কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার জন্য আবেদন জানালেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ । পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট ডাক্তারদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে রাজ্যকে যে নির্দেশ দিয়েছে, সেবিষয়ে মুখ্যসচিব জানান, ইতিমধ্যেই 100 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার ৷
সোমবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ৷ সেখানেই সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার স্বার্থে চিকিৎসকদের কাজে ফেরার জন্য তিনি আবেদন জানান । মুখ্যসচিব বলেন, "দেশের শীর্ষ আদালত জুনিয়র ডাক্তারদের আগামিকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে কর্মবিরতি থেকে কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে । বহু গরিব সাধারণ মানুষ হাসপাতালে এসে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । এই অবস্থায় আমরাও আবেদন করছি, আপনারা দ্রুত কাজে ফিরুন ।"
ডাক্তারদের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকার সুনিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান মুখ্যসচিব ৷ তিনি বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথা বলেছে । আমরা সে কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যভবনের মাধ্যমে 100 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি । সিসিটিভি, আলো, রেস্টরুম, ওয়াশরুম ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের পরিষেবার জন্য এই টাকা খরচ করা হবে । সাত দিনের মধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দেব ।"
মুখ্যসচিব এদিন প্রতিশ্রুতি দেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা করা হবে ৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই সবরকম ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি ৷ তাঁর কথায়, "হাসপাতালগুলির নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রয়েছে । সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হবে ।"
আন্দোলনকারীদের প্রতি সরকারের সহানুভূতি রয়েছে বলে জানিয়ে মুখ্যসচিব বলেন, "জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি আমাদের সব ধরনের সহানুভূতি রয়েছে । আমরা চাইছি সাধারণ মানুষের পরিষেবার স্বার্থে তাঁরা কাজে যোগ দিন ।"
শীর্ষ আদালত আগামিকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজে ফেরার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ৷ এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের তরফ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল মুখ্যসচিবকে, যদি জুনিয়র ডাক্তররা ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজে যোগ না-দেন, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে চলেছে । যদিও মুখ্যসচিব সরাসরি শাস্তিমূলক কোনও পদক্ষেপের কথা এখনই বলতে চাইছেন না । বরং তিনি অনুরোধ করছেন যে, চিকিৎসকরা কাজে ফিরুন । মুখ্যসচিব বলেন, "আমরা শাস্তির বিষয়ে কিছু বলতে চাই না ৷ আমরা মনে করি, জুনিয়র ডাক্তাররাও আমাদেরই অংশ ৷ তাঁরা মানুষের সেবা করার জন্যই ডাক্তার হয়েছেন । কাজেই সেই দায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই তাঁরা কাজে ফিরবেন ।"
একইসঙ্গে, এদিন রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে ডিজি রাজীব কুমার বলেন, "পুলিশ ও প্রশাসন দায়বদ্ধ আপনাদের একটা সুরক্ষিত পরিমণ্ডল দিতে । এক্ষেত্রে আমরা একটা বিষয় নিশ্চিত করছি, আগামী দিনে প্রত্যেকটি হাসপাতালে সুরক্ষার বিষয়টিকে আরও শক্তিশালী করা হবে । হস্টেল থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্র সব ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে । আমরা হাসপাতালের পরিমণ্ডলকে সুরক্ষিত করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছি । আগামী দিনেও আরও কিছু পদক্ষেপ করা হবে । আমরা সিকিউরিটি এজেন্সি থেকে শুরু করে সিসিটিভি, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, নিরাপত্তা কর্মীদের ট্রেনিং-সহ একাধিক বিষয়ে কাজ করছি । কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে এটা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে, আগামী দিনে আপনাদের কাজের পরিমণ্ডল সুরক্ষিত করা হবে ।"
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসচিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম ৷ ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল ও এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার ।