নন্দকুমার, 20 জুলাই: গ্রাম কমিটির মাতব্বরদের তালিবানি ফতোয়ার জেরে 19 টি পরিবার একঘরে! কার্যত পুলিশ-আইন-আদালত কোনও কিছুর ভ্রূক্ষেপ করা হয়নি বলা চলে । ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানা এলাকার ৷ ওই পরিবারগুলি গ্রাম কমিটির মাতব্বরদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে । এদিকে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গ্রাম কমিটির বর্তমান সভাপতি রঞ্জিত হাজরা ৷ তাঁর দাবি, এই নিয়ম আগে থেকে চলে আসছে ৷
কী নির্দেশ দিয়েছেন গ্রাম কমিটির মাতব্বররা ?
মাতব্বরদের নির্দেশ, জমিজমা সংক্রান্ত কোনও ঝামেলা হলে বা ভেড়িতে মাছ চাষ করতে গেলে, গ্রাম কমিটিকে তোলা হিসেবে মোটা টাকা দিতে হবে ৷ গ্রাম কমিটির নির্দেশ না মানলে বিচারে শাস্তি একটাই, তাও মোটা টাকার জরিমানা ৷ আর ধার্য করা টাকা না দিতে পারলে, গ্রাম কমিটির বিচারে সেই পরিবারকে একঘরে করে রাখার অলিখিত ফতোয়া জারি হয় ৷ এমন নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানার সোন্দলপুর গ্রামে একঘরে 19টি পরিবার ৷ ওই পরিবারগুলি গ্রামের কোনও অনুষ্ঠান কিংবা পুজোপার্বণে যোগ দিতে পারবে না ৷
এক গ্রামবাসী গৌরহরি দাস বলেন, "ব্যাঙ্ক থেকে 22 লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে মোট 14 বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছিলাম ৷ গ্রামের মাতব্বররা নির্দেশ দিয়েছিল, বিঘা পিছু বছরে 3 হাজার টাকা দিতে হবে ৷ অর্থাৎ 14 বিঘা জমির জন্য বছরে 42 হাজার টাকা দিতে হবে ৷"
সেইমতো গৌরহরি গ্রাম কমিটিকে 42 হাজার টাকা করে দিতেন ৷ তারপর এক বছর চাষে ক্ষতি হওয়ায় তিনি টাকা দিতে পারেননি ৷ এই অবস্থায় গ্রাম কমিটি চাষ বন্ধ করার নির্দেশ দেয় ৷ চাষবাস বন্ধের ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয় গৌরহরি দাসকে ৷ এখন ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করতে না পারায় ব্যাঙ্ক থেকে ইতিমধ্যে নোটিশ এসেছে ৷ এমতাবস্থায় গৌরহরি কী করবেন, তা খুঁজে পাচ্ছেন না ৷
আরেক গ্রামবাসী সুদর্শন দাসের অভিযোগ, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে ঝামেলা বেধেছিল ৷ এই অবস্থায় বিবাদ মেটাতে প্রথমে গ্রাম কমিটির শরণাপন্ন হয়েছিলেন সুদর্শন ৷ গ্রাম কমিটি সমস্যার সমাধান করতে না পারায় আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি ৷ কিন্তু সুদর্শন দাস কেন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ! এই অভিযোগ তুলে সুদর্শন দাসকও গ্রাম কমিটি একঘরে করে রেখেছে বলে অভিযোগ ৷ শুধু যে একঘরে করে রেখেছে তাই নয়, গ্রাম কমিটির মাতব্বররা সুদর্শন দাসের বিদ্যুতের ও জলের সংযোগও বন্ধ করে দেয় ৷
গ্রাম কমিটির অত্যাচার এতটাই চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শেষে 19টি পরিবার একত্রে বিডিও, বিধায়ক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ৷ তাতে কোনও সুরাহা হয়নি ৷ তাই এবার বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে এই নির্যাতিত পরিবারগুলি ৷
যদিও এই বিষয়ে গ্রাম কমিটির বর্তমান সভাপতি রঞ্জিত হাজরা জানান, তিনি এই নিয়ম চালু করেননি ৷ তাঁর পূর্বতন গ্রাম কমিটির সভাপতি সম্পাদক এইসব নিয়ম চালু করেছিলেন ৷ তাঁদের নিয়ম অনুযায়ী এখনও এসব চলে আসছে ৷ কিন্তু জরিমানার কথা সঠিক নয় ৷ তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷