বংশীহারি, 4 অক্টোবর: একসময় চক-ডাস্টারই নিত্যসঙ্গী ছিল সুকান্ত মজুমদারের ৷ বটানির বিভিন্ন চ্যাপ্টার পড়ুয়াদের শেখানোই ছিল তাঁর কাজ ৷ সেসব এখন অতীত ৷ মাস্টারমশাই থেকে তিনি এখন রাজনৈতিক নেতা, সাংসদ, সর্বোপরী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ৷
কিন্তু সামনে যদি একদল ছাত্রছাত্রী বসে থাকে, আর সঙ্গে থাকে ব্ল্যাক-বোর্ড আর চক-ডাস্টার, তাহলে পড়ানোর ইচ্ছা আরেকবার মনের মধ্যে তৈরি হবে না ! হয়েছেও তাই৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি স্কুলে আবার শিক্ষকের ভূমিকায় দেখা গেল কেন্দ্রীয় শিক্ষা রাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৷ নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের সালোকসংশ্লেষের ক্লাসও করালেন তিনি ৷
যা নিয়ে পরে বালুরঘাটের সাংসদ বললেন, ‘‘আমি আগে একজন শিক্ষক, তারপর আমি রাজনীতিবিদ ৷ তাই ব্ল্যাক বোর্ড ও চক দেখলেই হাতে নিয়ে পড়াতে ইচ্ছে করে ৷ আর যে শিক্ষকের ব্ল্যাক বোর্ড ও চক দেখলে সেই ইচ্ছে না-হয়, তাহলে সেই শিক্ষকের ডিএনএ নিয়ে সন্দেহ আছে !"
বৃহস্পতিবার বিকেলে সুকান্ত গিয়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারির কুয়ারসই গ্রামের একলব্য মডেল স্কুলে ৷ স্কুল কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে তাঁর সংসদীয় এলাকার মধ্যে থাকা ওই স্কুলের পঠনপাঠন, পরিকাঠামো-সহ নানা সুযোগ সুবিধাগুলি খতিয়ে দেখতেই তিনি সেখানে যান ৷
ওই স্কুলের প্রতিটি ক্লাসরুমে রয়েছে ডিজিটাল বোর্ড ও অন্যান্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা ৷ স্কুলে ঢুকে পরিকাঠামো-সহ অন্যান্য বিষয়গুলি খতিয়ে দেখেন তিনি৷ তার পর তেমনই হঠাৎই স্কুলের নবম শ্রেণির ক্লাসরুমে ঢুকে যান তিনি ৷ সেই সময় জীবন বিজ্ঞানের ক্লাস চলছিল ৷
শিক্ষকের অনুমতি নিয়েই ক্লাসের প্রথম বেঞ্চে এক পড়ুয়ার পাশে বসেন ৷ সেখানে বেশ কিছুক্ষণ ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি ৷ এরপরেই শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে পড়ুয়াদের ক্লাস করানো শুরু করেন মন্ত্রী ৷ হাজার হোক তিনি যে বটানির অধ্যাপক ৷ প্রথমেই মনোস্যাকারাইড চ্যাপ্টার থেকে পড়ুয়াদের প্রশ্ন করেন তিনি ৷ কিন্তু, কেউই জবাব দিতে পারেননি ৷ এরপর পড়ুয়াদের পছন্দের চ্যাপ্টার কী, তা জানতে চান সুকান্ত ৷ সেই মতো সালোকসংশ্লেষ বা ফটোসিন্থেসিস নিয়ে পড়ানো শুরু করেন ৷
ক্লাসের ডিজিটাল স্ক্রিনে ডিএনএ ও আরএনএ-র ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝান সুকান্ত মজুমদার ৷ পাশাপাশি, কীভাবে সহজে সেগুলি মনে রাখবে পড়ুয়ারা, তাও বুঝিয়ে দেন তিনি ৷ মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শও দেন তিনি ৷
ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে তিনি স্কুলের হস্টেল, কিচেন শেড ও ডাইনিংয়ে প্রবেশ করেন ৷ কতজন ছাত্রছাত্রী, কীভাবে খাওয়া-দাওয়া করে, সেই সব নিয়ে জানতে চান ৷ শেষে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ঘরেও যান সুকান্ত মজুমদার ৷ বিদ্যালয়ের কী কী সমস্যা আছে, সেগুলি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান ৷ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা জানান ৷ সমস্যাগুলি তাদের লিখিতভাবে জানাতে বলেছেন সুকান্ত ৷ সেই মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি ৷
শিক্ষামন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, "একলব্য মডেল স্কুল পরিদর্শন করলাম ৷ আমাকে আগেই স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে আসার জন্য জানিয়েছিল ৷ আজকে এলাম ৷ স্কুলের পরিকাঠামো ও অন্যান্য সব ব্যবস্থাপনা ঘুরে দেখলাম ৷’’