কালিম্পং, 28 সেপ্টেম্বর: টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি গোটা পাহাড়ে ৷ নতুন করে একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে ৷ শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সেভক, বিড়িকদাড়া, সেলফিদাড়া, ভুইচালে, চিত্রে-সহ বহু জায়গায় নতুন করে ধসের ঘটনা ঘটেছে ৷ এই কারণে ফের বন্ধ বাংলা সিকিম লাইফ লাইন 10 নম্বর জাতীয় সড়ক ৷
এদিকে, পাহাড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীতে জল বাড়ছে ৷ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তিস্তা ৷ মাল্লিতে তিস্তা নদীর জল গ্রাস করেছে 10 নম্বর জাতীয় সড়ক ৷ তিস্তা বাজারেও একই পরিস্থিতি ৷ তিস্তা, জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে ৷
সেচ দফতরের সতর্কতা
আবহাওয়া অফিস সূত্রে খবর, সাম্প্রতিককালে সেপ্টেম্বর মাসে সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে গাজোলডোবা, নাগরাকাটাতে ৷ তিস্তা নদীর দোমহনি থেকে মেখলিগঞ্জের বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতর ৷ পাশাপাশি জলঢাকা নদীর মাথাভাঙা পর্যন্ত অসংরক্ষিত লাল সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতরের নর্থ-ইস্ট বিভাগ ৷ পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টির জেরে সিকিম ও ভুটান থেকে নেমে আসা নদীগুলিতেও জল বাড়ছে ৷ তিস্তা নদীর গাজোলডোবা ব্যারেজ থেকে দফায় দফায় জল ছাড়ছে তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ ৷
কোথায় কত বৃষ্টি ?
জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গাজোলডোবাতে 253 মিলিমিটার, নাগরকাটাতে 265.4 মিলিমিটার, ডায়নাতে 221.8 মিলিমিটার, মুর্তিতে 231.8 মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে ৷
পাশাপাশি শিলিগুড়িতে 213.4 মিলিমিটার, চম্পাসারিতে 217 মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে 163 মিলিমিটার, বক্সাদুয়ারে 180.8 মিলিমিটার, হাসিমারাতে 184.8 মিলিমিটার, আলিপুরদুয়ারে 156.2 মিলিমিটার, গ্যাংটকে 106.6 মিলিমিটার, খানিটারে 95.4 মিলিমিটার, দার্জিলিংয়ে 149.4 মিলিমিটার, কালিম্পংয়ে 122.6 মিলিমিটার, সেভকে 203.8 মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে ৷
উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির লাল সতর্ক জারি করেছিল আবহাওয়া অফিস ৷ উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছিল ৷ সেই পূর্বাভাস অনুযায়ী লাগাতার বৃষ্টি হয়েই চলেছে ৷ পাশাপাশি কোচবিহার জেলায় কমলা সতর্কতা ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, উত্তর দিনাজপুরে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে ৷ উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে লাগাতার বৃষ্টি হয়েই চলেছে ৷
এই পরিস্থিতিতে 10 নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে সব যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন ৷ তিস্তা নদীর জলস্তর বিপদসীমায় বয়ে চলায় আতঙ্কে রয়েছে পাহাড়বাসী ৷ ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের তরফে মাইকিং করে এলাকাবাসীদের সতর্ক করা হয়েছে ৷
কালিম্পংয়ের জেলাশাসক বালাসুভ্রমণিয়ম টি বলেন, "10 নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গায় ধসের কারণে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷ তবে লাভা, গরুবাথান রাস্তাটি খোলা রয়েছে ৷ এদিকে তিস্তার জলস্ফীতি হয়েছে ৷ দু'পারের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবির প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৷ আমরা গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি ৷"
শুক্রবার সিকিম, কালিম্পং ও মিরিকে নতুন করে ধসের ঘটনা ঘটে । জানা গিয়েছে, সিকিমের মঙ্গন থেকে চুংথাং যাওয়ার রাস্তা ধসের কারণে বন্ধ । পাশাপাশি ফিডাং থেকে সাঙ্গেকেলাং যাওয়ার রাস্তায় শিপগিয়ারে ধসের ঘটনা ঘটেছে ।
এদিকে, দার্জিলিং জেলার মিরিকেও ভয়াবহ ধস নেমেছে ৷ মিরিকের ডাডা গ্রাম পঞ্চায়েতের থরবু গ্রামে ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি বাড়ি । আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে আরও বহু ঘরবাড়ি । স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ সেইসব বাড়ির লোকেদের অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে ৷ একই পরিস্থিতি বিজনবাড়ি এলাকাতেও । সেখানেও ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি বাড়ি ৷ আরও পাঁচটি বাড়ি আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকায় সেইসব বাড়ির সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে ।