বিধাননগর, 29 জানুয়ারি: শুরু হয়ে গিয়েছে 48তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ৷ এবারের বইমেলায়ও আত্মপ্রকাশ পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই ৷ মঙ্গলবার তাঁর লেখা তিনটি বই মেলা থেকে প্রকাশ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ৷ এই নিয়ে বইমেলায় তাঁর প্রকাশিত মোট বইয়ের সংখ্যা দাঁড়াল 153 ৷
গত বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলায় প্রকাশিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইয়ের সংখ্যা 150 ছুঁয়েছিল । বইমেলায় 2024 সালে সাতটা বই বেরিয়েছিল রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান তথা তৃণমূল সুপ্রিমোর । এবার সেই সংখ্যাটা তিন । কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনটে বই প্রকাশিত হয়েছে । যার ফলে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াল 153 ৷
এবছর যে তিনটি বই কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলি হল, 'লিপিবদ্ধ কিছু কাজ', 'বাংলার নির্বাচন ও আমরা' এবং সর্বশেষ বইটির নাম 'স্যালুট টু' । বইয়ের ভূমিকা অনুযায়ী 'স্যালুট টু' সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই লিখেছেন, "কিছু বছর আগে আমি একটি বই লিখেছিলাম ৷ যেখানে কবিতার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলাম আমাদের বরেণ্য মণীষীদের । শুরুতে বাংলাতেই তা লিখেছিলাম, পরে ইংরেজিতেও সেটি অনুবাদ করা হয় ।" তারই দ্বিতীয় সংস্করণ এই বইটি । বাংলা এবং ইংরেজি কবিতার মাধ্যমে 50 জন বাংলার মণীষীকে স্মরণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এখানে পাঁচজন মহীয়সী নারীকে নিয়েও কবিতা লিখেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ।
তৃণমূল কংগ্রেসের লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত
'বাংলার নির্বাচন ও আমরা'র পটভূমি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন এবং তাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা । এই বই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থাৎ এর লেখিকা যেটা লিখছেন, "বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন লগ্নে জন্ম হয় । তবে আমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করলে আমি বলব আমার জন্ম হয়েছিল লড়াই লগ্নে । কারণ আমার গোটা জীবনটাই কেটেছে লড়াই করতে করতে । ছোটবেলায় লড়াই করেছি অসচ্ছ্বলতার সঙ্গে । আর রাজনীতিতে আসার পর লড়াইটা হয়ে উঠেছিল আমার ধর্ম । যে লড়াই করতে আমি বাধ্য হয়েছিলাম মানুষের জন্য, বাংলার জন্য ।" একের পর এক নির্বাচনে সাফল্য এবং তৃণমূল কংগ্রেসের লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত নিয়েই এই বই 'বাংলার নির্বাচন ও আমরা' ৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বইগুলির চাহিদা তুঙ্গে
তৃতীয় তথা এবারে প্রকাশিত মুখ্যমন্ত্রীর শেষ বই, 'লিপিবদ্ধ কিছু কাজ' । যেখানে জায়গা পেয়েছে প্রথমে রেলমন্ত্রী এবং পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ নিয়ে কিছু উপলব্ধি ও কিছু ঘটনা । এই বইয়ে 'উন্নয়নের এক যুগ'-এই অংশে অর্থনৈতিক প্রগতি, নারী ক্ষমতায়ন, শিক্ষার প্রসারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি জায়গা পেয়েছে । মোটের উপর এই বইটি হল তাঁর আমলে হওয়া উন্নয়ন সম্পর্কিত ইতিহাসের দলিল ।
মুখ্যমন্ত্রীর এই তিন বই প্রসঙ্গে দেজ পাবলিশার্সের অন্যতম উদ্যোক্তা অপু দে বলেন, "প্রত্যেক বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বইগুলির চাহিদা থাকে বইমেলায় । এবারও তিনি তিনটি বই লিখেছেন । যেগুলি প্রকাশিত হয়েছে এবারের বইমেলায় । আমরা আশা করছি, এবারও এই বইগুলি যথেষ্ট পাঠকের ভালোবাসা পাবে ।" তিনি জানিয়েছেন, অতীতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই বেস্ট সেলার হয়েছে । কাজেই এই বইগুলি নিয়েও পাঠকের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে ।
মুখপত্রের স্টলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত
1998 সালে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হলেও বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন কাহিনী জানেন না । মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে হওয়া শেষ জাতীয় কর্ম সমিতির বৈঠকে তাই যুবপ্রজন্মকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের কথা বেশি তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি । এবার তার জন্য বইমেলার মাঠকেই বেছে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ।
যদিও খাতায়-কলমে কোনও রাজনৈতিক দলের কোনও কর্মসূচি বা কোনও স্টল কলকাতা বইমেলা প্রাঙ্গণে নেই । এ বছর এই দিকটায় বিশেষভাবে নজর দিয়েছেন বইমেলা কর্তৃপক্ষ । তবে দলনেত্রীর আন্দোলনের ইতিবৃত্ত উপস্থাপনের সব থেকে বড় জায়গা হিসাবে শাসকদল বেছে নিয়েছে তাদের মুখপত্রের স্টলটিকে ।
তৃণমূলের মুখপত্রের স্টলের উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর
মুখপত্রের এই স্টলটি এদিন উদ্বোধন করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং । শুধু তাই নয়, এই স্টল তৈরির ভাবনা যে তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত তাও বইমেলার উদ্বোধন মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন তিনি । এদিন তৃণমূলের মুখপত্রের স্টল সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ওই স্টলটি আমার ভাবনা । থিম হল, মা মাটি মানুষ । স্টলের মাঝখানে একটি গাছ লাগানো আছে । ওটা একটা অর্জুন গাছ । মাটির বাড়ি রয়েছে ৷ আগে দেখা যেত কুলঙ্গির মধ্যে বই থাকত । সেটাই স্টলে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ।"
এ তো গেল থিমের কথা । মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন সেই বিবরণ । তবে বাস্তবে তৃণমূলের মুখপত্রের স্টলে গিয়ে চোখে পড়েছে কুলঙ্গিতে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বিভিন্ন বই । আর ভেতরের দেওয়ালে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সারিবদ্ধ ছবি । যে ছবিতে কোথাও দেখা যাচ্ছে, মাথায় ব্যান্ডেজ হাতে প্লাস্টার করা অবস্থায় গাড়ি থেকে নামছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
স্টল সেজে উঠেছে মমতার ছবি ও বইয়ে
আবার কোথাও ছবিতে উঠে এসেছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির সঙ্গে একই ফ্রেমে রয়েছেন মমতা । কোথাও ফ্রেমবদ্ধ রয়েছে অটল বিহারী বাজপায়ীর মমতার বাড়িতে আসার ছবি । কোথাও রেলমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথের ছবি জায়গা পেয়েছে দেওয়ালে । একইভাবে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলন খুব স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে এখানকার ছবিতে । আছে, একুশে জুলাইয়ের সেই রক্তাক্ত দিনের মুহূর্ত । রয়েছে মমতার 27 দিন অনশনের ছবিও ।
তৃণমূলের মুখপত্রের স্টলে মমতা বন্দ্যোাপাধ্যায়ের বিভিন্ন মুহূর্তের এই ছবির কারণ খুঁজতে ইটিভি ভারত কথা বলে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের সঙ্গে । তাঁর কথায়, "আন্দোলনের লগ্নে জন্ম দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । আজকের যুব সমাজের অনেকেই তাঁর আন্দোলন ও লড়াইয়ের কথা জানে না । বাংলার মানুষের জন্য তাঁর আন্দোলন, চোয়াল চাপা লড়াইয়ের যে ইতিহাস রয়েছে সেটাই আমরা যুব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাইছি ।"
তিনি আরও বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের নীতি এবং আদর্শ মানুষের জন্য লড়াই । যে পথ দেখিয়েছেন দলনেত্রী ৷ তাই এই ছবিগুলির মাধ্যমে আমরা সবাইকে মানুষের জন্য কাজ করার যে পথ দলনেত্রী দেখিয়েছেন, যে লড়াইয়ের কথা তিনি বলেছেন, সেটাই আরও একবার মনে করিয়ে দিতে চাইছি ।" তিনি এও জানিয়েছেন, এই স্টল তৈরির সম্পূর্ণ ভাবনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । তাঁর ভাবনাকে বাস্তব রূপ দান করেছেন শিল্পীরা ।