কলকাতা, 24 জানুয়ারি: ফের ছাত্র বিক্ষোভের মুখে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । বুধবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 167তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন তিনি ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢোকার সময় ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন আচার্য বোস । অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন বা এআইডিএসও'র তরফে রাজ্যপালকে ঘিরে 'গো ব্যাক' স্লোগান দেওয়া হয় বুধবার । পাশাপাশি এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদ কালো পতাকা দেখিয়ে সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় । অনুষ্ঠান শেষে রাজভবনে গিয়ে বিক্ষোভের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেন রাজ্যপাল ৷ তিনি বলেন, "কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জানত যে আমার রাজভবনে অনুষ্ঠান আছে ৷ তাই তারা আমাকে গো ব্যাক বলেছে ৷"
বিক্ষোভকারীরা এ দিন দাবি করেন, কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকার সামগ্রিকভাবে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে । রাজনীতিকরণের চেষ্টা করছে । আর এর জেরে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পড়ুয়ারা । তাই পড়ুয়াদের স্বার্থে স্লোগানের মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান এআইডিএসও'র কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক মিজানুর রহমান ।
এসইউসিআইয়ের ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজে স্নাতকের পরীক্ষার ব্যবস্থা কলেজের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে । এর জেরে দুর্নীতি বড় আকার নিতে পারে। তাছাড়া এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কৌশলে বেসরকারিকরণের চক্রান্তও আছে । দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি । এমতাবস্থায় ন্যায়পাল নিয়োগ করতে ইউজিসি'র 'কালা' সার্কুলারের বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের মামলার খরচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে তোলা হচ্ছে বলে দাবি এআইডিএসও'র। এই প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি করেছে সংগঠনটির কলকাতা জেলা কমিটি।
মিজানুর বলেন,"কেন্দ্রীয় সরকার, ইউজিসি, রাজ্যপাল,রাজ্য সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেভাবে জাতীয় এবং রাজ্য শিক্ষানীতির মধ্যে দিয়ে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে সবদিক থেকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করে শিক্ষায় বেসরকারীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং দুর্নীতির রাস্তা খুলে দিচ্ছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি এবং ধিক্কার জানাচ্ছি । সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলিকে রক্ষা করতে আমরা যে আন্দোলন প্রথম দিন থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তুলছি, সেই আন্দোলনকে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করব । কোনও অজুহাতেই সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস হতে আমরা দেব না ।"
পাশাপাশি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, রাজ্যপাল আচার্য বলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের লোককে অস্থায়ীভাবে উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করছেন । এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর অবস্থা খুবই খারাপ । ক্যান্টিন থেকে শুরু করে শৌচালয়গুলির বেহাল অবস্থার পড়ে রয়েছে ৷ কিন্তু বরাদ্দ অর্থ না দিয়ে কোর্টে চলে গিয়েছেন রাজ্যপাল বলেও অভিযোগ করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ । তাই আজকে তারা রাজ্যপালকে দেখে 'গো ব্যাক' স্লোগান দেয় ।
এ দিন পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 167তম অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় । এরপরে সেনেটারী হলে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আচার্য বলেন, "যতদিন দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ তৈরি না করা হয় আমি লড়াই চালিয়ে যাব । তার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।" এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর সময়ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যপাল । উল্লেখ্য, আজকের অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন । রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর আলাপ করিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য শান্তা দত্ত ।
আরও পড়ুন: