ETV Bharat / state

জীবনের শুরুতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও অদম্য ইচ্ছায় আজ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষক সন্তু ঘোষ - Teachers Day 2024

Teachers Day 2024: পড়াশোনার মাঝপথে হারিয়েছিল দৃষ্টিশক্তি । শত অবসাদের মধ্যেও কঠিন লড়াই করে আজ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষক । শিক্ষক দিবসে সেরকমই এক সমাজ গড়ার কারিগরের লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছে ইটিভি ভারত । তিনি ইতিহাসের শিক্ষক বৈদ্যবাটির সন্তু ঘোষ ।

Teachers Day 2024
ইতিহাসের শিক্ষক বৈদ্যবাটির সন্তু ঘোষ (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 5, 2024, 7:09 PM IST

শ্রীরামপুর, 5 সেপ্টেম্বর: নিজের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও শত শত পড়ুয়ার জীবনে শিক্ষার আলো জ্বেলে চলেছেন ৷ শিক্ষক দিবসে সেরকমই এক সমাজ গড়ার কারিগরের লড়াইয়ের গল্প শুনল ইটিভি ভারত । তিনি বৈদ্যবাটির কাজী পাড়ার বাসিন্দা সন্তু ঘোষ ৷

জীবনের শুরুতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও অদম্য ইচ্ছায় আজ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষক সন্তু ঘোষ (ইটিভি ভারত)

আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতো পড়াশোনা খেলাধুলো করেই দিন কাটছিল তার ৷ কিন্তু 17 বছর বয়সে হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার ৷ উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার মাঝপথে সে হারিয়ে ফেলে দু’চোখের 100 শতাংশ দৃষ্টিশক্তি । তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে ছেলেটি । দিশাহীন হয়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় সে ৷ সেই সময় একজন দৃষ্টিহীন শিক্ষকই পথ দেখিয়েছিল তাকে ৷ তারপর আর পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখেনি ছেলেটি ৷ শত অবসাদের মধ্যেও চালিয়ে গিয়েছে পড়াশোনা ৷ কঠিন লড়াইয়ের ফলও মিলেছে হাতেনাতে ৷ আজ সন্তুবাবু প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসের শিক্ষক ।

Teachers Day 2024
শত শত পড়ুয়ার জীবনে শিক্ষার আলো জ্বালছেন সন্তু মাস্টার (নিজস্ব ছবি)

জানা গিয়েছে, কঠিন সময়ে হুগলির উত্তরপাড়ার লুইব্রেল মেমোরিয়াল স্কুলের শিক্ষক পথ দেখিয়েছিলেন সন্তু ঘোষকে । তাঁর কথায় বাণিজ্য বিভাগ ছেড়ে কলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি । তারপর থেকে পুরোপুরি পালটে যায় সন্তুর জীবন । মা ঝর্ণা ঘোষের প্রচেষ্টায় ফের পড়াশোনা শুরু করেন সন্তু । বাবা শ্রীমন্ত ঘোষ দিনমজুরির করতেন ৷ সেই টাকায় তিন ভাই বোনকে নিয়ে অভাব অনটনের সংসার ছিল । তার মধ্যেও বোনও তাঁর মতো দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন । সেই পরিস্থিতির মধ্যে কঠিন পরিশ্রম করে ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে লড়াই চালিয়ে যান সন্তু ঘোষ ।

শিক্ষক সন্তু ঘোষ বলেন, "দীর্ঘ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে লড়াই করে সফল হয়েছি । প্রথমে একটি স্কুল, পরে বীরভূমে আরেকটি স্কুলে চাকুরি করি । প্রতিদিন গণদেবতা এক্সপ্রেস করে যাতায়াত করতাম । আমার এই সময় মা আমরা পাশে ছিল সব সময় । সব কিছুর মধ্যেও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি ।"

Teachers Day 2024
নিজে 17 বছর বয়সে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন (নিজস্ব ছবি)

2006 সালে প্রথম উত্তর 24 পরগনায় দত্তপুকুর কাসেমপুর হাইস্কুল চাকরি পান সন্তু ঘোষ । এরপর নরেন্দ্রপুরে ইতিহাসে মাস্টার ডিগ্রি করেন তিনি ৷ 2009 সালে দ্বিতীয়বার বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে ফের চাকরিতে যোগ দেন তিনি । প্রতিদিন গণদেবতা এক্সপ্রেস করে বৈদ্যবাটি থেকেই বোলপুরে যাতায়াত করতেন 42 বছরের এই শিক্ষক । এরপর 2018 সালের 26 সেপ্টেম্বর থেকে বর্তমানে মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরিরত সন্তু । তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে খুশি স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকেরা ৷ শিক্ষকের জন্য গর্বিত ছাত্ররাও ৷

মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কিঙ্করকুমার ধারা বলেন, "ছাত্র জীবনে পৃথিবী কত রঙিন সন্তুবাবু দেখেছেন । কিন্ত তাঁর দৃষ্টি হারানো পর যেভাবে তিনি শিক্ষকতার মতো কাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এটা বড় ব্যাপার । আর একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর নিয়মানুবর্তিতা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমাদের স্কুলে । আমরা চাই উনি সম্মানের সঙ্গে এই কাজ করে যান সব সময় ।"

শ্রীরামপুর, 5 সেপ্টেম্বর: নিজের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও শত শত পড়ুয়ার জীবনে শিক্ষার আলো জ্বেলে চলেছেন ৷ শিক্ষক দিবসে সেরকমই এক সমাজ গড়ার কারিগরের লড়াইয়ের গল্প শুনল ইটিভি ভারত । তিনি বৈদ্যবাটির কাজী পাড়ার বাসিন্দা সন্তু ঘোষ ৷

জীবনের শুরুতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও অদম্য ইচ্ছায় আজ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষক সন্তু ঘোষ (ইটিভি ভারত)

আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতো পড়াশোনা খেলাধুলো করেই দিন কাটছিল তার ৷ কিন্তু 17 বছর বয়সে হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার ৷ উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার মাঝপথে সে হারিয়ে ফেলে দু’চোখের 100 শতাংশ দৃষ্টিশক্তি । তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে ছেলেটি । দিশাহীন হয়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় সে ৷ সেই সময় একজন দৃষ্টিহীন শিক্ষকই পথ দেখিয়েছিল তাকে ৷ তারপর আর পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখেনি ছেলেটি ৷ শত অবসাদের মধ্যেও চালিয়ে গিয়েছে পড়াশোনা ৷ কঠিন লড়াইয়ের ফলও মিলেছে হাতেনাতে ৷ আজ সন্তুবাবু প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসের শিক্ষক ।

Teachers Day 2024
শত শত পড়ুয়ার জীবনে শিক্ষার আলো জ্বালছেন সন্তু মাস্টার (নিজস্ব ছবি)

জানা গিয়েছে, কঠিন সময়ে হুগলির উত্তরপাড়ার লুইব্রেল মেমোরিয়াল স্কুলের শিক্ষক পথ দেখিয়েছিলেন সন্তু ঘোষকে । তাঁর কথায় বাণিজ্য বিভাগ ছেড়ে কলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি । তারপর থেকে পুরোপুরি পালটে যায় সন্তুর জীবন । মা ঝর্ণা ঘোষের প্রচেষ্টায় ফের পড়াশোনা শুরু করেন সন্তু । বাবা শ্রীমন্ত ঘোষ দিনমজুরির করতেন ৷ সেই টাকায় তিন ভাই বোনকে নিয়ে অভাব অনটনের সংসার ছিল । তার মধ্যেও বোনও তাঁর মতো দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন । সেই পরিস্থিতির মধ্যে কঠিন পরিশ্রম করে ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে লড়াই চালিয়ে যান সন্তু ঘোষ ।

শিক্ষক সন্তু ঘোষ বলেন, "দীর্ঘ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে লড়াই করে সফল হয়েছি । প্রথমে একটি স্কুল, পরে বীরভূমে আরেকটি স্কুলে চাকুরি করি । প্রতিদিন গণদেবতা এক্সপ্রেস করে যাতায়াত করতাম । আমার এই সময় মা আমরা পাশে ছিল সব সময় । সব কিছুর মধ্যেও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি ।"

Teachers Day 2024
নিজে 17 বছর বয়সে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন (নিজস্ব ছবি)

2006 সালে প্রথম উত্তর 24 পরগনায় দত্তপুকুর কাসেমপুর হাইস্কুল চাকরি পান সন্তু ঘোষ । এরপর নরেন্দ্রপুরে ইতিহাসে মাস্টার ডিগ্রি করেন তিনি ৷ 2009 সালে দ্বিতীয়বার বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে ফের চাকরিতে যোগ দেন তিনি । প্রতিদিন গণদেবতা এক্সপ্রেস করে বৈদ্যবাটি থেকেই বোলপুরে যাতায়াত করতেন 42 বছরের এই শিক্ষক । এরপর 2018 সালের 26 সেপ্টেম্বর থেকে বর্তমানে মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরিরত সন্তু । তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে খুশি স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকেরা ৷ শিক্ষকের জন্য গর্বিত ছাত্ররাও ৷

মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কিঙ্করকুমার ধারা বলেন, "ছাত্র জীবনে পৃথিবী কত রঙিন সন্তুবাবু দেখেছেন । কিন্ত তাঁর দৃষ্টি হারানো পর যেভাবে তিনি শিক্ষকতার মতো কাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এটা বড় ব্যাপার । আর একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর নিয়মানুবর্তিতা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমাদের স্কুলে । আমরা চাই উনি সম্মানের সঙ্গে এই কাজ করে যান সব সময় ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.