শিলিগুড়ি, 1 অক্টোবর: 20 শতাংশ বোনাসের দাবি করেছিলেন পাহাড়ের চা-শ্রমিকরা ৷ সেই দাবি মানল না রাজ্য সরকার ৷ তার পরিবর্তে চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য 16 শতাংশ বোনাস ঘোষণা করল রাজ্যের শ্রম দফতর ও টি অ্যাডভাইজারি বোর্ড ।
শ্রম দফতরের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, চা বাগানে 2023-24 আর্থিক বছরে ক্ষতির কারণে 20 শতাংশ বোনাস দিতে পারবে না মালিকপক্ষ । 16 শতাংশ বোনাস 4 অক্টোবরের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়া হবে । তারপরেও যদি কোনও ট্রেড ইউনিয়নের আপত্তি থাকে তবে পুজোর পরে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে ।
শ্রম দফতর ও টি অ্যাডভাইজারি বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ চা বাগানের ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ । পালটা শ্রমিক ভবনের সামনে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেন চা বাগানের শ্রমিকরা । এর প্রতিবাদে বুধবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা করেন তাঁরা । পাশাপাশি দার্জিলিংয়ে বোনাসের দাবিতে মহামিছিল করবে চা বাগানের ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চ ।
বিগত চারবার পাহাড়ের চা বাগানের শ্রমিকদের বোনাস নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজিত হয় শিলিগুড়ি সংলগ্ন দাগাপুরের শ্রমিক ভবনে । 20 শতাংশ বোনাসের সিদ্ধান্তে ট্রেড ইউনিয়নগুলো অনড় থাকায় প্রতিবারই বৈঠক ভেস্তে যায় । মঙ্গলবার বোনাস নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠকে বসে শ্রম দফতর, টি এডভাইজারি কমিটি ও ট্রেড ইউনিয়ন । এরপর সেই বৈঠকও ভেস্তে যায় ৷
ট্রেড ইউনিয়নের অভিযোগ, বৈঠক ভেস্তে যেতেই জোর করে মালিকপক্ষের হয়ে 16 শতাংশ বোনাস ঘোষণা করে শ্রম দফতর । আর শ্রম দফতর এই বোনাসের কথা ঘোষণা করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন চা বাগানের শ্রমিকরা । শ্রমিক ভবনে শুরু হয় বিক্ষোভ । আইনশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে এ দিন শ্রমিক ভবনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশবাহিনী । চা শ্রমিকদের দাবি, 20 শতাংশের নীচে কোনও ভাবেই বোনাস মানা যাবে না ।
দার্জিলিং জেলা সিপিএমের সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, "আমরা আসার আগেই অনৈতিকভাবে বৈঠক শুরু করা হয়েছিল । আর 16 শতাংশ বোনাস ঘোষণা করা হয় । আমরা এই বোনাস মানব না । কাল থেকে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব ।" ট্রেড ইউনিয়ন নেতা জেবি তামাংয়ের কথায়, "শ্রমিক ভবন সরিয়ে মালিক ভবন লিখে দেওয়া উচিত । এবার 20 শতাংশ বোনাসের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন হবে । কর্মবিরতি ও মহামিছিল করব আমরা ৷"
20 শতাংশ বোনাসের দাবিতে সোমবার 12 ঘণ্টার বনধ পালন হয় পাহাড়ে । অনিত থাপার বিজিপিএম, ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ, অজয় এডওয়ার্ডয়ের হামরো পার্টি ও বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা-সহ সকলে এই বনধকে সমর্থন করেছিল ৷ এই বিষয়ে পাহাড়ের শাসকদল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মুখপাত্র এসপি শর্মা বলেন, "20 শতাংশের নীচে আমরা কোনও ভাবেই বোনাস মানব না । এতে পাহাড়ে অস্থিরতার সৃষ্টি হতে পারে ।"
হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড বলেন, "শ্রম দফতরকে শ্রমিকদের দাবি মানতেই হবে । 20 শতাংশের নীচে কোনও ভাবেই বোনাস মানছি না । জোর করে 16 শতাংশ বোনাস চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে । শ্রম দফতরের এই সিদ্ধান্তে ফের পাহাড় অশান্ত হতে পারে । অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে ।"