের আসর থেকে তাকে বের করে আনে ৷ তাকে নিয়ে যায় পরিত্যক্ত ওই ইটভাটায় ৷ সেখানে তার সঙ্গে যৌন নির্যাতন চালায় সে ৷ ভাইঝি তাকে হুমকি দেয়, সে সবাইকে ঘটনার কথা বলে দেবে ৷ তখনই নেশার ঝোঁকে মাথায় একের পর এক ইটের আঘাত করে ভাইঝিকে খুন করে কাকা ৷ হুঁশ ফিরলে সে সেখান থেকে পালিয়ে যায় ৷
এই ঘটনার তদন্তে প্রথমে অন্ধকারেই আলো খুঁজতে হয়েছে পুলিশকে ৷ ওই গ্রামের কোথাও কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা নেই ৷ ইটভাটা এক বছর ধরে বন্ধ থাকায় সেখানে মানুষজনের যাতায়াত নেই ৷ তাই জেরাকেই অস্ত্র করে পুলিশি তদন্ত শুরু হয় ৷ বিভিন্ন সূত্র ধরে অবশেষে সোমবার রাতে ওই যুবককে তার বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় ৷ আটক করা হয় গ্রামের আরও এক যুবককে ৷ যদিও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ মালদা থানার পুলিশের অনুমান, এই ঘটনায় ধৃতের সঙ্গে আরও এক বা একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকতে পারে ৷ যুবককে আরও জেরা করা প্রয়োজন ৷ সেকারণেই আদালতে তার সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে ৷
এ দিকে এই ঘটনায় অপরাধীদের সবাইকে গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন মালদা থানায় বিক্ষোভ দেখায় আদিবাসী ভারত মহাসভা ৷ পরে নিজেদের দাবিপত্র থানার আইসির হাতে তুলে দেন সংগঠনের সদস্যরা ৷ এ নিয়ে সংগঠনের মালদা জেলা সম্পাদক সাজলা মুর্মু বলেন, "খুনের আগে ওই নাবালিকাকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল ৷ ফলে এই ঘটনায় একাধিক দুষ্কৃতী জড়িত ৷ তাদের প্রত্যেককে দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ৷ এদের আমরা ফাঁসি চাই ৷ আজ আমরা থানার সামনে সেই দাবি জানাচ্ছি ৷"
আরও পড়ুন: