মালদা, 3 সেপ্টেম্বর: হিতে কি বিপরীত হল ? সেই প্রশ্নই ঘুরছে রতুয়ায় ৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোঁস করার কথা বলতেই দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের নয় সদস্য ৷ শুধু মুখে বলাই নয়, তাঁরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিডিওর কাছে ৷ প্রধানের দাবি, তিনি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন ৷ স্বচ্ছভাবেই উন্নয়নের কাজ করেন ৷ যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন, তাঁরাই দুর্নীতির আঁতুড়ঘর ৷ পঞ্চায়েত সদস্যদের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিডিও ৷
ঘটনাটি রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের শ্রীপুর 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৷ এই গ্রাম পঞ্চায়েতে স্বচ্ছ ভারত মিশনের কাজ শুরু হয়েছে ৷ মূলত সোপ ট্যাংকের কাজ চলছে ৷ সেই কাজেই প্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন, ধুলু শেখ, সেলিনা ইয়াসমিনের মতো তৃণমূলের নয় পঞ্চায়েত সদস্য ৷ তাঁদের বক্তব্য, প্রথমবার টেন্ডার ডেকেই 140টি কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু কোনও কাজ না করে ওই 140টি কাজের পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাঁদের দলেরই প্রধান ৷ পকেটে ভরেছেন প্রায় 63 লক্ষ টাকা ৷ পরে ফের এই প্রকল্পে 160 টি স্কিমের কাজ শুরু হয় ৷ সেই কাজেও চলছে ব্যাপক দুর্নীতি ৷ সব কিছু জানিয়ে তাঁরা বিডিওর কাছে প্রধানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷
পঞ্চায়েত সদস্য আশরাফুল হক বলেন, "আমরা শ্রীপুর 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি ৷ স্বচ্ছ ভারত মিশনে এর আগে 140টি স্কিমের কাজ হয়েছে ৷ পরবর্তীতে 160টি স্কিমের কাজ চলছে ৷ প্রথম স্কিমে কোনও কাজ হয়নি ৷ পরের স্কিমে যে কাজ হচ্ছে, তা ভীষণ নিম্নমানের ৷ কোনও কমিউনিটিতে কাজ হচ্ছে না ৷ ব্যক্তিগতভাবে সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ স্কুল, মসজিদ-মন্দির, ক্লাবের মতো জায়গায় সোপ ট্যাংক না করে প্রধান তাঁর পছন্দের লোকজন, আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে সেসব তৈরি করছেন ৷ শিডিউলে যা রয়েছে, কাজে তা হচ্ছে না ৷ নির্দিষ্ট মাপেও ট্যাংক তৈরি হচ্ছে না ৷ যে ইট ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই ইট জলে ধুয়ে যাবে ৷ ধুস বালি দিয়ে কাজ হচ্ছে ৷ লোহার রডের জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশের লাঠি ৷ প্রধান, সিপিআইএম, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ক’জন মিলে এই দুর্নীতি চালাচ্ছেন ৷ এনিয়ে আমরা গত 19 মার্চ বিডিওর কাছে অভিযোগ জানাই ৷ কাজ হয়নি ৷ তাই গত 27 অগস্ট বিডিওকে ফের অভিযোগ করেছি ৷ বিডিও যদি প্রধান ও দোষী সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন, তবে আমরা আগামীতে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব ৷"
আরেক পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, "প্রধানের কাছে কাজের খোঁজ নিলে তিনি আমাদের বলেন, কাজ বেরোয়নি ৷ অথচ দেখতে পাচ্ছি কাজ হচ্ছে ৷ আমাদের প্রধান সিপিআইএম, কংগ্রেস আর বিজেপিকে নিয়ে পঞ্চায়েত চালাচ্ছেন ৷ আমরা শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্য হয়েও দফতরে বসতে পারি না ৷ আর ওরা সরকারি অফিসের টেবিলে বসে মদ্যপান করে ৷ আমরা সবকিছুই বিডিওকে জানিয়েছি ৷ এখন স্বচ্ছ ভারত মিশনে যে কাজ হচ্ছে, তাতে প্রতি ইউনিটে পাঁচ হাজার টাকাও খরচ হবে না ৷ এখনও পর্যন্ত বিডিও কোনও পদক্ষেপ করেননি ৷ প্রয়োজনে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব ৷"
পঞ্চায়েত প্রধান আনিকুল হকের দাবি, "শুনেছি বিডিওর কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ কাজ করতে গিয়ে হয়তো কিছু ভুল হয়েছিল ৷ বিডিও নিজে তদন্ত করে গিয়েছেন ৷ মিস্ত্রির কিছু ভুল তিনিও দেখেছেন ৷ এটা ঠিকাদার আর মিস্ত্রির ভুল ৷ বিডিও তাঁদের বলে গিয়েছেন, মান খারাপ হলে সেই কাজ নেওয়া যাবে না ৷ বাঁশের লাঠি দিয়ে আসলে সাটারিং-এর কাজ চলছে ৷ কারণ, এত বড় সোপ ট্যাংকের ঢাকা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে না ৷ কাজের ক্ষেত্রে ভুল হতেই পারে ৷ আমরা কোনও দুর্নীতিতে জড়িত নয় ৷ যাঁরা এই অভিযোগ করেছেন, তাঁরাই গত 10 বছর ধরে চুরি করে যাচ্ছে ৷ ক্যাগের রিপোর্টে এই পঞ্চায়েতের দুর্নীতির কথা উঠে এসেছে ৷ এনিয়ে মামলাও চলছে ৷ সেই চোররাই এখন দুর্নীতির কথা বলছে ৷ আমরা দুর্নীতি করি না ৷ মানুষের কাজ করি ৷" রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের বিডিও শেখর শেরপা বলেন, "পঞ্চায়েত সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ খুব দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জেলা প্রশাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ৷"