শ্রীরামপুর, 5 সেপ্টেম্বর: নিজের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও শত শত পড়ুয়ার জীবনে শিক্ষার আলো জ্বেলে চলেছেন ৷ শিক্ষক দিবসে সেরকমই এক সমাজ গড়ার কারিগরের লড়াইয়ের গল্প শুনল ইটিভি ভারত । তিনি বৈদ্যবাটির কাজী পাড়ার বাসিন্দা সন্তু ঘোষ ৷
আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতো পড়াশোনা খেলাধুলো করেই দিন কাটছিল তার ৷ কিন্তু 17 বছর বয়সে হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার ৷ উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার মাঝপথে সে হারিয়ে ফেলে দু’চোখের 100 শতাংশ দৃষ্টিশক্তি । তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে ছেলেটি । দিশাহীন হয়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় সে ৷ সেই সময় একজন দৃষ্টিহীন শিক্ষকই পথ দেখিয়েছিল তাকে ৷ তারপর আর পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখেনি ছেলেটি ৷ শত অবসাদের মধ্যেও চালিয়ে গিয়েছে পড়াশোনা ৷ কঠিন লড়াইয়ের ফলও মিলেছে হাতেনাতে ৷ আজ সন্তুবাবু প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসের শিক্ষক ।
জানা গিয়েছে, কঠিন সময়ে হুগলির উত্তরপাড়ার লুইব্রেল মেমোরিয়াল স্কুলের শিক্ষক পথ দেখিয়েছিলেন সন্তু ঘোষকে । তাঁর কথায় বাণিজ্য বিভাগ ছেড়ে কলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি । তারপর থেকে পুরোপুরি পালটে যায় সন্তুর জীবন । মা ঝর্ণা ঘোষের প্রচেষ্টায় ফের পড়াশোনা শুরু করেন সন্তু । বাবা শ্রীমন্ত ঘোষ দিনমজুরির করতেন ৷ সেই টাকায় তিন ভাই বোনকে নিয়ে অভাব অনটনের সংসার ছিল । তার মধ্যেও বোনও তাঁর মতো দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন । সেই পরিস্থিতির মধ্যে কঠিন পরিশ্রম করে ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে লড়াই চালিয়ে যান সন্তু ঘোষ ।
শিক্ষক সন্তু ঘোষ বলেন, "দীর্ঘ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে লড়াই করে সফল হয়েছি । প্রথমে একটি স্কুল, পরে বীরভূমে আরেকটি স্কুলে চাকুরি করি । প্রতিদিন গণদেবতা এক্সপ্রেস করে যাতায়াত করতাম । আমার এই সময় মা আমরা পাশে ছিল সব সময় । সব কিছুর মধ্যেও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি ।"
2006 সালে প্রথম উত্তর 24 পরগনায় দত্তপুকুর কাসেমপুর হাইস্কুল চাকরি পান সন্তু ঘোষ । এরপর নরেন্দ্রপুরে ইতিহাসে মাস্টার ডিগ্রি করেন তিনি ৷ 2009 সালে দ্বিতীয়বার বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে ফের চাকরিতে যোগ দেন তিনি । প্রতিদিন গণদেবতা এক্সপ্রেস করে বৈদ্যবাটি থেকেই বোলপুরে যাতায়াত করতেন 42 বছরের এই শিক্ষক । এরপর 2018 সালের 26 সেপ্টেম্বর থেকে বর্তমানে মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরিরত সন্তু । তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে খুশি স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকেরা ৷ শিক্ষকের জন্য গর্বিত ছাত্ররাও ৷
মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কিঙ্করকুমার ধারা বলেন, "ছাত্র জীবনে পৃথিবী কত রঙিন সন্তুবাবু দেখেছেন । কিন্ত তাঁর দৃষ্টি হারানো পর যেভাবে তিনি শিক্ষকতার মতো কাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এটা বড় ব্যাপার । আর একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর নিয়মানুবর্তিতা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমাদের স্কুলে । আমরা চাই উনি সম্মানের সঙ্গে এই কাজ করে যান সব সময় ।"