বারাসত, 21 অক্টোবর: ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীর অপহরণ মামলায় জামিনে মুক্ত হয়ে ইটিভি ভারতের সামনে বিস্ফোরক দাবি করলেন বারাসত পুরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সরদার । তাঁর কথায়, "ষড়যন্ত্রের শিকার আমি ! অপহরণ-কাণ্ডে সিআইডি গ্রেফতারের পর মারধর করে এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করানোর চেষ্টা করেছিল । যাতে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া যায় আমাকে ।"
মিলনের দাবি, "এই ঘটনার সঙ্গে কোনও যোগ নেই আমার । তা সত্ত্বেও কোনও রকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে আমাকে । বারবার আমার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে রাজ্যের তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থা । অত্যাচারও করা হয়েছে আমার উপর । যাতে আমি এই ঘটনা স্বীকার করে নিই ।" শাসকদল থেকে বহিষ্কৃত এই কাউন্সিলর এ দিন জোর গলায় প্রশ্ন তোলেন, "এই ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ কোথায় ?" সিআইডি'র বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কাউন্সিলর মিলন সরদার ।
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরার ব্যবসায়ী দেবব্রত দে'কে অপহরণ করে তিন দফায় মুক্তিপণ বাবদ 9 কোটি 30 লক্ষ টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সরদার ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে । অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত নেমে বারাসতের বাড়ি থেকে গত 19 সেপ্টেম্বর মিলনকে গ্রেফতার করে সিআইডি । গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয় শাসকদলের এই কাউন্সিলরকে । তৃণমূল নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এই ধরনের ঘটনা দলবিরোধী কাজের সামিল । শুধু মিলন সরদার নন, অপহরণ মামলায় সিআইডি গ্রেফতার করে মিলনের আরও ছয় সঙ্গীকে । এর মধ্যে এক প্রাক্তন পুলিশকর্মীও ছিলেন ।
সিআইডি সূত্রে খবর, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে সোদপুরে এক পরিচিতের আবাসনের নীচ থেকে অপহরণ করে ওই ব্যবসায়ীকে আটকে রাখা হয় বারাসতের একটি নামজাদা ফ্ল্যাটে । পরে, সেখান থেকে অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা গেলেও খোঁজ মিলছিল না তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সরদারের । পরে তিনি সিআইডি'র হাতে গ্রেফতার হন । এর আগেও দু'বার ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণের টাকা মিলন এবং তাঁর দলবল আদায় করেছিলেন বলে অভিযোগ ।
অপহরণ-কাণ্ডে সিআইডি'র এফআইআরে মূল অভিযুক্ত হিসেবে শাসকদলের এই কাউন্সিলরের নাম ছিল বলে খবর সূত্রের । অপহরণের 'মাস্টারমাইন্ড' সেই তৃণমূল কাউন্সিলর জামিন পেয়েছেন দীর্ঘ একমাস পর । রবিবার তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন ব্যারাকপুর মহকুমা আদালত । জামিন পেয়ে রাতেই বারাসতের বাড়িতে ফিরেছেন মিলন সরদার । আর তার 24 ঘণ্টার মধ্যেই দলের একাংশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে সরব হলেন বারাসত পুরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিলন সরদার । প্রকাশ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কিছু না-বললেও হাবেভাবে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বিপদের সময় দল পাশ না-দাঁড়ানোয় যথেষ্ট ক্ষুদ্ধ ।
আক্ষেপের সুরে মিলন বলেন, "সত্য যাচাই করার পর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত ছিল । 12 মিনিটের মধ্যেই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে । সুযোগও দেওয়া হয়নি ।" তবে সুযোগ পেলে দলীয় নেতৃত্বের কাছে তিনি সবটাই তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন মিলন । কারা ষড়যন্ত্র করেছে ? ষড়যন্ত্রের পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে ? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে চাইছেন বহিষ্কৃত এই তৃণমূল নেতা ।
এ দিকে, অপহরণের মুক্তিপণের টাকায় তিনি কোনও সম্পত্তি কেনেননি বলেও এ দিন দাবি করেছেন মিলন সরদার । তাঁর কথায়, "2015 সালে কাউন্সিলর হওয়ার আগে থেকেই বেশকিছু সম্পত্তি রয়েছে আমার নামে । সেটা সম্পূর্ণ নিজের টাকাতেই কেনা হয়েছে । তার সমস্ত কাগজপত্রও রয়েছে । আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এই ধরনের চক্রান্ত করা হয়েছিল । সবটাই যথাসময়ে দলকে জানিয়ে দেব ।"