কলকাতা, 12 অগস্ট: পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ এমনকী বাংলাদেশি বলে ওড়িশায় তাঁদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে ৷ এবার সেই নিয়ে সরব তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম ৷ রাজনীতির অভিযোগ করলেন সাংসদ ৷ তবে, এই বিষয়টিকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব বলে মন্তব্য করলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা ৷
রবিবার এই ইস্যু নিয় পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ফোনে কথা হয়েছিল ৷ তা নিয়ে ইটিভি ভারতকে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, "ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকার রয়েছে দেশের যে কোনও প্রান্তে গিয়ে জীবিকা অর্জনের ৷ কিন্তু, বাংলায় কথা বলার কারণে কাউকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে দেওয়া যায় না ৷ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এ ধরনের ঘটনা ঘটছে ৷"
বাংলার শ্রমিকরা বাংলাদেশি! সরাসরি ওড়িশায় মোহনকে ফোন মমতার
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ওড়িশার বিভিন্ন প্রান্তে বাংলা থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে ৷ সাংসদ অভিযোগ করেছেন, বাংলা ভাষায় কথা বলায় বাংলাদেশি তকমা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে ৷ আর বাংলা ভাষায় কথা বলায়, তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওড়িশার স্থানীয় লোকজন তাঁদের আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড দেখাতে বাধ্য করছে ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের অনুপ্রবেশকারী বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে ৷ এ ধরনের আক্রমণের কড়া নিন্দা করেছেন তৃণমূল সাংসদ ৷
রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য রাজ্য সরকার একটি হেল্পলাইনও চালু করেছে ৷ সামিরুল ইসলাম রাজ্য সরকারের গড়ে দেওয়া পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ৷ তার সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "গত কয়েকদিন ধরেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে ৷ ইতিমধ্যেই অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে ৷ আমরা তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি ৷ ইতিমধ্যে, আমাদের তরফ থেকে একটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে ৷ বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা যেখানেই সমস্যায় পড়ুন, সরকারের সাহায্য চাইতে পারেন ৷ সেই হেল্প লাইন নম্বর হল- 18001030009 ৷"
তিনি আরও বলেন, "এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয় ৷ আমি আগেও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছি ৷ এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন ৷ আমার মনে হয় এর পেছনে একটা বৃহত্তর রাজনীতি রয়েছে ৷ যার শিকার হচ্ছেন রাজ্যের গরিব খেটে খাওয়া মানুষ ৷ তার মতে, পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে শুধু এই রাজ্যের মানুষ যে অন্য রাজ্যে যায় এমনটা নয় ৷ অন্য রাজ্যের মানুষও পশ্চিমবঙ্গে আসেন ৷ কোনও সন্দেহ নেই, মালদা, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের নির্মাণ শ্রমিকরা দক্ষ ৷ এদের দক্ষতা গোটা দেশের মধ্যে সেরা ৷ তাঁরা বাংলায় কথা বলেন বলেই বাংলাদেশি, এমনটা হতে পারে না ৷"
বিষয়টি নিয়ে সিপিআইএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর নেতা আসাদুল্লাহ গায়েন বলেন, "এ ধরনের ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে ৷ শুধু ওড়িশা নয়, এমন ঘটনা দেখা গিয়েছিল কয়েকদিন আগেই ৷ বেঙ্গালুরু-সহ অন্যত্রও ৷ আমরাও তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। একইসঙ্গে এ ধরনের ঘটনার কঠোরভাবে নিন্দা করছি ৷" একইসঙ্গে তিনি রাজ্যের তৃণমূল সরকারকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন ৷ রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাবের কারণেই এরাজ্যের বেকার যুবকরা অন্য রাজ্যে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ৷
অন্যদিকে, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা এই ঘটনাকে 'বাংলাদেশ পরিস্থিতি'র আফটার এফেক্ট বলে ব্যাখ্যা করেছেন ৷ তিনি বলেন, "বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটেছে তাকে কেন্দ্র করে সর্বত্র একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে গিয়েছে ৷ নাগরিকদের মধ্যে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে অনুপ্রবেশকারীরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে ৷ অতীতে এধরনের ঘটনা হয়েছে ৷ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা, গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ৷" তাঁর মতে, যেহেতু এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের দেশে প্রবেশের একটা আতঙ্ক রয়েছে সেই জায়গা থেকেই এই ধরনের ঘটনাগুলি ঘটছে ৷
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, "যাদের বিরুদ্ধে এধরনের সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, তারা বাংলাদেশি কিনা সেটা দেখার প্রয়োজন রয়েছে ৷ তিনি মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ৷ এর জন্য বাংলার কিছু মানুষকে হয়তো অসুবিধায় পড়তে হতে পারে ৷ কিন্তু সামগ্রিকভাবে বুঝতে হবে এটা আন্তর্জাতিক যে সমস্যা তাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে ৷"