ETV Bharat / state

তিন কেন্দ্র ফিরে পেতে মরিয়া তৃণমূল সুপ্রিমো! উত্তরে মমতা-ম্যাজিকে ফুটবে ঘাসফুল ? - Lok Sabha Election 2024 - LOK SABHA ELECTION 2024

Lok Sabha Election 2024: দেশে প্রথম দফার নির্বাচনে 19 এপ্রিল ভোট হবে রাজ্যের উত্তরে- জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার কেন্দ্রে ৷ এই তিনটি লোকসভাই বিজেপির দখলে ৷ এমনকী বিধানসভা নির্বাচনেও উত্তরে দাপট দেখিয়েছে গেরুয়া শিবির ৷ এই আসনগুলি ফিরে পেতে জোরদার প্রচার চালিয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

ETV Bharat
উত্তরবঙ্গে ঘাসফুল ফুটবে কি
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 17, 2024, 8:43 AM IST

Updated : Apr 17, 2024, 9:01 AM IST

উত্তরবঙ্গের তিনটি আসন পুনরুদ্ধার জোরদার প্রচার চালিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়

জলপাইগুড়ি, 17 এপ্রিল: "বিজেপি আপনাদের কী দিয়েছে ? কেন ভোট দেন ?", সম্প্রতি ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচারে এসে আক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ উত্তরবঙ্গে তিন-তিনটি কেন্দ্র- জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার বিজেপির দখলে ৷ 2014 সালে ঘাসফুল ফুটলেও পরের লোকসভা ভোটেই তার দখল নিয়েছে বিজেপি ৷ উত্তরের এই কেন্দ্রগুলির মধ্যে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে চা-বলয় ৷ এখানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে চা-শ্রমিকদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ৷ আর কোচবিহারে সীমান্তে পাচার, অনুপ্রবেশের সমস্যা রয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রচার সভায় বারবার বিএসএফের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছেন ৷ এবারে তৃণমূলের হাতিয়ার কেন্দ্রের মনরেগা, আবাস যোজনা প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনা ৷ তখন ভারতীয় জনতা পার্টির অভিযোগ তৃণমূলের দুর্নীতি ৷

আগামী 19 এপ্রিল দেশজুড়ে প্রথম দফার লোকসভা নির্বাচনে এই তিন কেন্দ্রে ভোট ৷ এবার কি তৃণমূল এই আসনগুলিতে ফের ঘাসফুল ফোটাতে পারবে ? এপ্রিল মাসের পয়লা দিন থেকে দু'দুসপ্তাহ উত্তরবঙ্গেই থেকে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ জলপাইগুড়িতে তৃণমূল প্রার্থী বিধায়ক নির্মল চন্দ্র রায়, আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের প্রকাশ চিক বড়াইক আর কোচবিহারে বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার হয়ে লাগাতার প্রচার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

এর মধ্যে 31 মার্চ দুপুরে জলপাইগুড়িতে হঠাৎ টর্নেডোর ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাড়িঘর ভেঙেচুরে একেবারে তছনছ হয়ে যায় ৷ সেদিন দুপুরে কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্রর সমর্থনে প্রচারসভা ছিল মমতার ৷ সেই প্রচার সেরে তিনি কলকাতা ফিরে গিয়েছিলেন ৷ তবে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ামাত্র মধ্যরাতে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান ৷ তারপর থেকে জলপাইগুড়ির চালসাকে ক্যাম্প অফিস করেই আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ মাঝে দু'দিন মাত্র তিনি কলকাতায় ফিরেছেন ৷

মাথাব্যথা উত্তরবঙ্গ:

উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার- তিনটি কেন্দ্রেই দীর্ঘ সময় ধরে বামেদের দখলে ছিল ৷ 2014 সালের লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি কেন্দ্র, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থীরা ৷ এরপর 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র 5 বছরের ব্যবধানে হঠাৎ পালাবদল ঘটে উত্তরের এই তিনটি কেন্দ্রেই ৷

জলপাইগুড়ি লোকসভা- 2024 সালের বিজেপির লোকসভা প্রার্থী ডঃ জয়ন্তকুমার রায় আগের লোকসভা ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ৷ এবারও তাঁকেই প্রার্থী করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ চা-বাগান অধ্যুষিত এই জেলায় অন্যতম সমস্যা চা শ্রমিকদের মজুরি । আবার জেলার একদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত আর অন্যদিকে ভুটান সীমান্ত ৷

2019 সালে বিজেপি প্রার্থী ডাঃ জয়ন্তকুমার রায় তৃণমূলের প্রার্থী বিজয় চন্দ্র বর্মনকে 1 লক্ষ 84 হাজার ভোটে পরাজিত করেন ৷ তিনি পেয়েছিলেন 7 লক্ষ 60 হাজার 150 ভোট, প্রাপ্ত ভোটের হার 50.65 শতাংশ ৷ তৃণমূল প্রার্থীর ঝুলিতে এসেছিল 5 লক্ষ 76 হাজার 141 ভোট, প্রাপ্ত ভোট মাত্র 38.39 শতাংশ ৷

এরপর 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল খানিকটা ঘুরে দাঁড়ায় ৷ জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ, মালবাজার, মেখলিগঞ্জ বিধানসভা তৃণমূল দখল করে ৷ অন্যদিকে ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি যায় বিজেপির কাছে ৷

নির্বাচনী প্রচারে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার চা-শ্রমিকদের জমির পাট্টা দেওয়ার কথা বলেছেন ৷ ফ্রিতে রেশন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে শুরু করে একাধিক সরকারি প্রকল্পের কথা প্রচারে বলেছেন ৷ এমনকী জলপাইগুড়িতে টর্নেডোয় যাঁদের বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের জন্য বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন ৷ তবে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু থাকায় নির্বাচন কমিশনের অনুমতির অপেক্ষায় আছে রাজ্য সরকার ৷ এই কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছেন, মঙ্গলবার, 16 এপ্রিল জলপাইগুড়িতে নির্বাচনী প্রচার সভা থেকে ৷

আলিপুরদুয়ার লোকসভা-

চা-বলয়ের আরেকটি লোকসভা কেন্দ্র আলিপুরদুয়ার ৷ তাই প্রার্থীদের জয়ের নেপথ্যে চা-শ্রমিকদের ভোট এখানে গুরুত্বপূর্ণ ৷ এবার এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী প্রকাশ চিক বড়াইকের লড়াই বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার সঙ্গে ৷ এর 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জন বার্লা 7 লক্ষ 50 হাজার 804 ভোটে জয়ী হন, প্রাপ্ত ভোটের হার 54.40 শতাংশ ৷ তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তীর্কে 5 লক্ষ 6 হাজার 815 টি ভোট পেয়েছিলেন, যা মোট ভোটের 36.72 শতাংশ ৷ তৃণমূলের দশরথ তীর্কেকে হারিয়ে 2 লক্ষ 43 হাজার 989টি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির জন বার্লা ৷ বিশেষত চা বলয়ের আশীর্বাদেই এই কেন্দ্রটির দখল নিয়েছিল বিজেপি ৷ এদিকে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের 7 টি বিধানসভাতে 2021 সালে জয়ী হয় বিজেপি ৷ তাই পরপর দু'বারই ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল ৷

কোচবিহার লোকসভা-

এই জেলাটি কিন্তু বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ৷ উত্তরের এই জেলার সঙ্গে বাংলাদেশের 549.45 কিমি দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে ৷ তাই অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, পাচার এখানে দৈনন্দিন ঘটনা ৷ প্রধানত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল হলেও এখানে শিল্প সেভাবে গড়ে ওঠেনি ৷ তাই জেলার বহু মানুষই ভিন রাজ্যে গিয়েছেন রুটি-রুজির সন্ধানে ৷

2019 সালে বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক 7 লক্ষ 31 হাজার 594 ভোটে এখানে জয়ী হন ৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল 47.98 শতাংশ ৷ এদিকে তৃণমূল প্রার্থী পরেশচন্দ্র অধিকারী পেয়েছিলেন 6 লক্ষ 77 হাজার 363 ভোট ৷ সেবার 54 হাজার 231 ভোটে জয়ী হন বিজেপির নিশীথ ৷ এরপর 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনেও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত 7টি বিধানসভার 6টিতেই জয়ী হয় বিজেপি ৷ একমাত্র সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূলের জগদীশ বর্মা বসুনিয়া ৷ এবার তিনিই কোচবিহার থেকে লোকসভা প্রার্থী হয়েছেন ৷ পরে দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রটিতে উপনির্বাচন হয় এবং তার দখল নেন তৃণমূলের উদয়ন গুহ ৷ আসন্ন লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার সাথে টক্কর বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের ৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের কাজকর্মের সুবিধের জন্য সচিবালয় উত্তরকন্যা তৈরি করেছেন ৷ বারবার উত্তরবঙ্গ সফরে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এদিকে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক দীপক বর্মন কটাক্ষ করে বলেন, "উত্তরবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেড়াতে আসেন ৷ তবে তাঁকে উত্তরবঙ্গের মানুষ ভোট দেবেন না ৷ উত্তরবঙ্গের জন্য মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কিচ্ছু করেননি ৷ এখানে উত্তরকন্যা করেছেন, যেখানে কোনও দফতর বসে না ৷ কোনও মন্ত্রী কোনও দিন বসেন নি ৷"

আরও পড়ুন:

  1. জলপাইগুড়িতে কি আবার ফুটবে পদ্ম, নাকি ফিরবে ঘাসফুলের আধিপত্য !
  2. 'সীমান্তে গুলি করেই বলছে বাংলাদেশি', শীতলকুচির প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রকে নিশানা মমতার
  3. 'কী দোষ করেছিল তৃণমূল ?', ঊনিশের হার নিয়ে জলপাইগুড়িতে আক্ষেপ মমতার

উত্তরবঙ্গের তিনটি আসন পুনরুদ্ধার জোরদার প্রচার চালিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়

জলপাইগুড়ি, 17 এপ্রিল: "বিজেপি আপনাদের কী দিয়েছে ? কেন ভোট দেন ?", সম্প্রতি ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচারে এসে আক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ উত্তরবঙ্গে তিন-তিনটি কেন্দ্র- জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার বিজেপির দখলে ৷ 2014 সালে ঘাসফুল ফুটলেও পরের লোকসভা ভোটেই তার দখল নিয়েছে বিজেপি ৷ উত্তরের এই কেন্দ্রগুলির মধ্যে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে চা-বলয় ৷ এখানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে চা-শ্রমিকদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ৷ আর কোচবিহারে সীমান্তে পাচার, অনুপ্রবেশের সমস্যা রয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রচার সভায় বারবার বিএসএফের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছেন ৷ এবারে তৃণমূলের হাতিয়ার কেন্দ্রের মনরেগা, আবাস যোজনা প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনা ৷ তখন ভারতীয় জনতা পার্টির অভিযোগ তৃণমূলের দুর্নীতি ৷

আগামী 19 এপ্রিল দেশজুড়ে প্রথম দফার লোকসভা নির্বাচনে এই তিন কেন্দ্রে ভোট ৷ এবার কি তৃণমূল এই আসনগুলিতে ফের ঘাসফুল ফোটাতে পারবে ? এপ্রিল মাসের পয়লা দিন থেকে দু'দুসপ্তাহ উত্তরবঙ্গেই থেকে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ জলপাইগুড়িতে তৃণমূল প্রার্থী বিধায়ক নির্মল চন্দ্র রায়, আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের প্রকাশ চিক বড়াইক আর কোচবিহারে বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার হয়ে লাগাতার প্রচার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

এর মধ্যে 31 মার্চ দুপুরে জলপাইগুড়িতে হঠাৎ টর্নেডোর ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাড়িঘর ভেঙেচুরে একেবারে তছনছ হয়ে যায় ৷ সেদিন দুপুরে কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্রর সমর্থনে প্রচারসভা ছিল মমতার ৷ সেই প্রচার সেরে তিনি কলকাতা ফিরে গিয়েছিলেন ৷ তবে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ামাত্র মধ্যরাতে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান ৷ তারপর থেকে জলপাইগুড়ির চালসাকে ক্যাম্প অফিস করেই আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ মাঝে দু'দিন মাত্র তিনি কলকাতায় ফিরেছেন ৷

মাথাব্যথা উত্তরবঙ্গ:

উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার- তিনটি কেন্দ্রেই দীর্ঘ সময় ধরে বামেদের দখলে ছিল ৷ 2014 সালের লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি কেন্দ্র, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থীরা ৷ এরপর 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র 5 বছরের ব্যবধানে হঠাৎ পালাবদল ঘটে উত্তরের এই তিনটি কেন্দ্রেই ৷

জলপাইগুড়ি লোকসভা- 2024 সালের বিজেপির লোকসভা প্রার্থী ডঃ জয়ন্তকুমার রায় আগের লোকসভা ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ৷ এবারও তাঁকেই প্রার্থী করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ চা-বাগান অধ্যুষিত এই জেলায় অন্যতম সমস্যা চা শ্রমিকদের মজুরি । আবার জেলার একদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত আর অন্যদিকে ভুটান সীমান্ত ৷

2019 সালে বিজেপি প্রার্থী ডাঃ জয়ন্তকুমার রায় তৃণমূলের প্রার্থী বিজয় চন্দ্র বর্মনকে 1 লক্ষ 84 হাজার ভোটে পরাজিত করেন ৷ তিনি পেয়েছিলেন 7 লক্ষ 60 হাজার 150 ভোট, প্রাপ্ত ভোটের হার 50.65 শতাংশ ৷ তৃণমূল প্রার্থীর ঝুলিতে এসেছিল 5 লক্ষ 76 হাজার 141 ভোট, প্রাপ্ত ভোট মাত্র 38.39 শতাংশ ৷

এরপর 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল খানিকটা ঘুরে দাঁড়ায় ৷ জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ, মালবাজার, মেখলিগঞ্জ বিধানসভা তৃণমূল দখল করে ৷ অন্যদিকে ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি যায় বিজেপির কাছে ৷

নির্বাচনী প্রচারে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার চা-শ্রমিকদের জমির পাট্টা দেওয়ার কথা বলেছেন ৷ ফ্রিতে রেশন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে শুরু করে একাধিক সরকারি প্রকল্পের কথা প্রচারে বলেছেন ৷ এমনকী জলপাইগুড়িতে টর্নেডোয় যাঁদের বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের জন্য বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন ৷ তবে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু থাকায় নির্বাচন কমিশনের অনুমতির অপেক্ষায় আছে রাজ্য সরকার ৷ এই কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছেন, মঙ্গলবার, 16 এপ্রিল জলপাইগুড়িতে নির্বাচনী প্রচার সভা থেকে ৷

আলিপুরদুয়ার লোকসভা-

চা-বলয়ের আরেকটি লোকসভা কেন্দ্র আলিপুরদুয়ার ৷ তাই প্রার্থীদের জয়ের নেপথ্যে চা-শ্রমিকদের ভোট এখানে গুরুত্বপূর্ণ ৷ এবার এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী প্রকাশ চিক বড়াইকের লড়াই বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার সঙ্গে ৷ এর 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জন বার্লা 7 লক্ষ 50 হাজার 804 ভোটে জয়ী হন, প্রাপ্ত ভোটের হার 54.40 শতাংশ ৷ তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তীর্কে 5 লক্ষ 6 হাজার 815 টি ভোট পেয়েছিলেন, যা মোট ভোটের 36.72 শতাংশ ৷ তৃণমূলের দশরথ তীর্কেকে হারিয়ে 2 লক্ষ 43 হাজার 989টি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির জন বার্লা ৷ বিশেষত চা বলয়ের আশীর্বাদেই এই কেন্দ্রটির দখল নিয়েছিল বিজেপি ৷ এদিকে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের 7 টি বিধানসভাতে 2021 সালে জয়ী হয় বিজেপি ৷ তাই পরপর দু'বারই ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল ৷

কোচবিহার লোকসভা-

এই জেলাটি কিন্তু বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ৷ উত্তরের এই জেলার সঙ্গে বাংলাদেশের 549.45 কিমি দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে ৷ তাই অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, পাচার এখানে দৈনন্দিন ঘটনা ৷ প্রধানত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল হলেও এখানে শিল্প সেভাবে গড়ে ওঠেনি ৷ তাই জেলার বহু মানুষই ভিন রাজ্যে গিয়েছেন রুটি-রুজির সন্ধানে ৷

2019 সালে বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক 7 লক্ষ 31 হাজার 594 ভোটে এখানে জয়ী হন ৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল 47.98 শতাংশ ৷ এদিকে তৃণমূল প্রার্থী পরেশচন্দ্র অধিকারী পেয়েছিলেন 6 লক্ষ 77 হাজার 363 ভোট ৷ সেবার 54 হাজার 231 ভোটে জয়ী হন বিজেপির নিশীথ ৷ এরপর 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনেও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত 7টি বিধানসভার 6টিতেই জয়ী হয় বিজেপি ৷ একমাত্র সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূলের জগদীশ বর্মা বসুনিয়া ৷ এবার তিনিই কোচবিহার থেকে লোকসভা প্রার্থী হয়েছেন ৷ পরে দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রটিতে উপনির্বাচন হয় এবং তার দখল নেন তৃণমূলের উদয়ন গুহ ৷ আসন্ন লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার সাথে টক্কর বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের ৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের কাজকর্মের সুবিধের জন্য সচিবালয় উত্তরকন্যা তৈরি করেছেন ৷ বারবার উত্তরবঙ্গ সফরে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এদিকে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক দীপক বর্মন কটাক্ষ করে বলেন, "উত্তরবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেড়াতে আসেন ৷ তবে তাঁকে উত্তরবঙ্গের মানুষ ভোট দেবেন না ৷ উত্তরবঙ্গের জন্য মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কিচ্ছু করেননি ৷ এখানে উত্তরকন্যা করেছেন, যেখানে কোনও দফতর বসে না ৷ কোনও মন্ত্রী কোনও দিন বসেন নি ৷"

আরও পড়ুন:

  1. জলপাইগুড়িতে কি আবার ফুটবে পদ্ম, নাকি ফিরবে ঘাসফুলের আধিপত্য !
  2. 'সীমান্তে গুলি করেই বলছে বাংলাদেশি', শীতলকুচির প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রকে নিশানা মমতার
  3. 'কী দোষ করেছিল তৃণমূল ?', ঊনিশের হার নিয়ে জলপাইগুড়িতে আক্ষেপ মমতার
Last Updated : Apr 17, 2024, 9:01 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.