কলকাতা, 30 ডিসেম্বর: পরপর বড় গাড়ি, পাইলট কার । কড়া নিরাপত্তায় রাত বারোটার পরে গ্রিন করিডর করে আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে বাঘিনী জিনাতকে । আপাতত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাকে । আগামী কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে থাকবে ভিভিআইপি বাঘিনী জিনাত ।
সকালে কেজি পাঁচেক মোষের মাংস খেতে দেওয়া হয়েছে তাকে । এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য শারীরিক অবনতি বা সমস্যা চোখে পড়েনি চিকিৎসকদের । কোনও প্রকার শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ৷ তার জন্য আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা উপস্থিত রয়েছেন । তবে শেষ পর্যন্ত জিনাতকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় রাখা হবে নাকি ওড়িশাতে ফেরত পাঠানো হবে, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি ।
এ বিষয়ে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় ইটিভি ভারতকে বলেন, "আপাতত পর্যবেক্ষণে আছে জিনাত ৷ সকালে খেতে দেওয়া হয়েছিল ৷ তবে সে খায়নি ৷ এতে সমস্যার কিছু নেই ৷ কারণ গত কয়েকদিন বাঘিনী জঙ্গলে ছিল ৷ সেখানে সে পশু শিকার করে খেয়েছে ৷ বাঘ যে প্রতিদিন খাবে এমটা নয়, এতে চিন্তার কিছু নেই ৷ এখনও পর্যন্ত অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি ৷ ওষুধপত্র দেওয়া হয়েছে কি না নতুন করে খোঁজ নিতে হবে ৷ পরবর্তীকালে জিনাতকে কোথায় পাঠানো হবে তার সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি ৷"
সোমবার আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রের দাবি, শেষ পর্যন্ত বাঘিনী জিনাতের ঠিকানা কোথায় হবে, তা সরকারই ঠিক করবে । এখনও পর্যন্ত তার কোনও শারীরিক সমস্যা নজরে আসেনি । ঘুমপাড়ানি ইনজেকশন দেওয়ায় ড্রাউজিনেস আছে ।
ইটিভি ভারতকে রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, "ওড়িশা সরকার তো ওকে নিশ্চয়ই ফেরত পেতে চাইবে । তখনই ওকে ফেরত পাঠানো হবে । আপাতত পর্যবেক্ষণে আছে । যতক্ষণ না ওড়িশা সরকারের তরফে আমরা কোনও প্রকার চিঠি বা ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আবেদন পাচ্ছি, ততদিন আমাদের পর্যবেক্ষণই থাকবে জিনাত ।"
বাঘবন্দি খেলা পর্ব রবিবারই শেষ হয়েছে । রাজ্যের বন জঙ্গল ঘুরে শেষমেশ বনদফতরের ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয়েছে জিনাত । বাঁকুড়ার রানিবাদের গোসাইডিহা গ্রাম লাগোয়া ঝোঁপ থেকে খাঁচাবন্দি করা হয় তাকে । এরপর বড় বড় গাড়ি ছুটিয়ে গ্রিন করিডর করে গতকাল রাত বারোটার পর কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় । এই 10 দিনের বাঘবন্দি খেলাতে জিনাত শারীরিকভাবে হাঁপিয়ে উঠেছে ৷ তবে বনদফতরের কর্মীরা এখন চিন্তামুক্ত ৷
গত 20 ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের জিয়াবান্দীর জঙ্গল হয়ে বাঘিনী জিনাত পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে প্রবেশ করে । 22 ডিসেম্বর ঝাড়গ্রামের জঙ্গলপথ পেরিয়ে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলে ঢোকে সে । এর ঠিক পাঁচদিন পর বান্দোয়ান ছেড়ে বড় থানার পায়সা গোড়ার ঝাটিপাহাড়ি জঙ্গলে আশ্রয় নেয় । ফের জেলা বদল করে বাঁকুড়ার রানিবাঁধের গোসাইডিহাতে ঘাঁটি গাড়ে জিনাত ।
জিনাতের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর নজর রাখেন বনদফতরের কর্মীরাও ৷ কিন্তু জিনাত জঙ্গল পরিবর্তন করতে থাকে । বনকর্মীরাও গোসাইডিহিতে অভিযান চালান রাতভর । শেষমেষ 29 ডিসেম্বর দুপুরে বনকর্মীদের তিনটি দল ঘুমপাড়ানি গুলির মাধ্যমে বাঘিনী জিনাতকে নিস্তেজ করেন ও তাকে খাঁচাবন্দি করেন ।
এখন দেখার ওড়িশা সরকার রাজ্যের বনদফতরকে কী বার্তা পাঠায় । তারা জিনাতকে ফেরত নিতে চাইছে নাকি বিকল্প কোনও উপায়ের কথা ওড়িশা সরকার বলবে, সেদিকেই তাকিয়ে আছে রাজ্যের বনদফতর ।