বারাসত, 6 জুলাই: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের বাস্তবায়ন কোথায়? প্রশ্ন উঠছে, সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে যেখানে কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়; সেখানে বারাসত শহরে সরকারি জমি দখল করে গড়ে ওঠা তৃণমূল পার্টি অফিস বহাল তবিয়তে রয়েছে এখনও ৷ একদিন, দু-দিন নয়; বারাসত শহরে প্রশাসনের নাগের ডগায় শাসকদলের কার্যালয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে বছরের পর বছর ৷
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, রাজ্যের প্রতিটি জেলার সরকারি জমি বা ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ ও দখলদার মুক্ত করার কাজ চলছে ৷ প্রয়োজনে বুলডোজার দিয়ে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলা হচ্ছে ৷ সেখানে সরকারি জমিতেই তৃণমূলের পার্টি অফিস দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কংক্রিটের সেই পার্টি অফিস ভাঙা তো দূরের কথা ৷ উল্টে পার্টি অফিসে দোতলা করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে ৷ তার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে কংক্রিটের পিলারও ৷ এ ঘটনা কোনও গ্রামাঞ্চলের নয়, কলকাতা লাগোয়া উত্তর 24 পরগনার শহরতলি বারাসতের ৷
কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কীভাবে সেই পার্টি অফিস এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে সরকারি জমিতে? পুরসভা কিংবা প্রশাসন কেন তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙতে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না ? প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি শাসকদলের কার্যালয় হওয়াতেই হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে প্রশাসন ? এনিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরাও ৷ যদিও, কোন নেতৃত্বের সময় এই কার্যালয়টি গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে বারাসত পুরসভার বর্তমান এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যানের মধ্যে ৷
সূত্রের খবর, 2010 সালে বারাসত পুরবোর্ডের ক্ষমতা তৃণমূলের হাতে আসে ৷ তার পরপরই হাটখোলা এলাকায় রাতারাতি গজিয়ে ওঠে শাসকদলের এই কার্যালয়টি ৷ এলাকাটি পৌরসভার 26 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ৷ সরকারি এই জমির পরিমাণ দেড় কাঠা ৷ অভিযোগ সেই জমি দখল করেই গড়ে তোলা হয়েছে শাসকদলের কার্যালয় ৷
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, "পার্টি অফিসটি প্রথমে পাকাপোক্ত ছিল না ৷ পরে, সেটির ভোলবদল করে কংক্রিটের তৈরি হয়েছে ৷" জানা যাচ্ছে, একসময় এই পার্টি অফিস থেকেই শাসকদলের বারাসত শহরের সংগঠন পরিচালিত হত ৷ যার ফলে পার্টি অফিসটি বারাসত শহর তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় হিসেবেই চিনত সকলে ৷ যদিও পরবর্তীতে শহর তৃণমূলের কার্যালয়টি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র ৷ তবে, পার্টি অফিসের মাথায় এখনও জ্বলজ্বল করছে বারাসত শহর তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের নাম ৷ বর্তমানে পার্টি অফিসটি ব্যবহার হচ্ছে তৃণমূলের 26 নম্বর ওয়ার্ডের কার্যালয় হিসেবে ৷ এই পার্টি অফিসে দু’টি ঘর রয়েছে ৷ একটি বেশ বড় ৷ অপরটি তুলনামূলক ছোট ৷
তৃণমূলের ওই পার্টি অফিসের ঠিক সামনেই রয়েছে শহিদ বেদি ৷ তার উপর লোহার পাইপে টাঙানো তৃণমূলের পতাকাও ৷ অর্থাৎ, তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচি পালন করার সমস্ত বন্দোবস্তই রয়েছ সেখানে ৷ প্রতি বছর দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে এই পার্টি অফিসেই ভিড় করেন বারাসতের তাবড় তৃণমূল নেতারা ৷ সেই তালিকায় পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়ও থাকেন ৷ পার্টি অফিসে রাজনৈতিক দলের যে কোনও কর্মসূচি হতেই পারে, তার মধ্যে বিতর্কের কিছু নেই ৷ বিতর্ক একটা জায়গাতেই, সেই পার্টি অফিস যেহেতু সরকারি জায়গায় হয়ে থাকে ৷ যা ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে হাটখোলায় শাসকদলের পার্টি অফিস-কে কেন্দ্র করে ৷
সরকারি জমিতে শাসকদলের পার্টি অফিস গড়ে ওঠা নিয়ে বারাসত পুরসভার বর্তমান ও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের মধ্যে চলছে দায় ঠেলাঠেলির পালা ৷ এনিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় দাবি, তাঁর আমলে এই পার্টি অফিস তৈরি হয়নি ৷ আগের পুরবোর্ড ও তার চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে ভালো বলতে পারবেন ৷ দলীয় কার্যালয়টি বৈধ না অবৈধ, তাও জানা নেই ৷
যদিও, এই ইস্যুতে পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বর্তমান তৃণমূল কাউন্সিলর সুনীল মুখোপাধ্যায় ৷ তাঁর অভিযোগ, "যিনি একথা বলছেন, তাঁকেই তো এই পার্টি অফিসে বেশি দেখা গিয়েছে ৷ তাই, এই ধরনের মন্তব্য অযৌক্তিক ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঠিক কথাই বলেছেন ৷ সরকারি জমিতে দলীয় কার্যালয় তৈরি হয়ে থাকলে তা ভেঙে ফেলা উচিত বলেই আমি মনে করি ৷ এতে তো কারোর অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ৷"
অপরদিকে, এই ইস্যুতে শাসকদলকে নিশানা করেছে বিরোধী শিবির ৷ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই ৷ যদি থাকত তাহলে হাটখোলার পার্টি অফিস অনেক আগেই ভেঙে দেওয়া হত ৷ আসলে ওনার নির্দেশকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না দলের নেতা-কর্মীরা ৷ উনি একটা কাজই ভালো জানেন, বিরোধীদের কীভাবে জব্দ করতে হবে ৷"