কলকাতা, 12 এপ্রিল: দাঁড়িভিট মামলায় মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও এডিজি সিআইডি হাজিরা না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ রাজ্য প্রশাসনের এই তিন শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা উচিত বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা । শুক্রবার বিচারপতি বলেন, ‘‘আদালত ওয়ারেন্ট অফ অ্যারেস্ট ইস্যু করে দিতো । তবে এই ক্ষেত্রে আদালত আরও একটা সুযোগ দিতে চায় । সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও এডিজি সিআইডকে হাজিরা দিতে হবে ।’’
দাঁড়িভিটে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় এনআইএ তদন্ত কার্যকর না করা ও ক্ষতিপূরণের নির্দেশ কার্যকর না করার জন্য আগেই রাজ্যের তিনশীর্ষ কর্তার বিরুদ্ধে রুল জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট । তাদের হাইকোর্টে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা । সেই নির্দেশের পরও ওই তিন শীর্ষকর্তা হাজিরা না দেওয়ায় এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি মান্থা ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা উচিত, এমন বলারও পর আরেকটা সুযোগ দেন ৷ আর আগামী সোমবার হাজিরার নির্দেশ দেন ৷ তবে এই নির্দেশের কিছুক্ষণ পর রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল এসে ওই তিন শীর্ষকর্তার হাজিরার নির্দেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন ।
তখন বিচারপতি বলেন, ‘‘আগের দিন আপনার মক্কেলদের ভার্চুয়াল মাধ্যমেও হাজির থাকতে কে বাধা দিয়েছিল ? এটা শুধু বিচারব্যবস্থা নয়, রাজ্যের সম্মানও নষ্ট করল । এটা কোনও ব্যক্তিগত ইস্যু নয় । এটা প্রতিষ্ঠানের জন্য খারাপ বার্তা । তাঁরা কোনও নিচুতলার কর্মী নন । রাজ্যের শীর্ষ আমলা তাঁরা । অতি গুরুতর না বুঝলে সাধারণভাবে আমি কোনও থানার ওসি-কে পর্যন্ত সশরীরে হাজির হতে বলি না । সেখানে বাধ্য হয়ে তাঁদের হাজির হতে বলা হয়েছিল । তাঁরা হলফনামা দিয়ে বক্তব্য জানাবেন । সোমবার সশরীরে নয়, তাঁরা সাড়ে 10টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির থাকবেন ।’’
এর আগে শুনানিতে বিচারপতি কটাক্ষ করে বলেন, "রাজ্যের মুখ্যসচিব অনলাইনে আসারও প্রয়োজন বোধ করলেন না!" বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীকে বলেন, "আপনার মক্কেল সবকিছুর ঊর্ধ্বে । ওঁরা কোনও কিছুকেই ভয় পান না । আদালতকে তো না-ই ! হাজিরা থেকে ওঁদের আদালত অব্যাহতি দেয়নি । এমনকি ওঁরা সশরীরে হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে কোনও আবেদনও করেননি ।"
উল্লেখ্য, দাঁড়িভিটের ঘটনায় সিঙ্গল বেঞ্চের তরফে দেওয়া এনআইএ তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দারস্থ হয়েছিল রাজ্য । এনআইএ তদন্ত নিয়ে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রাখে ডিভিশন বেঞ্চ । ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, এনআইএ-কে তদন্তের সব নথি তুলে দেবে রাজ্য । ক্ষতিপূরণের টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে বলে নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ । একইভাবে রুল ইস্যুতে কোনও স্থগিতাদেশ নয় বলেও জানিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ । গত বছর 15 মে দেওয়া বিচারপতি মান্থার নির্দেশ মানা হল কি না, সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ।
আরও পড়ুন: