ETV Bharat / state

ফার্স্ট ফ্লাশের আগে বৃষ্টি নেই, খামখেয়ালি আবহাওয়ায় বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা উত্তরের চা বলয়ে - DARJEELING TEA

ফার্স্ট ফ্লাশের আগে বৃষ্টির দেখা নেই ৷ খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণে গত বছরের পর এবছরও বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা করছে উত্তরের চা বলয় ৷

ETV BHARAT
খামখেয়ালি আবহাওয়ায় বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা উত্তরের চা বলয়ে (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 25, 2025, 7:58 PM IST

Updated : Feb 25, 2025, 10:07 PM IST

জলপাইগুড়ি, 25 ফেব্রুয়ারি: তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই...৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে এখন এই গানই আওড়ে চলেছে উত্তরবঙ্গের চা বলয় ৷ ফার্স্ট ফ্লাশের চা পাতা তোলার সময় চা চাষিরা চাতক পাখির মতো বৃষ্টির অপেক্ষায় ৷ গত বছরও অনাবৃষ্টির কারণে 109 মিলিয়ন কেজি কম চা উৎপাদন হয়েছিল ৷ এবারও ফার্স্ট ফ্লাশের আগে বৃষ্টি নেই । ফলে মাথায় হাত চা চাষিদের ৷ আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় গতবারের মতো এবারও বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা করছে উত্তরের চা বলয় ।

ভারতীয় চা পর্ষদের নির্দেশিকা অনুযায়ী, 30 নভেম্বর চা পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যায় ৷ আবার ফেব্রুয়ারি মাসে চা পাতা তোলা শুরু হয়েছে ৷ তবে এই গোটা সময়টায় অর্থাৎ নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা নেই ৷ ফলে ফার্স্ট ফ্লাশে তেমন পাতাও নেই ৷ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে যেটুকু পাতা এসেছে, তার গুণগত মানও একেবারেই ভালো নয় ৷ আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় ঘুম ছুটেছে চা চাষিদের ৷

খামখেয়ালি আবহাওয়ায় বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা উত্তরের চা বলয়ে (ইটিভি ভারত)

গত বছর ফার্স্ট ফ্লাশের আগে টানা সাত মাস ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকার কারণে চা উৎপাদনে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েন চা মালিকরা । একে তো অনাবৃষ্টি, তার উপরে পোকামাকড়ের আক্রমণে উৎপাদনে ঘাটতি হয় । গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের ফলে চা বাগানের পাতা ঝলসে যায় । চায়ের উৎপাদন 40% কমে গিয়েছিল ।

বিগত দিনে প্রতি বছর তরাই ডুয়ার্সে ডিসেম্বর মাসের 30 তারিখ পাতা তোলা বন্ধ হত । এ বছর চা পর্ষদের নির্দেশিকায় 30 নভেম্বর চা পাতা তোলা বন্ধ হয়েছে । 30 নভেম্বরের পরে চা চাগানের পরিচর্যার কাজ করা হয় । এ বছর চা পর্ষদের নির্দেশিকার ফলে ফেব্রুয়ারি মাসের 10 তারিখে চা পাতা তোলা শুরু হয় । যা কি না অন্যান্য বছরের তুলনায় একমাস আগেই শুরু হয় ৷ এবার চা পাতা তোলা হয়েছে শুখা মরসুমে ৷ বৃষ্টি না থাকার কারণে কৃত্রিম ভাবে জল সেচের ব্যবস্থা করা হয় চা বাগানে । তাতে চা পাতার গুণগত মান ও উৎপাদন ভালো হয়নি বলে এবারও ফার্স্ট ফ্লাশে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে । গত বছর মে মাসে সেকেন্ড ফ্লাশেও উৎপাদনে ঘাটতি ছিল । এবারও সেই আশঙ্কা রয়েছে ৷

ETV BHARAT
ফার্স্ট ফ্লাশের আগে বৃষ্টি নেই (নিজস্ব চিত্র)

গত বছর চায়ের উৎপাদন কম হওয়ায় চা শ্রমিকরা বোনাস কম পেয়েছেন । চায়ের উৎপাদনের উপর যেমন মালিকপক্ষের লাভ নির্ভর করে, তেমনই শ্রমিকদের পুজো বোনাসও নির্ভর করে । তরাই ডুয়ার্সের দুই শতাধিক চা বাগানে পুজো বোনাসের প্রায় 500 কোটি টাকা উত্তরের বাজারে লেনদেন হয় । ফলে এই সময়ে উত্তরের বাজার অর্থনৈতিক ভাবে চাঙ্গাও হয় । ফলে চা বাগানের উৎপাদনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে ।

চা বাগান মালিক সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ITPA) মুখ্য উপদেষ্টা অমৃতাংশ চক্রবর্তী বলেন, "বৃষ্টি না হওয়ার ফলে ফার্স্ট ফ্লাশের চা পাতার গুণগত মান ভালো হচ্ছে না । বৃষ্টি না হলে খুব বিপদ । কৃত্রিম ভাবে জল সেচ করে চা পাতার ভালো প্রোডাকশন পাওয়া সম্ভব নয় । ফলে এই মুহূর্তে বৃষ্টিপাত খুবই জরুরি । চা চাষ যেহেতু প্রকৃতি নির্ভর, ফলে আবহাওয়ার উপরে চায়ের গুণগত মান ও উৎপাদন নির্ভর করে । স্বাভাবিক ভাবেই বৃষ্টিপাত না হলে অঙ্কুরোদ্গম বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে । এমন চলতে থাকলে আশঙ্কা করছি ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদন এবারও মার খাবে ৷ পাশাপাশি এর প্রতিফলনে সেকেন্ড ফ্লাশেও একটা ধাক্কা আসবে ।"

2023 সালের থেকে 2024 সালে বৃষ্টির অনুপাত অনেক কম হয়েছিল । 9-10 সেমি বৃষ্টি কম হওয়ায় চা পাতা যে পরিমাণ উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল, তা ব্যাহত হয় । বৃষ্টি না হওয়ায় পোকামাকড়ের সংক্রমণ বেশি হয় । আর স্প্রে করে পোকামাকড় তাড়ানোও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার ।

ETV BHARAT
খামখেয়ালি আবহাওয়ায় বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা চা চাষে (নিজস্ব চিত্র)

এদিকে, জলপাইগুড়ির চা চাষী সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী জানান, "গত কয়েক বছর থেকে আবহাওয়ায় খামখেয়ালিপনার জন্য চা পাতা উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে । এই বছর প্রায় সাড়ে সাত মাস বৃষ্টি নেই । বৃষ্টি না থাকার কারণে কৃত্রিম উপায়ে জল সেচ দিয়ে গাছকে বাঁচানো হয়েছে কিন্তু উৎপাদন আসেনি । ভারতে 2024 সালে 17 মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ 22% চা উৎপাদন কম হয়েছে । উত্তরবঙ্গেই ক্ষুদ্র চা বাগানে চা উৎপাদনে বিরাট ক্ষতি হয়েছে । চা যেহেতু প্রকৃতি নির্ভর একটা শিল্প, সুতরাং বৃষ্টি না হলে উৎপাদন মার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এর ফলে ফার্স্ট ফ্লাশ ও মে মাসের সেকেন্ড ফ্লাশে ব্যাপক ক্ষতি হয় ।"

তিনি আরও বলেন, 2024 সালের মার্চ মাসে সারা ভারতে চায়ের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে । 2024 সালের মার্চ মাসে মোট চায়ের উৎপাদন হয় 62.52 মিলিয়ন কেজি, যা 2023 সালে ছিল 73.61 মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ 17.09 মিলিয়ন কেজি কম উৎপাদন হয় । 2023 সালের তুলনায় মার্চে প্রায় 22 শতাংশ কম উৎপাদন হয়েছে ।

2024 সালের মার্চ মাসের উৎপাদনের মধ্যে ক্ষুদ্র চা বাগানগুলোর অবদান 34.25 মিলিয়ন কেজি ও বড় বাগানের অবদান 24.27 মিলিয়ন কেজি । পশ্চিমবঙ্গে 2024 সালে মোট চা উৎপাদন হয়েছে 24.05 মিলিয়ন কেজি । 2023 সালে যা ছিল 30 মিলিয়ন কেজি । প্রায় 6 মিলিয়ন কেজি চা কম উৎপাদন হয়েছে । চায়ের উৎপাদন কম হওয়ার পিছনে চা বিশেষজ্ঞরা মূলত আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন । এছাড়া অনাবৃষ্টি, প্রখর রোদ, বৃষ্টিপাতের অভাবের সঙ্গে ব্যাপক পোকামাকড়ের উপস্থিতি উৎপাদন কম হওয়ার মূল কারণ ।

টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (TAI)-র সম্পাদক সুমিত ঘোষ জানান, "এই মরশুমে অনেক ক্ষতি হতে পারে ৷ পাতা এখনও আসেনি । বৃষ্টি আসেনি । বৃষ্টি নেই কয়েক মাস ধরেই । একটা বৃষ্টি হলে ভালো । গত বছর প্রকৃতির খেলায় বিরাট ক্ষতি হয়েছিল । এই বছর সবাই খুব আশাবাদী । প্রকৃতির উপর নির্ভর করে আছে । সেচ বিদ্যুৎ অনেক ব্যয়সাপেক্ষ । এটার ফল ভালো হলে ভালো । ভালো দাম পাব ভেবেছিল । ফার্স্ট ফ্লাশে 2023 সাল পর্যন্ত দাম ছিল 220-225 টাকা কেজি । 2024 সালে সেই দাম কেজিতে 35-40 টাকা কমে যায় ভালো পাতা না পাওয়ার কারণে । নিলামে কেজিতে 80-85 টাকা (সেপ্টেম্বর 2024) কমে যায় দাম ৷"

টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (TAI) সুত্রে জানা গিয়েছে, 2023 সালে উত্তরবঙ্গে চা উৎপাদন হয়েছিল 422.64 মিলিয়ন কেজি । যা গোটা দেশের চা উৎপাদনের 31%। 2023 সালে চায়ের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় উত্তরবঙ্গে । সেবার উৎপাদন 18% বাড়ে । 2009 সাল থেকে উত্তরবঙ্গে সেটাই ছিল 15 বছরের মধ্যে সর্বাধিক চায়ের উৎপাদন ।

2009 সালে চায়ের উৎপাদন ছিল 979 মিলিয়ন কেজি । সেখানে দেশজুড়ে 2023 সালে উৎপাদন গিয়ে দাঁড়ায় 1394 মিলিয়ন কেজিতে । 2024 সালে উত্তরবঙ্গে চা উৎপাদন হয় 373.48 মিলিয়ন কেজি । অপরদিকে, 2024 সালে দেশের চা উৎপাদন ছিল 1285 মিলিয়ন কেজি, যা 2023 সালের থেকে 109 মিলিয়ন কেজি কম । সে বছর উত্তরবঙ্গে চায়ের উৎপাদন হয় 373.48 মিলিয়ন কেজি ।

শিলিগুড়ি টি অকশন সেন্টারের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা চা ব্যবসায়ী কমল তিওয়ারি বলেন, "প্রতি বছর আমরা ডিসেম্বর মাসে চা পাতা তোলা বন্ধ করি । তবে চা পর্ষদের নির্দেশে এবার নভেম্বর মাসে চা পাতা তোলা বন্ধ হয় । এবার বৃষ্টি না হলে আমরা মাঠে মারা পড়ে যাব । প্রোডাকশন ভালো হচ্ছে না । কৃত্রিম জলসেচ দিয়ে ভালো চা পাতা উৎপাদন আশা করা যায় না । ভালো পাতা না হওয়ায় কাঁচা পাতার দাম নেই । এখন চা পর্ষদের নির্দেশিকা মানতে গিয়ে আমরা বিপদে পড়ে গেলাম । ফার্স্ট ফ্লাশের এই অবস্থা, সেকেন্ড ফ্লাশে কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না ।"

জলপাইগুড়ি, 25 ফেব্রুয়ারি: তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই...৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে এখন এই গানই আওড়ে চলেছে উত্তরবঙ্গের চা বলয় ৷ ফার্স্ট ফ্লাশের চা পাতা তোলার সময় চা চাষিরা চাতক পাখির মতো বৃষ্টির অপেক্ষায় ৷ গত বছরও অনাবৃষ্টির কারণে 109 মিলিয়ন কেজি কম চা উৎপাদন হয়েছিল ৷ এবারও ফার্স্ট ফ্লাশের আগে বৃষ্টি নেই । ফলে মাথায় হাত চা চাষিদের ৷ আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় গতবারের মতো এবারও বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা করছে উত্তরের চা বলয় ।

ভারতীয় চা পর্ষদের নির্দেশিকা অনুযায়ী, 30 নভেম্বর চা পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যায় ৷ আবার ফেব্রুয়ারি মাসে চা পাতা তোলা শুরু হয়েছে ৷ তবে এই গোটা সময়টায় অর্থাৎ নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা নেই ৷ ফলে ফার্স্ট ফ্লাশে তেমন পাতাও নেই ৷ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে যেটুকু পাতা এসেছে, তার গুণগত মানও একেবারেই ভালো নয় ৷ আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় ঘুম ছুটেছে চা চাষিদের ৷

খামখেয়ালি আবহাওয়ায় বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা উত্তরের চা বলয়ে (ইটিভি ভারত)

গত বছর ফার্স্ট ফ্লাশের আগে টানা সাত মাস ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকার কারণে চা উৎপাদনে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েন চা মালিকরা । একে তো অনাবৃষ্টি, তার উপরে পোকামাকড়ের আক্রমণে উৎপাদনে ঘাটতি হয় । গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের ফলে চা বাগানের পাতা ঝলসে যায় । চায়ের উৎপাদন 40% কমে গিয়েছিল ।

বিগত দিনে প্রতি বছর তরাই ডুয়ার্সে ডিসেম্বর মাসের 30 তারিখ পাতা তোলা বন্ধ হত । এ বছর চা পর্ষদের নির্দেশিকায় 30 নভেম্বর চা পাতা তোলা বন্ধ হয়েছে । 30 নভেম্বরের পরে চা চাগানের পরিচর্যার কাজ করা হয় । এ বছর চা পর্ষদের নির্দেশিকার ফলে ফেব্রুয়ারি মাসের 10 তারিখে চা পাতা তোলা শুরু হয় । যা কি না অন্যান্য বছরের তুলনায় একমাস আগেই শুরু হয় ৷ এবার চা পাতা তোলা হয়েছে শুখা মরসুমে ৷ বৃষ্টি না থাকার কারণে কৃত্রিম ভাবে জল সেচের ব্যবস্থা করা হয় চা বাগানে । তাতে চা পাতার গুণগত মান ও উৎপাদন ভালো হয়নি বলে এবারও ফার্স্ট ফ্লাশে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে । গত বছর মে মাসে সেকেন্ড ফ্লাশেও উৎপাদনে ঘাটতি ছিল । এবারও সেই আশঙ্কা রয়েছে ৷

ETV BHARAT
ফার্স্ট ফ্লাশের আগে বৃষ্টি নেই (নিজস্ব চিত্র)

গত বছর চায়ের উৎপাদন কম হওয়ায় চা শ্রমিকরা বোনাস কম পেয়েছেন । চায়ের উৎপাদনের উপর যেমন মালিকপক্ষের লাভ নির্ভর করে, তেমনই শ্রমিকদের পুজো বোনাসও নির্ভর করে । তরাই ডুয়ার্সের দুই শতাধিক চা বাগানে পুজো বোনাসের প্রায় 500 কোটি টাকা উত্তরের বাজারে লেনদেন হয় । ফলে এই সময়ে উত্তরের বাজার অর্থনৈতিক ভাবে চাঙ্গাও হয় । ফলে চা বাগানের উৎপাদনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে ।

চা বাগান মালিক সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ITPA) মুখ্য উপদেষ্টা অমৃতাংশ চক্রবর্তী বলেন, "বৃষ্টি না হওয়ার ফলে ফার্স্ট ফ্লাশের চা পাতার গুণগত মান ভালো হচ্ছে না । বৃষ্টি না হলে খুব বিপদ । কৃত্রিম ভাবে জল সেচ করে চা পাতার ভালো প্রোডাকশন পাওয়া সম্ভব নয় । ফলে এই মুহূর্তে বৃষ্টিপাত খুবই জরুরি । চা চাষ যেহেতু প্রকৃতি নির্ভর, ফলে আবহাওয়ার উপরে চায়ের গুণগত মান ও উৎপাদন নির্ভর করে । স্বাভাবিক ভাবেই বৃষ্টিপাত না হলে অঙ্কুরোদ্গম বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে । এমন চলতে থাকলে আশঙ্কা করছি ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদন এবারও মার খাবে ৷ পাশাপাশি এর প্রতিফলনে সেকেন্ড ফ্লাশেও একটা ধাক্কা আসবে ।"

2023 সালের থেকে 2024 সালে বৃষ্টির অনুপাত অনেক কম হয়েছিল । 9-10 সেমি বৃষ্টি কম হওয়ায় চা পাতা যে পরিমাণ উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল, তা ব্যাহত হয় । বৃষ্টি না হওয়ায় পোকামাকড়ের সংক্রমণ বেশি হয় । আর স্প্রে করে পোকামাকড় তাড়ানোও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার ।

ETV BHARAT
খামখেয়ালি আবহাওয়ায় বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা চা চাষে (নিজস্ব চিত্র)

এদিকে, জলপাইগুড়ির চা চাষী সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী জানান, "গত কয়েক বছর থেকে আবহাওয়ায় খামখেয়ালিপনার জন্য চা পাতা উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে । এই বছর প্রায় সাড়ে সাত মাস বৃষ্টি নেই । বৃষ্টি না থাকার কারণে কৃত্রিম উপায়ে জল সেচ দিয়ে গাছকে বাঁচানো হয়েছে কিন্তু উৎপাদন আসেনি । ভারতে 2024 সালে 17 মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ 22% চা উৎপাদন কম হয়েছে । উত্তরবঙ্গেই ক্ষুদ্র চা বাগানে চা উৎপাদনে বিরাট ক্ষতি হয়েছে । চা যেহেতু প্রকৃতি নির্ভর একটা শিল্প, সুতরাং বৃষ্টি না হলে উৎপাদন মার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এর ফলে ফার্স্ট ফ্লাশ ও মে মাসের সেকেন্ড ফ্লাশে ব্যাপক ক্ষতি হয় ।"

তিনি আরও বলেন, 2024 সালের মার্চ মাসে সারা ভারতে চায়ের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে । 2024 সালের মার্চ মাসে মোট চায়ের উৎপাদন হয় 62.52 মিলিয়ন কেজি, যা 2023 সালে ছিল 73.61 মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ 17.09 মিলিয়ন কেজি কম উৎপাদন হয় । 2023 সালের তুলনায় মার্চে প্রায় 22 শতাংশ কম উৎপাদন হয়েছে ।

2024 সালের মার্চ মাসের উৎপাদনের মধ্যে ক্ষুদ্র চা বাগানগুলোর অবদান 34.25 মিলিয়ন কেজি ও বড় বাগানের অবদান 24.27 মিলিয়ন কেজি । পশ্চিমবঙ্গে 2024 সালে মোট চা উৎপাদন হয়েছে 24.05 মিলিয়ন কেজি । 2023 সালে যা ছিল 30 মিলিয়ন কেজি । প্রায় 6 মিলিয়ন কেজি চা কম উৎপাদন হয়েছে । চায়ের উৎপাদন কম হওয়ার পিছনে চা বিশেষজ্ঞরা মূলত আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন । এছাড়া অনাবৃষ্টি, প্রখর রোদ, বৃষ্টিপাতের অভাবের সঙ্গে ব্যাপক পোকামাকড়ের উপস্থিতি উৎপাদন কম হওয়ার মূল কারণ ।

টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (TAI)-র সম্পাদক সুমিত ঘোষ জানান, "এই মরশুমে অনেক ক্ষতি হতে পারে ৷ পাতা এখনও আসেনি । বৃষ্টি আসেনি । বৃষ্টি নেই কয়েক মাস ধরেই । একটা বৃষ্টি হলে ভালো । গত বছর প্রকৃতির খেলায় বিরাট ক্ষতি হয়েছিল । এই বছর সবাই খুব আশাবাদী । প্রকৃতির উপর নির্ভর করে আছে । সেচ বিদ্যুৎ অনেক ব্যয়সাপেক্ষ । এটার ফল ভালো হলে ভালো । ভালো দাম পাব ভেবেছিল । ফার্স্ট ফ্লাশে 2023 সাল পর্যন্ত দাম ছিল 220-225 টাকা কেজি । 2024 সালে সেই দাম কেজিতে 35-40 টাকা কমে যায় ভালো পাতা না পাওয়ার কারণে । নিলামে কেজিতে 80-85 টাকা (সেপ্টেম্বর 2024) কমে যায় দাম ৷"

টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (TAI) সুত্রে জানা গিয়েছে, 2023 সালে উত্তরবঙ্গে চা উৎপাদন হয়েছিল 422.64 মিলিয়ন কেজি । যা গোটা দেশের চা উৎপাদনের 31%। 2023 সালে চায়ের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় উত্তরবঙ্গে । সেবার উৎপাদন 18% বাড়ে । 2009 সাল থেকে উত্তরবঙ্গে সেটাই ছিল 15 বছরের মধ্যে সর্বাধিক চায়ের উৎপাদন ।

2009 সালে চায়ের উৎপাদন ছিল 979 মিলিয়ন কেজি । সেখানে দেশজুড়ে 2023 সালে উৎপাদন গিয়ে দাঁড়ায় 1394 মিলিয়ন কেজিতে । 2024 সালে উত্তরবঙ্গে চা উৎপাদন হয় 373.48 মিলিয়ন কেজি । অপরদিকে, 2024 সালে দেশের চা উৎপাদন ছিল 1285 মিলিয়ন কেজি, যা 2023 সালের থেকে 109 মিলিয়ন কেজি কম । সে বছর উত্তরবঙ্গে চায়ের উৎপাদন হয় 373.48 মিলিয়ন কেজি ।

শিলিগুড়ি টি অকশন সেন্টারের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা চা ব্যবসায়ী কমল তিওয়ারি বলেন, "প্রতি বছর আমরা ডিসেম্বর মাসে চা পাতা তোলা বন্ধ করি । তবে চা পর্ষদের নির্দেশে এবার নভেম্বর মাসে চা পাতা তোলা বন্ধ হয় । এবার বৃষ্টি না হলে আমরা মাঠে মারা পড়ে যাব । প্রোডাকশন ভালো হচ্ছে না । কৃত্রিম জলসেচ দিয়ে ভালো চা পাতা উৎপাদন আশা করা যায় না । ভালো পাতা না হওয়ায় কাঁচা পাতার দাম নেই । এখন চা পর্ষদের নির্দেশিকা মানতে গিয়ে আমরা বিপদে পড়ে গেলাম । ফার্স্ট ফ্লাশের এই অবস্থা, সেকেন্ড ফ্লাশে কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না ।"

Last Updated : Feb 25, 2025, 10:07 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.