হুগলি, 8 অগস্ট: এগারো বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বে বাংলাকে শিল্পের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে ৷ আর সেই স্বপ্ন দেখানো মানুষটির জীবনাবসান হল বৃহস্পতিবার ৷ তিনি বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন ৷ সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর স্বপ্নের সিঙ্গুরে শিল্প আজও হয়নি। তিনি আহ্বান করেছিলেন কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্পই ভবিষ্যৎ।
বুদ্ধদেবের সিঙ্গুরনামা-
- মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে তাঁর হাত ধরেই টাটারা ন্যানো কারখানা তৈরি করেছিল। কিন্তু সিঙ্গুরে বিরোধীদের আন্দোলনের চাপে তাঁকেও পিছু হটতে হয়েছিল। রাজ্য থেকে টাটা কারখানা গুটিয়ে নিয়ে গুজরাতে চলে যায়। হাইকোর্টের নির্দেশে টাটা কারখানা ভেঙে কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেয় বর্তমান রাজ্য সরকার। এখনও কিছুটা অংশে অযোগ্য জমি পড়ে রয়েছে। তাঁর প্রত্যাশা ছিল, শিল্প আসুক রাজ্যে তাহলেই বাংলার চেহারা পরিবর্তন হবে। বেকার যুবকের কাজের সুযোগ বাড়বে। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গিয়েছে ৷
বুদ্ধদেবের শিল্পস্বপ্ন-
- 2000 সালে জ্যোতি বসুর অবসরের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্যের মানুষকে নতুন সম্ভবনা দেখিয়ে ছিলেন। শিল্পের জন্য শিল্পপতিদের সঙ্গে নিয়ে রাজ্যে অন্য ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। রাজ্যের শিল্প গড়ার জন্য বিরোধীদের আহ্বান জান। আন্দোলনকে থামাতে রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণ গান্ধির পৌরহিত্যে বিরোধীদের নিয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু শিল্প করার স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে। 2011 সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলেই 34 বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন হয়। এরপর থেকেই রাজনৈতিক জীবন থেকেই তিনি সরে আসতে শুরু করেন। তবু রাজনৈতিক মিটিং মিছিলে গিয়ে রাজ্যের শিল্পের কথা বলেছেন। আগামিদিনেও তাঁর কথা মনে রাখবে মানুষ।
- সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অন্যতম মুখ ছিলেন রাজ্যের বর্তমান কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। তবে, আজ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকাহত। তিনি বলেন, "ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ব্যক্তিত্বকে নিশ্চিত শ্রদ্ধা জানাব। তাঁর দল, নীতি সিঙ্গুরের মানুষ মেনে নিতে পারেননি। ওনার বিরুদ্ধে সিঙ্গুরের মানুষ গর্জে উঠেছিলেন। তবে এটা ঠিক। তিনি ব্যক্তি হিসাবে ভালো। তাঁর রাজপাঠ চালানোর পদ্ধতির জন্য আমরা শ্রদ্ধা জানাব।"
- কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ ৷ আজকের দিনে যা পরিস্থিতি দেখছি, সে জায়গায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অনাড়ম্বর জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাঁকে নিয়ে কোনওদিন দুর্নীতির মন্তব্য করতে পারেনি। সকলকেই তিনি সম্মান দিয়েই কথা বলতেন।"
- বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, "ব্যক্তিগতভাবে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে আমার খুব একটা পরিচয় হয়নি। তিনি আমার প্রিয়, শ্রদ্ধেয়। কিন্তু জমি আন্দোলনের ক্ষেত্রে আমি তাঁর নীতি ও দলের বিরোধিতা করেছিলাম। বর্তমানে অনেক জমি চাষযোগ্য হয়নি, সিঙ্গুরে শিল্প হয়নি। দুর্ভাগ্যক্রমে কৃষকরাও জমি ফেরত পেলেও, চাষযোগ্য করে পাইনি।"