জলপাইগুড়ি, 2 এপ্রিল: কয়েক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে জলপাইগুড়িতে সর্বহারা কয়েকশো দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষ ৷ এই সর্বহারাদের মধ্যে একজন হলেন বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের পুঁটুমারি এলাকার পঞ্চান্ন বছর বয়সি স্বরবালা রায় ৷ তাঁর বাড়িতে রয়েছেন অসুস্থ স্বামী, মানসিক ভারসাম্যহীন এক ছেলে এবং নাবালক নাতি ৷ স্বরবালার আয়েই কোনওরকমে চলে সংসার ৷ দিনমজুরি করে 40 হাজার টাকা জমিয়েছিলেন তিনি । কিন্তু রবিবার রাতের কয়েক মিনিটের বিধ্বংসী ঝড়ে উড়ে গিয়েছে বাড়ি-সহ গচ্ছিত টাকার ব্যাগ। পড়ে রয়েছে কেবল একটি টিনের ট্রাঙ্ক ৷ সেটিকে আঁকড়ে ধরেই এখন বাঁচার চেষ্টা করছেন স্বরবালা।
তাঁর কথায়, "চার সদস্যের পরিবারের ভার আমার উপরে। লোকের বাড়িতে কাজ করে যেটুকু আয় হয় তার একটা অংশ গত দুই বছর থেকে জমিয়ে রেখেছিলাম নাতির পড়াশোনার খরচ চালাব বলে। ওই টাকার পরিমাণ ছিল 40 হাজার। কিন্তু রবিবারের ঝড়ে ওই টাকা-সহ সরকারি কিছু কাগজ পত্র কোথায় উড়ে গিয়েছে খুঁজে পাচ্ছি না । ট্রাঙ্ক হাতরে সেগুলি খোঁজার চেষ্টা করছি ৷"
ঝড়ে বিধস্ত ময়নাগুড়ি-সহ জলাপাইগুড়ির একাধিক এলাকা ৷ ভেঙে পড়েছে একের পর এক বাড়ি ৷ গৃহহীন হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ ৷ প্রশাসনের তরফে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে ৷ সেটাই এখন মাথা গোজার ঠাঁই স্বরবালার মতো সর্বহারা মানুষগুলির ৷ আগামিদিনগুলি কী করে চলবে ৷ স্বামী এবং ছেলের চিকিৎসার খরচ, মা হারা নাতির পড়াশোনা কীভাবে চালাবেন, বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন স্বরবালা রায় । সরকারের মুখাপেক্ষী তিনি ৷ যদি কিছু সাহায্য পাওয়া যায় তারই আশায় কোনওরকমে দিন গুজরান করছেন তাঁরা ৷
ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুণ্ডু অবশ্য বলেছেন, "600-700 বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। আমরা ঝড়ে বিধস্তদের 1300 ত্রিপল বিলি করেছি । মোট কত ক্ষতি হয়েছে তা জানার চেষ্টা করছি ৷ দল কাজ করছে । একসঙ্গে প্রায় 10 কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ক্ষতি হয়েছে । প্রশাসনের তরফে সবরকম সাহায্য করা হবে ক্ষতিগ্রস্তদের ৷"
একদিকে অসুস্থ স্বামী বাড়ির ভাঙা অংশের মধ্যেই গাছের কোনায় বসে রয়েছেন। স্বরবালার ভিটের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ভাঙা ঘরের কাঠ, টিনের মধ্যেই টাকা পয়সার ব্যাগটি খুঁজে চলেছেন। আগামী নিয়ে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ পরিবারটির চোখে মুখে ৷
আরও পড়ুন: