তমলুক, 24 মে: তিন বহিরাগতের লড়াই দেখবে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক লোকসভা কেন্দ্র ৷ এখানে ভোট শনিবার ৷ এদিকে 'শুভেন্দুর গড়' নামে পরিচিত এই আসন থেকে অধিকারী পরিবারের কোনও সদস্য প্রার্থী হননি ৷ ভোটযুদ্ধ হবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এবং দুই দলের তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে ৷ তবে লড়াই যে দলেরই হোক না কেন, বাকিদের যুদ্ধটা কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তা বলাই যায় ৷ 1980 থেকে 2004 সাল- এই সময়ের মধ্যে মাত্র একবার বাদে বাদে দু'দশক তমলুকে রাজত্ব করেছে সিপিএম ৷ ছ'বারের বাম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে পরাজিত করেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ এখন তিনিই বিজেপিতে ৷
এহেন বৈচিত্র্যময় তমলুক আসনে এবার লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ বিচারপতি থাকাকালীন যিনি এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক নির্দেশ দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন ৷ আবার অনেকের রোষের মুখেও পড়েছেন ৷ শুনানি করতে করতে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল বিদ্বেষ তৈরি হয়েছিল তাঁর ৷ সেই কারণে বিচারপতি পদে ইস্তফা দিয়ে সটান রাজনীতির ময়দানে প্রবীণ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এর নেপথ্যে যে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী রয়েছেন তা কারও অজানা নয় ৷
প্রাক্তন বিচারপতির বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য ৷ এবারের লোকসভা ভোটে বঙ্গের কনিষ্ঠ প্রার্থী দেবাংশু, তৃণমূলের যুব সংগঠনের নেতা ৷ মাঝে মধ্যেই ঘাসফুলের হয়ে বিতর্কসভায় অংশ নিয়ে তিনিও বেশ পরিচিত নাম হয়ে উঠেছেন ৷ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ৷ পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কও সর্বজনবিদিত বিজেপি ও ঘাসফুলের সঙ্গে ভোটযুদ্ধের মাঠে আছেন সিপিআই(এম) প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পেশায় আইনজীবী এই বাম নেতা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলা লড়েছেন ৷ সোশাল মিডিয়ায় নেট নাগরিকদের কাছে তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় ৷
আরও পড়ুন: ঘাটালের কুর্সি দখলের লড়াইয়ে দেব-হিরণ, ফুটবে কোন ফুল ?
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে শুভেন্দুর জয়ের নেপথ্যে 2007 সালের নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের একটা বড় অবদান ছিল ৷ হলদি নদীর তীরে সালেম গোষ্ঠীর রাসায়নিক কারখানা গড়া নিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত ৷ সরকারের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল স্থানীয়রা ৷ সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শুভেন্দু ৷ আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় পুলিশ গুলি চালিয়েছিল ৷ মৃত্যু হয়েছিল 14 জনের ৷ এরপর বাম সরকারের পরিণতি কারও অজানা নয় ৷
2009-এর লোকসভা ভোটে শুভেন্দু অধিকারী প্রায় 55 শতাংশ ভোট পেয়ছিলেন ৷ আর সিপিএমের ছ'বারের সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের ঝুলিতে ছিল 40.50 শতাংশ ৷ ঘটনাচক্রে 2009 সালের ভোটে তমলুকের তিন প্রার্থীই এখন বিজেপিতে ৷ এরপর এই কেন্দ্র থেকে প্রতিবার তৃণমূলেরই জয় হয় ৷ 2014 সালে ফের জয়ী হন তৃণমূলের শুভেন্দু অধিকারী । তিনি 2016 সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম বিধানসভা থেকে প্রার্থী হন তিনি এবং জয়ী হন ৷ সেবছরই তমলুক আসনে উপ-নির্বাচন হয় ৷ আসনটি নিজের দখলে রাখেন শুভেন্দুর ভাই তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু অধিকারী ৷ 2019 সালেও এই আসন ধরে রাখেন অধিকারী পরিবারের দিব্যেন্দু ৷
এদিকে একুশের নির্বাচনের আগে তৃণমূল সংসারে বড়সড় ভাঙন ধরে ৷ 2020 সালের ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ দল বদলের প্রভাব পড়ে অধিকারী পরিবারেও ৷ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি 77টি বিধানসভায় জয়ী হয় ৷ নতুন দল থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু ৷
আরও পড়ুন: মেদিনীপুরে কুর্সি দখলের লড়াই, দৌড়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিধায়ক
গত বিধানসভা ভোটে গেরুয়া রং লাগে শুভেন্দু গড়ে পূর্ব মেদিনীপুরেও ৷ তমলুক কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে ময়না, হলদিয়া এবং নন্দীগ্রামের দখল নেয় বিজেপি ৷ বাকি চারটি- তমলুক, পাঁশকুড়া পূর্ব, নন্দকুমার, মহিষাদলে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থীরা ৷ সব বিধানসভাগুলির মোট ভোট মিলিয়ে তৃণমূল মাত্র 21টি ভোটে বিজেপির থেকে এগিয়ে ছিল ৷
2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক লোকসভায় 42.75 শতাংশ ভোট পান তৃণমূলের দিব্যেন্দু অধিকারী ৷ 1 লক্ষ 90 হাজার 465 ভোটে বিজেপির সিদ্ধার্থশঙ্কর নস্করকে পরাজিত করেছিলেন তিনি ৷ এবার এই কেন্দ্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্যরকম ৷ এই আসন থেকে এবার অধিকারী পরিবারের কেউ প্রার্থী হননি ৷ প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ শোনা যায়, নিজের ভাইয়ের বদলে কলকাতা হাইকোর্টের এই প্রাক্তন বিচারপতিকে এই কেন্দ্র থেকে দাঁড় করাতে লড়েছেন খোদ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ নিজের পছন্দের বিজেপি প্রার্থীর জন্য একাধিক রোড শো, প্রচার, জনসভা করেছেনও নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক ৷
আরও পড়ুন: কাঁথির কুর্সি দখলে 'অস্তিত্বরক্ষার' দ্বিমুখী লড়াই